প্রচণ্ড ঘামে বিরক্ত লাগে দেখে নিন এর সমাধান

 


Odd বাংলা ডেস্ক:এমন অনেকে আছেন, প্রচণ্ড রোদ বা গরমেও যাদের শরীর থেকে একবিন্দু ঘাম বের হয় না। আবার এমন অনেকে আছেন, একটু গরমেই ঘেমে নেয়ে যান। কখনো বেজায় গরম, কখনো বা ভ্যাপসা আবহাওয়ায় ঘামটা তাদের কাছে বিরক্তিকর এবং অস্বস্তিকর হয়ে ওঠে।

তবে ঘাম হওয়া কিন্তু খারাপ নয়, বরং শরীরের পক্ষে ভালো। শরীরের বর্জ্য ঘামের সঙ্গে বের হয়ে যায়। বিশেষ করে তাপমাত্রা বাড়লে একটু ঘাম হওয়া খারাপ কিছু নয়। কিন্তু খুব বেশি ঘামলে সেটা অস্বস্তিকর হতেই পারে। তবে সেই ঘাম নিয়ন্ত্রণের উপায়ও আছে। চলুন জেনে আসি, কী সেই উপায়গুলো।

ডিওড্র্যান্ট

পছন্দের সুগন্ধি কয়েকদিনের জন্য তুলে রাখুন। ব্যবহার করুন ডিওড্র্যান্ট। অনেকের শরীরে কিছু কিছু ডিওড্র্যান্ট সহ্য হয় না। ত্বক জ্বালা করে। তাই পরখ করে নিয়ে তবেই কিনবেন। যদিও এখন সকলে অনলাইনেই যাবতীয় জিনিস কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। সে ক্ষেত্রে নতুন কোনো ডিও নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করে, যাতে আপনি অভ্যস্ত, তাই ব্যবহার করুন। রোল-অন ডিও কিনতে পারেন। এগুলো দারুণ কাজ করে।

ট্যালকম পাউডার

ঘাম নিয়মন্ত্রণ করার সহজ উপায় ট্যালকম পাউডার লাগানো। পকেটেও খুব বেশি টান পড়ে না। স্নান করে উঠে গায়ে লাগাতে পারেন। এতে ঘামের দুর্গন্ধ কম হবে।

শাওয়ার জেল

প্যারাবেন বা অন্য কোনো ক্ষতিকর রসায়ন নেই, এমন শাওয়ার জেল ব্যবহার করুন। সাধারণ সাবানের তুলনায় এর সুগন্ধ আরও বেশি সময় গায়ে থাকে। শরীরে ঘামও তুলনামূলকভাবে কম হয়।

ডায়েট

কী খাচ্ছেন সেটা খেয়াল রাখাও প্রয়োজন। অনেক ধরনের খাবার হজম হতে দেরি হয় এবং শরীরের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দেয়। তাই স্যালাড বা হালকা খাবারই এই সময় খাওয়া ভালো। ঘামের দুর্গন্ধ অনেক সময় খাবার থেকেই হয়। ক্যাফিনও হাত-পা ঘামিয়ে দেয়। তাই অতিরিক্ত ঘামের সমস্যা থেকে মুক্তি চাইলে বেশি কফি না খাওয়াই ভালো।

হালকা সুতির পোশাক

এই সময়ে হালকা সুতির পোশাকের বিকল্প হয় না। সুতি, লিনেন, মখমলের মতো হালকা কাপড়ের পোশাক পরুন যাতে শরীরে সহজেই হাওয়া-বাতাস খেলতে পারে এবং ঘাম কম হয়। গায়ের সঙ্গে আঁটা পোশাক একদম চলবে না।

উষ্ণ আবহাওয়ায় কিছুক্ষণ থাকলে বা কোনো ধরণের শারীরিক পরিশ্রম করলে মানুষের শরীর থেকে ঘাম নির্গত হওয়া খুব স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু কোনো কারণ ছাড়াই শরীরের নির্দিষ্ট কোনো জায়গায় যদি মাত্রাতিরিক্ত ঘাম সৃষ্টি হয়?

