শিশুর অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণ এবং আমাদের করণীয়

 


ODD বাংলা ডেস্ক: সেলিম সাহেব ইদানীং তার ছোট ছেলে সিয়ামকে নিয়ে খুব টেনশনে আছেন। সিয়ামের বয়স ৭ বছর৷ ইদানীং ভীষণ জেদ করে সিয়াম। জেদগুলো তার বিভিন্ন শখ পূরণ নিয়ে৷ যেমন- গত দুই মাস আগে সে একটা সাইকেলের বায়না করেছিল। সেলিম সাহেব সেটি যথাসময়ে কিনে দিতে না পারায়, তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি আছাড় দিয়ে ভেঙে ফেলে সিয়াম। খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দেয়। বাধ্য হয়ে সেলিম সাহেব ছেলেকে সাইকেল কিনে দেন।


আবার জন্মদিন উপলক্ষে নতুন বায়না ধরে, গেম খেলার জন্য ট্যাব কিনে দিতে হবে তাকে। আপাতত ট্যাব কেনার মতো অর্থ সেলিম সাহেবের নেই। যথাসময়ে ট্যাব কিনে দিতে না পারলে ছেলে আবার নতুন কী কাণ্ড ঘটায়? সেই টেনশনে রাতে ঘুম হয় না সেলিম সাহেবের৷


সিয়ামের এই লাগামছাড়া চাহিদা একদিনে তৈরি হয়নি। বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান সে। আদর করতে কখনো কার্পণ্য করেনি দুজনের কেউই। বাবা সেলিম সাহেব একটা মোটামুটি বেতনের প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করেও ছেলের সব শখ পূরণ করে এসেছেন।


ছোটবেলায় সিয়ামের শখগুলোও ছিল ছোট ছোট, তাই সেগুলো পূরণ করতে গায়ে লাগত না সেলিম সাহেবের৷ তবে আস্তে আস্তে যত বড় হচ্ছে সিয়াম, তার শখের ধরনও যেন বড় হতে শুরু কছে। একসময় বাধ্য হয়ে সেলিম সাহেব তার সন্তানের আবদারে ‘না’ বলতে শুরু করলেন৷


তবে সায়েম তো ‘না’ শুনে অভ্যস্ত নয়। আকস্মিক বাবার আচরণগত পরিবর্তনে সিয়ামের মধ্যেও এসেছে বিশাল পরিবর্তন। বাসার জিনিসপত্র ভাংচুর, বাবাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ কিংবা মেহমানদের সামনে মাটিতে গড়িয়ে চিৎকার- কিছুই বাদ নেই।


উপায়ন্তু না দেখে, নিজের মান সম্মানের কথা চিন্তা করে সেলিম সাহেব ধার-কর্য করে হলেও ছেলের আবদার পূরণ করতে লাগলেন। প্রতিবারই ভাবতেন এই বুঝি শেষ, এরপর থেকে হয়তো ছেলে আর এমন বায়না করবে না। তবে সেলিম সাহেবের ধারণা ভুল প্রমাণ করে যত দিন যাচ্ছিল সিয়ামের বায়নাগুলো যেন; ততই আকাশ ছোঁয়া হতে লাগল।


আসলেই কি সব আবদার পূরণ করলেই সন্তান বাবা-মার কথা শুনবে? সাইকোলজি কি তাই বলে? চলুন জানা যাক-


* রিইনফোর্সমেন্ট, পানিশমেন্ট এবং বিহেভিয়ার মডিফিকেশন


সাইকোলজিতে একটা টার্ম আছে, ‘লার্নিং’। আমাদের আচার-আচরণ এবং আচরণগত পরিবর্তন সবই নির্ভর করে লার্নিং এর উপর৷ এই লার্নিং এর অনেকগুলো পদ্ধতি আছে৷ তার মধ্যে একটি পদ্ধতি হলো রিইনফোর্সমেন্ট। যেকোনো আচরণ বৃদ্ধি করার একটি উপায় হচ্ছে রিইনফোর্সমেন্ট।


উপরের কেস স্টাডিতে সিয়াম যখন তার আবদার পূরন হচ্ছিল না দেখে বিভিন্ন অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণ দেখানো শুরু করলো, সেলিম সাহেব তখন ছেলেকে থামাতে কষ্ট করে হলেও তার আবদার পূরন করতে লাগলেন (রিইনফোর্সমেন্ট)।


