Odd বাংলা ডেস্ক: সুস্বাস্থ্য বাজায় রাখার ক্ষেত্রে জীবনযাত্রার গুরুত্ব অপরিহার্য। পশ্চিমা বিশ্বসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষেরা অনিয়মিত জীবনযাপন এবং শরীরচর্চার অভাবে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। অন্যদিকে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষেরা। যারা আধুনিক বিশ্ব থেকে পিছিয়েও সুস্বাস্থ্যের দিক দিয়ে তারা এগিয়ে আছে অন্যদের তুলনায়।
তেমনই এক আদিবাসী সম্প্রদায়ের খোঁজ মিলেছে দক্ষিণ আমেরিকার বলিভিয়ার আমাজন বনাঞ্চলে। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় বিজ্ঞানী ও গবেষকরা ওই অঞ্চলের শিমেন আদিবাসীর লোকদের মধ্যে পশ্চিমাদের চেয়েও স্বাস্থ্যকর হৃৎপিণ্ড ও মস্তিষ্কের খোঁজ পেয়েছেন।
শিমেন আদিবাসীরা জনসংখ্যায় প্রায় ১৬ হাজার এবং তারা বেশ সুস্বাস্থ্যের অধিকারী। ২০১৭ সালের এক গবেষণায় দেখা যায়, তাদের হৃৎপিণ্ডই পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর ও শক্তিশালী। তবে এ বছর করা একটি গবেষণায় নিশ্চিত হওয়া গেছে, তারা শুধু হৃৎপিণ্ডের সুস্থতার দিক দিয়েই এগিয়ে নেই; তাদের মস্তিষ্কও আশ্চর্যজনকভাবে নীরোগ!
২০২১ সালের এই গবেষণায় ৭৪৬ জন প্রাপ্তবয়স্ক শিমেন পুরুষ এবং নারীদের (যাদের বয়স ৪০-৯০ বছর পর্যন্ত) পরীক্ষা করা হয়। তারা দুই দিন অনেক পথ পাড়ি দিয়ে তাদের বিচ্ছিন্ন এবং প্রত্যন্ত গ্রামগুলো থেকে বলিভিয়ার ত্রিনিদাদ শহরে আসেন। সেখানে তাদের মস্তিষ্কের সিটি স্ক্যান করা হয়।
গবেষকেদের হাতে যখন শিমেন আদিবাসীদের সিটিস্ক্যানের রিপোর্ট চলে আসে তখন তারা সেগুলোকে জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্র এবং নেদারল্যান্ডের প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষদের সিটিস্ক্যান রিপোর্টের সঙ্গে তুলনা করে। তাদের এই গবেষণার ফল ২০১৭ সালে করা গবেষণাকেই অনুসরণ করে-শিমেন আদিবাসীদের মস্তিষ্ক পশ্চিমাদের চেয়ে অধিকমাত্রায় স্বাস্থ্যকর ও নীরোগ।
গবেষকেরা যখন নমুনার দুই অংশের মস্তিষ্কের আয়তনের তথ্য-উপাত্ত ঘাটাঘাটি করছিলেন; তখন দেখতে পান মধ্যবয়সী ও বয়স্কদের মস্তিষ্কের আয়তনের পার্থক্য পশ্চিমাদের তুলনায় শিমেন গোষ্ঠীতে ৭০ শতাংশ ক্ষুদ্রতর।
ক্যালিফোর্নিয়ার ইউএসসি লিওনার্দ ডেভিস স্কুল অব গেরন্টোলজি(বার্ধক্যবিদ্যা) ও নিউরোসাইন্সের একজন অধ্যাপক আন্দ্রে ইরিমিয়া। যিনি এই গবেষণার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি বলেন, তথাকথিত আধুনিক জীবনযাপনে অভ্যস্ত হওয়ার কারণে পশ্চিম অঞ্চলের মানুষদেরকে তাদের শারীরিক সমস্যাগুলোর বিষয়ে আরো সচেতন করে তুলতে পারে শিমেন আদিবাসীদের উপর চালানো এই গবেষণা।
