দুর্গাপুজোর ৪ দিনই মেলে গ্রাম থেকে রাতে বেরনোর ছাড়পত্র

 


Odd বাংলা ডেস্ক: ইন্দ্র মহন্ত, বালুরঘাট : সারা বছরে দুর্গাপুজোর চার দিনই মেলে গ্রাম থেকে রাতে বেরনোর ছাড়পত্র। দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার হিলি সীমান্তের কাঁটাতারের ওপারের ভারতীয় গ্রাম উচা গোবিন্দপুর। ঘড়িতে সন্ধ্যা ৬টা বাজতেই গ্রামের বাসিন্দাদের নিজেদের ঘরে ঢুকে যেতে হয়। অসুস্থ হলেই মেলে গ্রাম থেকে কাঁটাতার পেরিয়ে বেরনোর ছাড়পত্র। তবে দুর্গাপুজোর চার দিন গ্রামবাসীদের জন্য থাকে না কোনও বাধা। হিন্দু মুসলিম সকলের অংশগ্রহণে সম্প্রীতির পীঠস্থান হয়ে ওঠে উচা গোবিন্দপুর দুর্গাপুজো মন্দির প্রাঙ্গণ। বাসিন্দারাও এতে অংশ নেন। তাঁরাও চাঁদা তোলা থেকে পুজোর বাজার করে। পুজোকে কেন্দ্র করে দশমীর দিন মেলা বসে। সেই মেলায়  দোকানপাটও বসে। তবে বিএসএফের নজর এড়িয়ে সমস্ত কিছু হয় বলে জানা গিয়েছে। নিজভূমে পরবাসী হয়ে জীবন কাটলেও পুজোকে কেন্দ্র করে কার্যত তাঁরা বন্দি দশা থেকে মুক্তি পান। একমাত্র জেলার এই পুজো কাঁটাতারের ওপারে জিরো পয়েন্টে হয়। আর পাঁচটা গ্রাম বাংলার বৈশিষ্ট্য সমৃদ্ধ জনজীবন থাকলেও বাস্তবে তাঁরা বন্দিদশায় কাটান। কারণ ভারত জিরো পয়েন্ট সংলগ্ন এই গ্রামে আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে এলাকায় প্রবেশ করার নির্দেশ রয়েছে। তবে এই এলাকার বারোয়ারি দুর্গাপুজোকে কেন্দ্র করে পুজোর চার দিন সেই নির্দেশ তুলে নেওয়া হয়। অবাধ ছাড় দেওয়া হয় গ্রামবাসীদের। যার জেরে পুজোর চারদিন যেন অন্ধকার ঘুচিয়ে আলোয় মেতে ওঠেন গোবিন্দপুরবাসী। এবারে এই পুজো ৬৫ বছরে পা দিচ্ছে। পুজো কমিটির সভাপতি পার্থ মণ্ডল বলেন, আমরা কাঁটাতারের বেড়ার ওপারে পড়ে গিয়েছি। ভারতের নাগরিক হয়ে থাকলেও আমরা আজও পরাধীন ভাবে জীবনযাপন করছি। সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে আমাদের এলাকায় প্রবেশ করতে হয়। তবে সমস্ত কষ্ট ভুলে আমরা এই পুজো করছি। পুজোকে কেন্দ্র করে আমাদের ছাড় দেওয়া হয়। এই পুজো আমাদের আশার আলো। 

ভারত সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়ার ওপারের ছিট মহলের ন্যায় উচা গোবিন্দপুর এলাকার দুর্গাপুজোকে কেন্দ্র করে শুধুমাত্র এলাকাবাসী নয়, এই পুজো দেখতে জেলার বিভিন্ন প্রান্তের দর্শনার্থীরা আসেন ঐতিহ্যের টানে। কারণ এই পুজোই একমাত্র জেলার পুজো যা সীমান্তের বেড়ার ওপারে হয়। ৫০টি পরিবার রয়েছে এই এলাকায়। সকলেই কৃষিকাজে যুক্ত। পাশে রয়েছে  দিনাজপুর জেলার দামোদরপুর, বাসুপাড়া, রামচন্দ্রপুর কাটলা গ্রাম। ভারতীয় গ্রাম এখানে চেনা মুশকিল হয়ে যায় অচেনা ব্যক্তিদের। এলাকায় প্রবেশ করতেই প্রথমে পরিচয়পত্র জমা দিতে হয় বিএসএফ জওয়ানদের কাছে। তারপর মেলে গ্রামে প্রবেশ করবার ছাড়পত্র। দুর্গাপুজোর চার দিন এলাকার বাসিন্দারা সারাদিন পুজো মণ্ডপে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে আনন্দে মেতে ওঠেন। 

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.