বগলের নিচে, হাতের বা পায়ের তালুতে অতিরিক্ত ঘাম তৈরি হওয়ার সমস্যা অনেকেরই রয়েছে। মোট জনসংখ্যার প্রায় ১% মানুষের এই অতিরিক্ত ঘামের সমস্যা থাকে।

ইংরেজিতে এটিকে ‘হাইপারহাইড্রোসিস’ বলা হয়ে থাকে।

যেসব কারণে অতিরিক্ত ঘাম সৃষ্টি হয়

শরীরে অতিরিক্ত ঘাম তৈরি হওয়া যেমন কোনো ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে, শরীরে উপস্থিত অন্য কোনো রোগের কারণে হতে পারে আবার তেমনি কোনো কারণ ছাড়াও এই উপসর্গ দেখা দিতে পারে।

শরীরের যে কোনো অংশে অতিরিক্ত ঘাম তৈরি হতে পারে। আবার শরীরের নির্দিষ্ট কোনো অংশেও অতিরিক্ত ঘাম সৃষ্টি হওয়ার বিষয়টি পরিলক্ষিত হতে পারে।

সাধারণত বগলের নিচে, হাতের বা পায়ের তালুতে, কপালে, উপরের ঠোটে এবং ঘাড়ে অতিরিক্ত ঘাম তৈরি হতে দেখা যায়।

ঠিক কী কারণে শরীরের নির্দিষ্ট একটি অংশে অতিরিক্ত ঘাম তৈরি হয়, এ বিষয়টি এখনও পুরোপুরি নিশ্চিতভাবে আবিষ্কার করতে পারেননি বিজ্ঞানীরা।

ধারণা করা হয়, এটি হাইপারথ্যালামাসে ত্রুটির কারণে অতিরিক্ত ঘাম হয়ে থাকে। হাইপারথ্যালামাস মস্তিষ্কের ঐ অংশ যেটি শরীরে ঘাম উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ করে।

অতিরিক্ত ঘামের ক্ষেত্রে যেসব সমস্যা হয়ে থাকে

যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের ভাসকুলার সার্জন মার্ক হোয়াইটলি বলেন, “সামাজিকভাবে সবচেয়ে ক্ষতিকর ঘামের সমস্যা হলো হাতের তালু ঘামা।”

মি. হোয়াইটলি বলেন, অনেক মানুষই হাত ঘামার কারণে আরেকজনের সাথে করমর্দন করতে অস্বস্তি বোধ করেন। কারণ করমর্দনের পর যখন ঐ ব্যক্তি তার হাত মোছেন, সেটি অপমানজনক।

ভারতের মত উষ্ণ আবহাওয়ার দেশে অতিরিক্ত ঘামের সাথে শরীরে দুর্গন্ধ তৈরি হওয়াও একজন ব্যক্তিকে সামাজিকভাবে অপদস্থকর অবস্থায় ফেলতে পারে।

এছাড়া অতিরিক্ত ঘামে কাপড় ভিজে গিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ার অভিজ্ঞতা হয়তো অনেকেরই আছে।

যেভাবে এই সমস্যার সমাধান করা যায়

শরীরে অতিরিক্ত ঘাম তৈরি হওয়ার সমস্যা যথেষ্ট অস্বস্তিকর এবং ক্ষেত্রবিশেষে অবমাননাকর হলেও, খুশির বিষয় হলো প্রায় সব ক্ষেত্রেই এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।

অতিরিক্ত ঘামের সমস্যা হলে ক্ষেত্রবিশেষে ডারমাটোলজিস্টরা ওষুধ গ্রহণ, বোটক্স ইনজেকশন নেয়া বা সার্জারির মাধ্যমে ঘাম তৈরি করা গ্রন্থিগুলো অপসারণের পরামর্শ দিতে পারেন।

তবে শরীরের কোন অংশে ঘাম হয়, তার উপর নির্ভর করে কোন ধরণের চিকিৎসা নেয়া হবে।

বগলের নিচে অতিরিক্ত ঘাম হওয়ার সমস্যা থাকলে বোটুলিনাম টক্সিন ইনজেকশন কার্যকর হতে পারে।