বয়স বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মস্তিষ্কের কোষের (যাকে আমরা নিউরন বলে জানি) সংখ্যা পরিমাণে কমতে থাকে। একে মেডিকেল সাইন্সের ভাষায় ব্রেইন এট্রোফি বলা হয়। বয়স বাড়তেই আমরা ধীরে ধীরে বুড়িয়ে যেতে থাকি। তবে শিমেন আদিবাসীদের ক্ষেত্রে ব্যাপারটি ঘটে থাকে খুবই মন্থর গতিতে।
শিমেন গোষ্ঠীর লোকেরা অত্যন্ত কর্মঠ ও সংগ্রামী জীবনযাপন করেন। কৃষিকাজ, বন্যপ্রাণী শিকার এবং মৎস্য আহরণ করেই তারা জীবিকা নির্বাহ করে। প্রতিদিনকার খাবারের তালিকায় তারা উচ্চ ফাইবারযুক্ত সবজি, মাছ ও মাংস রাখেন তারা।
অপরদিকে পশ্চিমারা বসে বসে কাজ করতেই পছন্দ করেন এবং অধিক মাত্রায় স্যাচুরেটেড ফ্যাট গ্রহণ করে শরীরের বারোটা বাজায়। তবে গবেষকেরা শুরুর দিকে পুরোপুরি নিশ্চিত ছিলেন না, শিমেন আদিবাসীদের স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনই তাদের অপেক্ষাকৃত নীরোগ মস্তিষ্ক তৈরিতে ভূমিকা রাখে কি-না।
যদিও তারা পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করে ও শারীরিকভাবে যথেষ্ট পরিশ্রমীত তবে আধুনিক ওষুধ এবং স্বাস্থ্যসেবা থেকে ঞ্চিত। তাতে বিভিন্ন সংক্রামক ব্যাধি ও অন্যান্য অসুখে তাদের শরীর স্বাভাবিকভাবেই কম প্রতিরোধী হবে। শারীরিক প্রদাহজনিত অসুখগুলো পশ্চিমাদের ঘটে থাকে স্থূলতা এবং বিপাকীয় জটিলতায়। তবে শিমেন আদিবাসীদের ক্ষেত্রে সেসব হয় শ্বাসযন্ত্রের, পাকস্থলী ও অন্ত্রের এবং নানান ধরনের পরজীবী সংক্রমণের কারণে
আদিবাসীদের জীবন নিয়ে বেশ কয়েক বছর গবেষণা করা চ্যাপম্যান বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক হিলার্ড ক্যাপলান বলেছেন, অলস জীবনযাপন এবং মাত্রাতিরিক্ত সুগার ও ফ্যাট গ্রহণ করার ফলে বয়সের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের মস্তিষ্কের টিস্যু অধিক পরিমাণে ক্ষয় হয়। এতে করে আলজেইমারসহ অন্যান্য রোগ প্রতিরোধে শরীর দুর্বলভাবে সাড়া দিয়ে থাকে।
শিমেন আদিবাসীদের স্মৃতিশক্তি এবং চিন্তা করার দক্ষতাকে মূল্যায়ন করা হয়নি গবেষণায়- এই মত দিয়ে অনেক গবেষক বলেছেন আরও গবেষণা হওয়া প্রয়োজন। তথাপি তারা একমত হয়েছেন যে, শিমেন আদিবাসীদের মস্তিষ্কই সবচেয়ে নীরোগ মস্তিষ্ক।
তারা বলছেন, পশ্চিমা ও অন্যান্য অঞ্চলের লোকেরা জীবনযাপন পদ্ধতিতে সামান্য পরিবর্তন এনে মস্তিষ্কের সুস্থতা বজায় রাখতে পারে। গবেষকরা পরামর্শ দিয়েছেন, ঘর থেকে বের হয়ে প্রতিনিয়ত হাঁটুন, প্রতিবেশী ও প্রিয়জনদের সঙ্গে কথা বলুন, প্রিয় মানুষের সঙ্গে খেতে বসুন আর রোজ কিছু সময় শারীরিক পরিশ্রমে নিজেকে ব্যস্ত রাখুন।
Post a Comment