মাত্র ১ ইউরোতে ইতালিতে বাড়ি কেনার সুযোগ!

 


Odd বাংলা ডেস্ক:ইতালিতে মাত্র ১ ইউরোতে পাওয়া যাচ্ছে বাড়ি! শুনতে অবিশ্বাস্য বলে মনে হলেও, এমনটাই হচ্ছে পাহাড়, সাগর আর বরফে ঢাকা ইতালির আব্রুজ্জোতে।

সংবাদসংস্থা সিএনএনের এক প্রতিবেদনে জানা যায়, মাত্র এক ইউরো বা প্রায় একশ টাকার বিনিময়েই সেদেশে বাড়ির মালিক হতে পারবেন নাগরিকরা।

মূলত জীবিকার সন্ধানে ইতালির বাসিন্দারা গ্রামাঞ্চল ছেড়ে শহরের দিকে চলে যাচ্ছেন। এ কারণে, সেসব বাসিন্দাদের পরিত্যক্ত বাড়ি পুনর্নির্মাণ করে বসবাসের উপযোগী করা এবং সেসব অঞ্চলে বসবাসের ধারা বজায় রাখতেই ইতালির সরকার এমন উদ্যোগ নিয়েছে।

দেশটির অন্যান্য গ্রাম এবং শহরের মতো, আব্রুজ্জোর প্রাতোলা পেলিগনায় কয়েক দশক ধরে জনসংখ্যা কমতে শুরু করেছে। ১৯৩০-এর দশকে, এখানে বসবাস করতো প্রায় ১৩ জাহার মানুষ; কিন্তু স্থানীয় কর্মকর্তারা বলছেন, এখন এখানে বসবাস করছেন মাত্র ৭ হাজার মানুষ।


চ্যালেঞ্জিং কাজ

উজ্জ্বল ভবিষ্যতের সন্ধানে পরিবার অন্যত্র চলে যাওয়ায় অনেক বাড়িঘর পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে ইতালির গ্রামগুলোতে। বছরের পর বছর বেশ কয়েকটি ভূমিকম্পের কারণে সেসব পুরনো বাড়িগুলোর অবস্থা হয়েছে আরও বেশি জরাজীর্ণ।

স্থানীয় কাউন্সিলর পাওলো ডি বাক্কো বলেন, '১ ইউরোতে বাড়ি বিক্রয় শুরুর আগে, স্থানীয় কর্মকর্তারা পরিত্যক্ত সম্পত্তি ও বাড়িঘরগুলোর ম্যাপিং করছেন এবং পুরানো মালিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছেন; এটি ছিল একটি চ্যালেঞ্জিং কাজ।'

ইতালির অন্যান্য শহরের মতো প্রাতোলা পেলিগনায় ক্রেতাদের নতুন বাড়ি সংস্কারের নিশ্চয়তা হিসেবে ৫ হাজার ইউরো জামানত রাখতে হবে না। এর পরিবর্তে, যদি তারা ছয় মাসের মধ্যে ভবনটির কাজের বিস্তারিত পরিকল্পনা নিবন্ধন করতে ব্যর্থ হন, তবে তাদেরকে গুণতে হবে ১০ হাজার ইউরো জরিমানা।

ডি বাক্কো বলেন, "এটি সত্যিই একটি চ্যালেঞ্জিং কাজ। আমরা শুধু নিশ্চিত করতে চাই, ক্রেতারা আসলে তাদের প্রতিশ্রুতি অনুসরণ করবে এবং কেবল ১ ইউরোতে সম্পদ কিনে, এরপর উধাও হয়ে যাবেন না।"


পল্লী জনপদ

প্রাতোলা পেলিগনার অধিকাংশ বাড়ি এ অঞ্চলের ঐতিহাসিক জেলা শোয়াভেনিয়ায় অবস্থিত। বাড়িগুলো বিস্তৃত ও অভিনব পাথরের নকশায় সজ্জিত। এগুলোর মধ্যে কিছু কিছু বাড়ি আবার প্রয়োজনীয় আসবাবপত্রেও সাজানো রয়েছে। তবে, এর অধিকাংশই কেবল ধ্বংসস্তূপে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে।

দ্বিতল বাড়িগুলো অপেক্ষাকৃত বেশ ছোট, মাত্র ৭৫০ বর্গ ফুটের। কিছু কিছু বাড়িতে আবার রয়েছে একাধিক লোহার বারান্দা। বাড়িগুলো এমনভাবে নকশা করা হয়েছে যেনো ভারি তুষারপাত ভেতরে প্রবেশ করতে না পারে। এছাড়া, প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই রয়েছে দু'টি করে প্রবেশপথ; একটি বাড়ির সামনে এবং অন্যটি স্টোররুমের সঙ্গে বাড়ির পিছনে।

ডি বাক্কো জানান, আগেকার দিনে বাড়ির বাসিন্দা এবং তাদের গৃহপালিত পশুরাও একসঙ্গেই থাকতো। এমনকি এখানে গাধাচালিত গাড়ির প্রচলনও ছিল।


উৎসব এবং মেলা

বলা হয়ে থাকে, প্রাতোলার গোড়াপত্তন এখানকারই একদল উপজাতির হাতে, যারা সাম্রাজ্যবাদী রোমের শাসন মানতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল। এই শহরটির নাম ল্যাটিন শব্দ "প্রাতুলায়" (pratulae) থেকে এসেছে, যার অর্থ "বিস্তৃত চাষের তৃণভূমি।"

একসময় শক্তিশালী বিশপের শাসনামলে এটি ছিল একটি সমৃদ্ধ গ্রামীণ কেন্দ্র। তবে, কৃষকরা তাদের কঠোর পরিশ্রমের পরেও টিকে থাকতে না পারায়, এই শহরের পতন শুরু হয়।

এখনও এখানে কিছু পুরনো ঐতিহ্য টিকে আছে। এর মধ্যে একটি হলো, ধর্মীয় তীর্থযাত্রা, যেখানে বিশ্বাসীরা হাঁটুতে ভর করে খালি পায়ে পাহাড়ের উপর ওঠে। ১৪৫৬ সালে প্লেগ রোগের বিরুদ্ধে বিজয় উদযাপনে এখনও তারা এই ঐতিহ্য ধরে রেখেছে।

এছাড়া উৎসব এবং মেলায় তৈরি করা হয় নানা ধরণের মুখরোচক খাবার। স্থানীয় এই খাবারগুলোর মধ্যে রয়েছে "ক্যানেলিনি" এবং "পোভারেলি" নামে বিশেষ মটরশুঁটিযুক্ত খাবার। ক্রিসমাস মেনুতে থাকে ট্রাউট সস সহ সাতটি ভিন্ন ধরণের স্যুপ এবং বিশেষ ধরণের নুডলস।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.