প্রাচীনতম গহনার টুকরো পাওয়া গেল! কোথায় জানেন?

Odd বাংলা ডেস্ক: ২০১৪ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে, মরক্কোর আটলান্টিক উপকূলীয় শহর এসাউইরা থেকে প্রায় ১০ মাইল দূরে বিজমৌন গুহা হতে ৩৩টি শেল পুঁতির জপমালা সেট আবিষ্কৃত হয়। আটলান্টিক ও ভূমধ্যসাগর বেষ্টিত উত্তর আফ্রিকান দেশ মরক্কোয় মিলেছে প্রায় দেড় লক্ষ বছরের পুরনো, বিশ্বের প্রাচীনতম গহনার টুকরো। প্রত্নতাত্ত্বিকরা বলছেন, এই জপমালার (পুঁতির মালা) টুকরোগুলো হয়তো কানের দুল বা গলার হার হিসেবে ব্যবহার করা হত।

'সায়েন্স অ্যাডভান্সেস' জার্নালে প্রকাশিত তথ্য মতে, ১ লাখ ৪২ হাজার থেকে দেড় লাখ বছর পুরনো এই জপমালাগুলো খুঁজে পেয়েছেন অ্যারিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি দল। সেই দলে বিশ্ববিদ্যালয়টির  নৃতত্ত্ববিদরাও অন্তর্ভুক্ত।

প্রধান লেখক স্টিভেন এল কুহন বলেন, এটি মানব যোগাযোগের অমৌখিক মাধ্যম বা ধরনের সবচেয়ে প্রাচীনতম প্রমাণ এবং এটি আমাদের জ্ঞান বিকাশ ও দক্ষতার উৎপত্তির সময়কালকে ইঙ্গিত করছে। এ থেকে বোঝা যায়, গহনা এবং অন্যান্য সাজসজ্জার মাধ্যমে নিজের সম্পর্কে কিছু বলার বা নিজেকে প্রকাশের মানুষের এই আচরণ, পূর্বে যা ভাবা হয়েছিল তার চেয়েও অনেক বেশি পুরনো।

কুহন এবং তার সহকর্মীরা বলছেন, জপমালাগুলো মানবসভ্যতার অমৌখিক যোগাযোগ মাধ্যমের একটি বিস্তৃত রূপের প্রাচীনতম প্রমাণ। তিনি আরো বলেন, পোশাকের মাধ্যমে হয়ত তারা নিজেদের পরিচয় প্রকাশ করতো। এর মাধ্যমে বোঝা যায়, এই রীতি হাজার হাজার বছর আগেও প্রচলিত ছিল, এবং মানুষ তাদের নিকটবর্তী বন্ধু এবং পরিবারের চেয়ে বড় গোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে ও চলা ফেরায় বেশি আগ্রহী ছিল।

কুহনের মতে, মানুষ আজও এই রীতি ধরে রেখেছে। এবং এটি শুধু গয়নাতেই অন্তর্ভুক্ত নয়, বরং এটি গাড়ির হর্ন বাজানোর মতো সহজ কিছুও হতে পারে। সমাজব্যবস্থা কীভাবে কাজ করে তা নিয়ে যদি আপনি ভাবেন, তাহলে ব্যাপারগুলো অনুধাবন করা সহজ হবে।  ধরুন, কেউ গাড়ির হর্ন বাজিয়ে এবং লাইট জ্বালিয়ে আপনার পথ আটকালো। তখন আপনি ভাববেন, তার সমস্যা কী? কিন্তু আপনি যদি দেখেন, তিনি একটি নীল রঙের ইউনিফর্ম পরে আছেন, আপনি বুঝতে পারবেন একজন পুলিশ অফিসার আপনার পথ আটকেছেন।