এতে করে এই রিইনফোর্সমেন্টের মাধ্যমে সিয়ামের মধ্যে এই লার্নিংটা তৈরি হয় যে, কোনো কিছু পেতে হলে জিনিসপত্র ভাংচুর, গালিগালাজ কিংবা মাটিতে গড়াগড়ি খেলেই হয়। পরবর্তীতে সে যখনই কোনো বায়না করে সেটা না পায়; তখনই এধরনের অপ্রীতিকর আচরণের আশ্রয় নিতো (আচরণ বৃদ্ধি)।


রিইনফোর্সমেন্ট এর ভুল প্রয়োগের মাধ্যমে যেমন একটা ভুল আচরণ বৃদ্ধি করা সম্ভব; তেমনি রিইনফোর্সমেন্টের সঠিক প্রয়োগের মাধ্যমে বাচ্চার মধ্যে সঠিক বা ‘কাঙ্ক্ষিত আচরণ’ বৃদ্ধিও সম্ভব। শিশুর আচরণগত পরিবর্তন তথা বিহেভিয়ার মডিফিকেশন থেরাপিতে ঠিক এই ব্যাপারটাই প্রয়োগ করা হয়।


রিইনফোর্সমেন্টের মতো আচরণগত পরিবর্তন আনার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হচ্ছে পানিশমেন্ট। এর উদ্দেশ্য যেকোনো ‘অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণ’ রোধ করা। এই রিইনফোর্সমেন্ট এর মাধ্যমে ভালো আচরণ বৃদ্ধি কিংবা পানিশমেন্ট এর মাধ্যমে অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণ দূর করা, এই দু’টোর জন্যই প্রয়োজন কোনো একটি স্টিমুলাসের উপস্থিতি অথবা অনুপস্থিতি।


বাচ্চার মধ্যে আচরণগত পরিবর্তন আনার যে স্ট্র্যাটেজি, সেটি মূলত এই রিইনফোর্সমেন্ট এবং পানিশমেন্ট থিওরির উপর ভিত্তি করে বানানো। একটা উদাহরণ দিলে বিষয়টি পরিষ্কার হবে৷ ধরুন, আপনি চাচ্ছেন আপনার সন্তান প্রতিদিন সন্ধ্যার পর ২ ঘণ্টা পড়াশুনা করুক। কিন্তু বহুবার বলার পরেও সে এই কাজটা করছে না৷ এখানে সন্তানের ‘পড়তে বসা’টা হচ্ছে আপনার কাঙ্ক্ষিত আচরণ, অর্থাৎ যেই আচরণটি আপনি বাচ্চার থেকে আশা করছেন।


এখন এই কাঙ্ক্ষিত আচরণ বাড়ানোর জন্য আপনি দু’টো কাজ করতে পারেন- ধরা যাক, আপনার বাচ্চা কোনো একটি নির্দিষ্ট খাবার খেতে খুব ভালবাসে। সেক্ষেত্রে বাচ্চাকে বলতে পারেন, সে যদি আজকে থেকে প্রতিদিন সন্ধ্যায় পড়তে বসে; তাহলে এই সপ্তাহ শেষে শুক্রবার বিকেলে আপনি তাকে তার পছন্দের খাবারটি বানিয়ে দেবেন।


এখানে বাচ্চার পছন্দের খাবার হচ্ছে, সেই স্টিমুলাস যেটার মাধ্যমে আমরা বাচ্চার কাঙ্ক্ষিত আচরণটি বাড়াতে চাচ্ছি। এটাকে বলা হচ্ছে পজেটিভ রিইনফোর্সমেন্ট। আবার ধরা যাক, প্রতিদিন রাত ১০টায় টিভিতে আপনার বাচ্চা তার ভীষণ পছন্দের একটা কার্টুন দেখে। এখন আপনি বাচ্চাকে বলতে পারেন, তুমি যদি সন্ধ্যার পর পড়তে না বসো; তাহলে ১০টার সময় আর কার্টুনটা দেখতে দেওয়া হবে না৷


এখানে ‘পড়তে না বসা’টা হচ্ছে সেই অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণ। যেটা দূর করার জন্য আপনি আপনার সন্তানের একটি পছন্দের জিনিস/স্টিমুলাস তার থেকে সরিয়ে নিচ্ছেন। এটাকে বলা হচ্ছে নেগেটিভ (যেহেতু সরিয়ে নেয়া হচ্ছে) পানিশমেন্ট।