বোটুলিন এক ধরণের বিষাক্ত পদার্থ যেটি ঘাম তৈরি করা গ্রন্থিগুলোর সাথে যুক্ত স্নায়ুগুলোর কার্যক্ষমতা থামিয়ে দেয়, ফলে ঘাম তৈরি হয় না।

তবে এই পদ্ধতি স্থায়ী নয়, ওষুধের ডোজের ওপর নির্ভর করে প্রতি ছয় থেকে নয় মাসে এই পদ্ধতির পুনরাবৃত্তি করতে হয়।

ঘামের সমস্যার স্থায়ী সমাধান পেতে সার্জারি করতে হবে, যেটিকে এন্ডোস্কোপিক ট্রান্সথোরাসিক সিম্যাথেকটমি বলা হয়।

এই সার্জারির মাধ্যমে ঘাম তৈরি হওয়ার গ্রন্থিগুলোর সাথে সংযুক্ত স্নায়ুর সংযোগ ছিন্ন করা হয়।

এই সার্জারি করে হাত ঘামার সমস্যা সমাধানে প্রায় ৯৯% সফলতা পাওয়া যায়।

তবে এই সার্জারির কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও রয়েছে।

একটি সমস্যা হলো, শরীরের যেসব অংশে ঘাম তৈরি হওয়ার কথা ছিল সার্জারির ফলে সেসব অংশে ঘাম সৃষ্টি হচ্ছে না ঠিকই, কিন্তু ঘাম তৈরিকারি গ্রন্থিগুলো শরীরে ঘাম উৎপন্ন করছে। এরকম ক্ষেত্রে, উৎপন্ন ঐ ঘাম শরীরের অন্যান্য অংশ দিয়ে নির্গত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

অর্থাৎ, আপনি হাতে অতিরিক্ত ঘামের জন্য সার্জারি করার ফলে হাতে ঘাম তৈরি হলো না কিন্তু শরীরের অন্যান্য অংশে ঘামের পরিমাণ সাধারণ সময়ের চেয়ে বেড়ে গেলো।

সাধারণত শরীরের নিচের অংশে বা ঘাড়ে এই অতিরিক্ত ঘাম সৃষ্টি হয়ে থাকে।

আরেকটি ঝুঁকি হলো, সার্জারির পর ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

তবে চিকিৎসকরা পরামর্শ দিয়ে থাকেন, যত কম বয়সে হাইপারহাইড্রোসিস বা অতিরিক্ত ঘামের এই সমস্যা সমাধান করা যায় ততই ভাল।

চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোন ধরণের অষুধ গ্রহণ করা কোনভাবেই উচিত নয়।

কখন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন?

ঢাকার মিলেনিয়াম হাসপাতালের চিকিৎসক পলাশ দেবনাথ বিবিসিকে বলেন নিয়মিতভাবে শরীরের নির্দিষ্ট কোনো অংশ ঘামলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।

“ঘামের সমস্যা যদি এত বেশি থাকে যে আপনার দৈনন্দিন কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয়, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।”

এছাড়া হঠাৎ যদি ঘামের সমস্যা শুরু হয়, তাহলেও চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত বলে তিনি মন্তব্য করেন।

“অনেক সময় কোনো রোগের ওষুধ নেয়া শুরু করার পর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে ঘামের সমস্যা তৈরি হতে পারে। সেরকম ক্ষেত্রেও চিকিৎসকের পরার্মশ নেয়া উচিত।”

আর যাদের অতিরিক্ত ঘামের সমস্যা রয়েছে, তাদের ঘামের সমস্যা যদি টানা ৬ মাস ধরে চলতে থাকে সেক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন মি. দেবনাথ।

পারিবারিকভাবে অতিরিক্ত ঘামের সমস্যা থাকলে বা শুধুমাত্র নির্দিষ্ট একটি সময়ে, যেমন রাতে, ঘামলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.