কুহন এবং তার সহযোগীরা যেই জপমালাটি আবিষ্কার করেছেন, যেটি সমুদ্রের শামুকের খোল থেকে তৈরি করা হয়েছিল এবং এর প্রতিটি পুঁতি প্রায় আধা  ইঞ্চি লম্বা। পুঁতিগুলোর মাঝখানে রয়েছে ছিদ্র এবং এদের গায়ে অন্যান্য যে চিহ্ন রয়েছে, তাতে বোঝা যায় এগুলো দড়ি বা সুতায় গেঁথে কানে, গলায় কিংবা পোশাকে ঝোলানো হতো।

উত্তর এবং দক্ষিণ আফ্রিকা জুড়ে এমন অনেকগুলো জপমালা এর আগেও পাওয়া গেছে। তবে, সেগুলো ১ লাখ ৩০ হাজার বছরের বেশি পুরনো নয়। প্রত্নতাত্ত্বিক এই নির্দশনগুলো নৃতাত্ত্বিকদের মানবজ্ঞান এবং যোগাযোগের বিবর্তন নিয়ে বিশ্লেষণের সম্ভাব্য সূত্র হিসেবে কাজ করে। মানুষ কখন থেকে ভাষার ব্যবহার শিখেছে, তা নিয়ে গবেষকদের আগ্রহ অনেক বেশি। কিন্তু মাত্র কয়েক হাজার বছর আগে, যখন মানুষ লিখতে শুরু করেছিল, এর আগ পর্যন্ত ভাষার ব্যবহারের সময়কালের কোনো বস্তুগত প্রমাণাদি পাওয়া যায় না।

কুহন বলেন, জপমালা মূলত মৌলিক যোগাযোগের একটি জীবাশ্ম রূপ, এবং এগুলোর অর্থ কী তা আমরা এখনো জানি না।  তবে, পুঁতিগুলো তাদের স্থায়ীত্বের জন্যও উল্লেখযোগ্য এবং এটি গবেষণার কাজে ব্যবহার করার মতো উপাদান।

অধিকাংশের মতো গেরুয়া বা কাঠকয়লা দিয়ে নিজেদের শরীর রঙ করার পরিবর্তে, পুঁতি কারিগররা একটি স্থায়ী পন্থা বেছে নিয়েছিলেন।এর মাধ্যমে তারা যে বার্তাটি পৌঁছে দিতে চেয়েছিলেন তা দীর্ঘস্থায়ী এবং খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

জপমালাগুলো উত্তরের চেয়ে প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে বেশি। কুহন জানিয়েছেন, অ্যাটেরিয়ান জনগোষ্ঠী ঠিক কী কারণে জপমালা তৈরির প্রয়োজন অনুভব করেছিল, তা তিনি এবং তার সহকর্মীরা এখন জানতে আগ্রহী। তারা বেশ কয়েকটি সম্ভাব্য ব্যাখ্যা দিয়েছেন। এর মাঝে একটি হলো, হয়তো ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপেই তারা পরিচয় প্রকাশের নতুন পদ্ধতি হিসেবে এই পুঁতির আশ্রয় নিয়েছিল। কারণ উত্তর আফ্রিকা অঞ্চলে মানুষ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে, হয়তো তাদের নিজেদের পরিচয় দেওয়ার উপায়গুলোও বাড়ানোর প্রয়োজন হয়েছিল। আবার এমনও হতে পারে, উত্তর আফ্রিকার লোকেরা এমন সময়ে যোগাযোগের পদ্ধতি ব্যবহার করতে শুরু করেছিল যখন জলবায়ু ছিল ঠান্ডা এবং শুষ্ক।

কুহন বলেন, হয়ত তারা তাদের সম্পদ রক্ষার জন্য গোষ্ঠী বা গোত্র গড়ে তুলেছিল। এরপর হয়তো তারা তাদের জাতিগত বা এলাকা ভিত্তিক পরিচয় বা অন্য যে কোনো পরিচয় প্রকাশের জন্য জপমালাগুলোর ব্যবহার করতো। তবে এটি জানা যায় যে, মানুষ তখন এগুলো তৈরি করতে সক্ষম ছিল। কিন্তু এর সঙ্গে আবার প্রশ্ন ওঠে, ঠিক কী কারণে তারা এগুলো তৈরি করতে উদ্ভূত হয়েছিল!

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.