এখানে কয়েকটি বিষয় মনে রাখা প্রয়োজন-


১. পানিশমেন্ট হবে তাৎক্ষণিক অর্থাৎ বাচ্চা সন্ধ্যায় পড়তে না বসলে আপনি ঠিক সেই রাতেই কার্টুন দেখতে দিলেন না। বাচ্চা আজ আপনার কথা শুনলো না, আপনি ১ মাস পর তাকে খুব বকা দিলেন এই বলে যে, ‘অমুক দিন তো আমার কথা শোননি!’ তাহলে কোনো লাভ নেই।


অন্যদিকে বাচ্চাকে রিইনফোর্সমেন্ট বা পুরস্কার দেওয়ার বেলায়ও আপনার কথার যেন হেরফের না হয়। অর্থাৎ তাকে তার পছন্দের জিনিস যেদিন দিবেন বলেছেন, সেদিনই দিবেন। তার একদিন আগেও না, পরেও না৷


২. অনেকসময় সন্তান আপনাকে শর্ত দিবে, ‘আগে জিনিসটা দাও; তাহলে আমি কাজটা করব’। কিন্তু এমন কিছু করা যাবে না। রিওয়ার্ড বা পুরস্কার পাবে কাঙ্ক্ষিত আচরণ করার পর, তার আগে না। পুরস্কার হবে এমন কিছু যেটা বাচ্চার পছন্দ এবং তার বয়স অনুপাতে সঠিক।


অর্থাৎ আপনি যদি বাচ্চাকে আপনার যেটা পছন্দ সেটা কিনে দেন কিন্তু সেটা হয়তো বাচ্চার পছন্দ না কিংবা ৫ বছরের বাচ্চাকে একটা মোবাইল কিনে দেন; তাহলে সেটা সঠিক পুরস্কার হবেনা।


৩. কখনো এমন কিছু দেওয়ার প্রমিস করবেন না, যেটি আপনি পরে পূরণ করতে পারবেন না। কখনো মিথ্যা প্রমিসও করবেন না। এতে করে বাচ্চা আপনার প্রতি বিশ্বাস হারিয়ে ফেলবে৷


৪. বিহেভিয়ার মডিফিকেশন থেরাপির ক্ষেত্রে বাসার সব সদস্যের আচরণ একই হতে হবে। এমনকি এটা সব পয়েন্টের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট। বিশেষ করে আমাদের মতো দেশে, যেখানে যৌথ পরিবার বেশি; দেখা যায় আপনি আপনার সন্তানকে নেগেটিভ পানিশমেন্ট দেওয়ার জন্য টিভি রিমোট এনে নিজের কাছে রাখলেন। যাতে সে তার পছন্দের কার্টুনটা দেখতে না পারে এবং এর প্রেক্ষিতে আপনার বাচ্চা তীব্র কান্নাকাটি, চিৎকার, চেচামেচি শুরু করে দিল (যেটা খুব স্বাভাবিক)।


এদিকে বাচ্চার এই কান্নাকাটি শুনে থাকতে না পেরে বাচ্চার দাদী আপনার থেকে টিভি রিমোট নিয়ে দিয়ে দিল বাচ্চাকে। ফলাফল আপনি বাচ্চার যে বিহেভিয়ারটা মডিফাই করতে চাচ্ছিলেন, তার সবটুকুই উল্টো হয়ে গেলো। বাচ্চার মনে এই ধারণা জন্মায় যে, ‘মা তো আমাকে ভালবাসে না বরং আমার দাদীই আমাকে সত্যিকারের ভালবাসে!’


৫. একটা বিষয় মাথায় রাখবেন সবসময়, বাচ্চার কোনো একটি অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণে যদি নেগেটিভ পানিশমেন্ট দিয়ে থাকেন; তাহলে চেষ্টা করবেন এর পরেই আবার যখন সে কোনো ভালো কাজ করবে তখন সেটাতে একটা পুরস্কার দিতে। সেই পুরস্কার সবসময় বস্তুগত জিনিসই হতে হবে এমন না। পুরস্কার হতে পারে আপনার আদর কিংবা প্রশংসাও।


