আয়ুষ্কাল বাড়াতেই নিজের মাথা ছিড়ে ফেলে এই শামুক!
Odd বাংলা ডেস্ক: বিশ্বের বৃহত্তম সমুদ্র শামুক এলিসিয়া মার্জিনেটা নিয়েই গবেষণা চালাচ্ছিলেন তিনি ল্যাবরেটরিতে। সে সময়ই তার নজর কাড়ে অদ্ভুত এই চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। নারা মহিলা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক সায়াকা মিতোহ-র নজরে প্রথম পড়েছিল ঘটনাটি। রহস্যজনকভাবে নিজেই দেহ থেকে মাথা ছিন্ন করে ফেলে এই সামুদ্রিক প্রাণীটি।
সবচেয়ে বড় রহস্য হচ্ছে, হৃদপিণ্ড, কিডনি, পাচকতন্ত্র- গুরুত্বপূর্ণ এই অঙ্গগুলো ছাড়াই কীভাবে জীবিত থাকছে প্রাণীটি। আরও আশ্চর্যকর বিষয় হলো দেহ বিচ্ছিন্ন করার মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মাথার ক্ষতস্থান সারিয়ে ফেলে প্রাণীটি। তারপরই শুরু হয়ে যায় ছিন্নমস্তকের স্বাভাবিক জীবনযাপন, খাওয়া-দাওয়া। মাত্র ২০ দিনের মধ্যেই সম্পূর্ণ দেহ পুনরুদ্ধার করে ফেলে সামুদ্রিক প্রাণীটি।
দেহাংশ পুনর্জন্মের এই অদ্ভুত ক্ষমতা অটোটমি নামে পরিচিত বিজ্ঞানক্ষেত্রে। তবে এমন ঘটনা দেখা যায়নি এর আগে। গবেষক সায়াকা মিতোহ বলেন, গড়ে ১৫টির মধ্যে ৫টি নমুনার ক্ষেত্রেই এই ঘটনা লক্ষ করেছেন তিনি। জীবদ্দশায় কখনো একবার, আবার কখনো কখনো দু’বারও মাথা ছিন্ন করে এই শামুকটি।
তবে এখানেই শেষ নয়। রয়েছে আরও বড় চমক। ছিন্ন হওয়ার পর কয়েক মাস পর্যন্ত সক্রিয়ভাই সংবেদনশীল থাকে দেহাংশটি। পাশাপাশি দেহের বিয়োজন শুরু হলেও স্পন্দন জারি থাকে হৃদপিণ্ডে। হৃদপিণ্ড পচে যাওয়ার আগের মুহূর্ত পর্যন্ত প্রাণের অস্তিত্ব থাকে সেখানে।
মাথা থেকে শরীর বিচ্ছন্ন হওয়ার পরও কীভাবে বেঁচে থাকে এরা। আর কেনই বা মাথা আলাদা করে ফেলে শরীর থেকে। এর সঠিক উত্তরের হদিশ এখনো দিতে সক্ষম হয়নি গবেষকরা। তবে তারা এর পেছনে দুটি তত্ত্ব দাঁড় করেছেন। প্রথমটি হল, তাদের দেহে কোনো পরজীবী প্রাণীর অস্তিত্ব। দেহের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলো কাজ করা বন্ধ করে দেয়ার আগেই কিংবা পুরো দেহে সংক্রমণের আগেই মাথা থেকে দেহ ছিন্ন করে ফেলে এই প্রাণীটি।
দ্বিতীয় তত্ত্বটি সন্ধান দেয় ছিন্নমস্তক অবস্থায় বেঁচে থাকার কারণের। দেহজ শক্তি সরবরাহের জন্য শামুকটির দেহে স্বাভাবিক পরিপাচক তন্ত্রের বাইরেও রয়েছে বিকল্প ব্যবস্থা। তা হল মস্তকে উপস্থিত বিশেষ ধরণের ক্লেপ্টোপ্লাস্ট কোষ। যা সালোকসংশ্লেষের মাধ্যমেই খাবার তৈরি করতে সক্ষম। কাজেই সরাসরি সেই শক্তি সরবরাহিত হয় বাকি কোষে। দরকার পড়ে না পাচকতন্ত্রের। অনেকটা উদ্ভিদের মতো করেই কাজ চালিয়ে নেয় তারা। আবার বলা হচ্ছে এভাবে বেশি দিন বেঁচে থাকতে পারে। না হলে জীবনী শক্তি তাদের দ্রুতই কমে আসতে থাকে।
সব কিছুই অনুমান ভিত্তিক এখনো। সঠিক কারণ বের করতে কাজ করছেন বিজ্ঞানীরা। আবার তাদের দাঁড় করানো ব্যাখ্যারও বৈজ্ঞানিক প্রমাণ পাওয়া যায়নি কোনো। তাই চলছে বিস্তর গবেষণা। এই রহস্যের সমাধান হবে খুব দ্রুতই। তবে এই ভৌতিক কর্মকাণ্ডে রীতিমতো অবাক বিশ্বের তাবড় গবেষকরা, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
Post a Comment