অর্থাৎ বাচ্চা যেন নিজেই পার্থক্যটা ধরতে পারে যে, আমি যখন কথা শুনছি না বা খারাপ আচরণ করছি; কেবল তখনই মা আমাকে শাস্তি দিচ্ছেন। আর যখন ভালো কিছু করি, মা আমাকে আদর করেন। নতুবা বাচ্চার মনে হতে পারে যে তার বাবা-মা কেবল তাকে শাস্তিই দেয়। এটা ভেবে বাচ্চার মধ্যে আরো বেশি হতাশা এবং ভুল আচরণ তৈরি হবে।



৬. সর্বোপরি ধৈর্য্য ধারণের বিকল্প নেই। কারণ বিহেভিয়ার মডিফিকেশনের পুরো ব্যাপারটাই অনেক বেশি সময়সাপেক্ষ। আপনি এই ধাপগুলো যখন বাচ্চার উপর প্রয়োগ করা শুরু করবেন; তখন শুরুর দিকে আপনার বাচ্চা আরও বেশি জেদ করবে। আগের চেয়েও বেশি অবাধ্যতা দেখাবে এবং বেশিরভাগ বাবা-মাই এই সময়টাতে ধৈর্য্য হারিয়ে বসেন।


মনে রাখবেন, বাচ্চা যাই করুক ধৈর্য্য হারানো যাবে না। যেটা একবার ‘না’ বলবেন, সেটা যেন কখনো ‘হ্যা’ না হয়। আবার যেটাতে পুরস্কার দিবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, সেই প্রতিশ্রুতি যেন রক্ষা হয়। যদি আপনি আপনার এই স্ট্র্যাটেজিতে অনড় থাকতে পারেন; তবে কিছু সময় বেশি লাগলেও শেষপর্যন্ত লাভবান হবেন আপনিই।


* পজেটিভ পানিশমেন্ট কেন নয়?

আলোচনায় আপনাদের মনে একটা প্রশ্ন জাগতে পারে যে পানিশমেন্টের ক্ষেত্রে আমরা কেন পজেটিভ পানিশমেন্ট (যেমন- বকা দেয়া বা মারধোর করা) এর কথা বলছিনা। এর কারণ হলো, পজেটিভ পানিশমেন্টের অনেকগুলো নেতিবাচক দিক আছে।


প্রথমত, পজেটিভ পানিশমেন্ট অনেকসময় বাচ্চার আচরণ পরিবর্তন করার বদলে বাচ্চার মধ্যে প্রবল ভীতি বা আতঙ্ক তৈরি করে। যা পরবর্তীতে বাচ্চার মানসিক সুস্থতায় ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।


দ্বিতীয়ত, পজেটিভ পানিশমেন্টকে ধাপে ধাপে বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। অর্থাৎ আপনার বাচ্চা কথা শুনছেনা বলে, আপনি হয়তো তাকে একটা চড় দিলেন (যেটাতে আমরা কখনোই উৎসাহ দেইনা)। তবে দেখা গেল, এরপরও সে শুনল না৷ সেক্ষেত্রে এর চেয়ে বেশি কিছু কী আপনার করার আছে? নেই।


অন্যদিকে, নেগেটিভ পানিশমেন্টের ক্ষেত্রে আপনি প্রথমে হয়তো তাকে কার্টুন দেখতে দিলেন না! কথা না শুনলে টিভি দেখাই বন্ধ করে দিলেন। আর এরপরেও কাজ না হলে আপনি তার বাইরে খেলতে যাওয়াও বন্ধ করে দিতে পারেন। অর্থাৎ নেগেটিভ পানিশমেন্টে ধাপে ধাপে আপনি শাস্তির মাত্রা বাড়াতে পারেন।


তৃতীয়ত, বাচ্চার মধ্যে অন্যকে পানিশ করার একটা লার্নিং তৈরি হতে পারে। যার ফলে পরবর্তীতে যেকোনো তুচ্ছ ব্যাপারে হয়তো সে নিজের ভাই-বোন বা ক্লাসমেটদের সঙ্গে বকাবাজি বা গায়ে হাত তোলার মতো ঘটনা ঘটাতে পারে।


সর্বোপরি, আপনার পজেটিভ পানিশমেন্টের দরুন সন্তানের মনে আপনার প্রতি একটা নেগেটিভ ইমেজ তৈরি হতে পারে। এই নেগেটিভ ইমেজ থেকে পরবর্তীতে আপনার প্রতি প্রবল ভীতি অথবা তীব্র ঘৃণার জন্ম নিতে পারে।


* অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণ প্রতিরোধ

বিহেভিয়ার মডিফিকেশনের স্ট্র্যাটেজিকে বলা যেতে পারে বাচ্চার অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণের প্রতিকার। কথায় বলে, প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ শ্রেয়। সে হিসেবে বাচ্চার মধ্যে যেন কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণ তৈরিই না হয়; সেজন্য অভিভাবকদের কিছু দ্বায়িত্ব আছে। যেমন-


>> আপনার সন্তান যে বয়সীই হোক না কেন, তাকে ‘কোয়ালিটি টাইম’ দিন। লক্ষ্য করুন এখানে কোয়ালিটি টাইমের কথা বলা হচ্ছে, শুধু টাইম না।


অর্থাৎ আপনার বাচ্চার হাতে একটা ফোন ধরিয়ে দিয়ে ইউটিউব চালিয়ে দিলেন আর নিজে ওর পাশে বসে বসে টিভি দেখলেন; এটাকে কোয়ালিটি টাইম বলেনা। সন্তানের সঙ্গে তার বয়স অনুযায়ী খেলা করুন, গল্প করুন, তার মনের কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনুন।


বিশেষত সন্তান যখন কোন পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায় যেমন, বয়সন্ধিকাল অথবা স্কুল পরিবর্তন তখন তার মানসিকতা বোঝার চেষ্টা করা খুবই জরুরি।


>> আপনার সন্তান ঘরে বা বাইরে যেমন- স্কুলে কোনোরকম সমস্যা বা মানসিক চাপে আছে না-কি; সেটি জানার চেষ্টা করুন ও তার সমস্যা সমাধানে চেষ্টা করুন। অনেকসময় অনাকাঙ্ক্ষিত মানসিক চাপ থেকেও বাচ্চাদের মধ্যে আচরণগত সমস্যা দেখা দেয়।


সেই সঙ্গে বেশি ছোট বাচ্চা অনেকসময় বাবা-মার মনোযোগ আকর্ষণের জন্যও অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণ করতে পারে। অর্থাৎ সন্তান হয়তো খেয়াল করেছে সারাদিন মা কাছে আসে না, কিন্তু যখনই সে জিনিসপত্র ছুড়ছে, মা ছুটে এসে বকা দিচ্ছে।


এতে করে সে এই আচরণ বারবার করতে থাকে। কারণ সে ভাবে বকার মাধ্যমে হলেও মায়ের মনোযোগ তো পাচ্ছে! এসব ক্ষেত্রেও চলে আসে সন্তানের সঙ্গে কোয়ালিটি টাইম স্পেন্ড করার বিষয়টি।


>> সবসময় সন্তানের ভুল না ধরে তার ছোট বড় সব ভালো কাজের (যেমন- নিজের পড়ার টেবিলটা গুছানো, খেলনা গুছিয়ে রাখা, নিজে হাত দিয়ে ভাত খাওয়া ইত্যাদি) প্রশংসা করুন, সম্ভব হলে ছোট ছোট পুরস্কার দিন। এতে করে ভবিষ্যতেও ভালো কাজের প্রতি তার আগ্রহ বাড়বে।


>> সন্তানের সক্ষমতা অনুযায়ী তার প্রতি প্রত্যাশা রাখুন। সবসময় অন্যের সঙ্গে তুলনা করবেন না। অন্যের সন্তান ক্লাসে ফার্স্ট হয় বলে আপনার সন্তানকেও ফার্স্ট হতে হবে এমন কোনো ব্যাপার নেই। তার মেধানুযায়ী তাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখুন।


একটা জিনিস মনে রাখবেন, আমরা সবাই আমাদের সন্তানকে ভালবাসি। তবে সমস্যাটা হয় তখনই যখন আমরা জানি না যে এই ভালবাসার মাত্রাটা কখন, কোথায় এবং কতটুকু মাত্রায় হওয়া উচিত।


কখনো কখনো সন্তানকে ভালবাসতে গিয়ে আমরা তার অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণকে প্রশ্রয় দেই। আবার কখনো বা আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে গিয়ে মাত্রাতিরিক্ত শাসনের বেড়াজালে বেঁধে ফেলি।


কাজেই সন্তানের সুন্দর আচরণ তৈরিতে সবসময় একটি মধ্যম পন্থা অবলম্বন করুন। নিজের ও সন্তানের মানসিক সুস্থতা বজায় রাখুন৷

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.