স্কুইড গেম থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ ফোন নম্বর যে কারণে বাদ দিচ্ছে নেটফ্লিক্স
Odd বাংলা ডেস্ক: নেটফ্লিক্স কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তাদের খুব জনপ্রিয় সিরিজ স্কুইড গেমের একটি দৃশ্যে দেখানো গুরুত্বপূর্ণ একটি ফোন নম্বর তারা সম্পাদনা করে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কারণ, এরই মধ্যে এক নারী বলছেন, এটি বাস্তবে তার ফোন নম্বর এবং তার মোবাইলে আসা ফোন কল সামাল দিতে তিনি হিমশিম খাচ্ছেন।
টান টান উত্তেজনার এই দক্ষিণ কোরীয় টিভি নাটক সিরিজে ঋণে জর্জরিত প্রতিযোগীদের একটি গেম বা খেলায় অংশ নেওয়ার জন্য এই নম্বরেই ফোন করতে বলা হয়।
বিজয়ীর জন্য থাকে বিশাল অঙ্কের নগদ অর্থ পুরস্কার হিসেবে জেতার সুযোগ। তাদের অংশ নিতে হয় শিশুরা যে ধরনের খেলা খেলে, সে রকম এক গেমে। তবে এই গেম একেবারে জীবন-মৃত্যুর লড়াই। এতে হারলে মৃত্যু। আর জিতলে খেলার পরের ধাপে যাবেন প্রতিযোগী।
কিন্তু দক্ষিণ কোরিয়ার এক নারী বলেছেন, সিরিজটিতে প্রতিযোগীরা যে নম্বরে ফোন করছে বলে দেখানো হয়, সেটি আসলে তার ফোন নম্বর। বহু মানুষ এখন তার নম্বরে কল করে খেলায় অংশ নেওয়ার জন্য অসংখ্য অনুরোধ করছে।
বিশ্বজুড়ে তুমুল জনপ্রিয় স্কুইড গেম এখন নেটফ্লিক্সের বিশ্ব র্যাংকিংয়ের এক নম্বর স্থানে পৌঁছে গেছে।
দক্ষিণ কোরীয় নারীর অভিযোগ কী?
দক্ষিণ কোরিয়ার দক্ষিণ-পূর্বে সিয়ংজু এলাকার এক ব্যবসায়ী নারী স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন যে তার ফোনে তিনি হাজার হাজার টেক্সট মেসেজ এবং ফোনকল পাচ্ছিলেন। তিনি বলেন, ফোনে মেসেজ ও কলের সংখ্যা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে তার প্রাত্যহিক জীবন বাধাগ্রস্ত হচ্ছিল।
তিনি বলেন, ১০ বছরের বেশি সময় আমি এই ফোন নম্বর ব্যবহার করছি, কাজেই আমি হতচকিত হয়ে গেছি। আমার মোবাইল থেকে চার হাজারের ওপর কল আসা ফোন নম্বর আমাকে ডিলিট করতে হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, প্রথমে আমি বুঝতে পারিনি কী হচ্ছে। পরে আমার বন্ধু জানায় যে আমার নম্বর এসেছে স্কুইড গেমে। তখন ব্যাপারটা আমি বুঝতে পারি।
তাকে স্থানীয় মুদ্রায় ৫০ লাখ ওয়ন (৪,১৭৮ ডলার সমপরিমাণ) ক্ষতিপূরণের প্রস্তাব দেওয়া হয়, তবে সেটা তিনি প্রত্যাখ্যান করেছেন।
এই নম্বর নিয়ে কী করছে নেটফ্লিক্স?
নেটফ্লিক্স ওই ব্যবসায়ী নারীকে ক্ষতিপূরণ দিতে চেয়েছে বলে তিনি যে দাবি করেছেন, সে বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি নেটফ্লিক্স। তবে তারা অনুষ্ঠানের ভক্ত দর্শকদের কাছে অনুরোধ করেছেন তারা যেন ওই নম্বরে ফোন না করেন।
তারা আরো জানিয়েছেন, প্রযোজক সংস্থার সঙ্গে আমরা বিষয়টি নিয়ে কথা বলছি এবং সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে কাজ করছি। যেসব দৃশ্যে ওই নম্বরটি এসেছে, সেসব দৃশ্য প্রয়োজনে এডিট করে বাদ দেওয়ার বিষয়টি আমরা বিবেচনা করছি।
এই গেম শোটি প্রথম শুরু হয়েছে ১৭ সেপ্টেম্বর এবং নেটফ্লিক্স বলছে, মাত্র ১০ দিনের মধ্যে ৯০টি দেশে এই শো র্যাংকিংয়ে এক নম্বরে উঠে গেছে।
স্কুইড গেমের জনপ্রিয়তা কী কারণে?
এ ধরনের অনুষ্ঠানের ধরন খুব যে নতুন বা অভিনব তা নয়। তবে বিবিসির ওয়েই ইপ এবং উইলিয়াম লি বলছেন, সিরিজ অনুষ্ঠানের আকর্ষণীয় ভিজ্যুয়াল, চরিত্রগুলোর সঙ্গে বাস্তবের মিল এবং মানব চরিত্রের কিছু কঠিন ও বেদনাদায়ক দিক যেভাবে এতে উঠে এসেছে, তা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মানুষের মনকে ছুঁয়েছে।
স্কুইড গেম খেলায় আছে ৪৫৬ জন প্রতিযোগী। এদের সবাই ঋণে জর্জরিত এবং উঠে দাঁড়াতে মরিয়া। এই খেলা জীবন বাজি রেখে লড়ার - বাঁচার জন্য এক মরণপণ গেম। ছয়টি খেলার এই সিরিজ জিতলে বিজয়ীর হাতে আসবে ৪৫.৬ বিলিয়ন কোরিয়ান ওয়ন বা ৩৯ মিলিয়ন ডলার। আর হারলে মৃত্যু অবধারিত।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন এই গেম সিরিজের সাফল্যের চাবিকাঠি হলো, এর চরিত্রদের বেশির ভাগই সমাজের প্রান্তিক মানুষ।
তাদের সবাই বিশাল আর্থিক সমস্যায় জর্জরিত হলেও তারা সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ।
যেমন- প্রধান চরিত্র একজন বেকার, যার জুয়ার সমস্যা রয়েছে। ফলে পরিবারের কারোর কাছ থেকে সে সম্মান পায় না। এই গেম সিরিজে সে দেখা পেয়েছে একজন তরুণীর, যে উত্তর কোরিয়া ত্যাগ করে দক্ষিণে চলে এসেছে। তার জীবনে অনেক কঠিন অভিঘাত এসেছে। তার সঙ্গে দেখা আরেকজন পাকিস্তানি শ্রমিকের, যার মালিক তার সঙ্গে খুব দুর্ব্যবহার করেন।
সাংমিউং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্ব সংস্কৃতি বিষয়ের অধ্যাপক কিম পিয়ং-গ্যাং বলেন, মানুষ, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম, যারা আসল জীবনে বিচ্ছিন্নতা এবং প্রতিকূলকতার শিকার হয় পদে পদে, তারা এই চরিত্রগুলোর মধ্যে নিজেদের মিল খুঁজে পেয়েছেন এবং চরিত্রগুলো, দেখা যাচ্ছে, তাদের সহানুভূতি কুড়াচ্ছে।
জীবনযুদ্ধে পরাজিত, সমস্যায় জর্জরিত এবং গভীর হতাশাগ্রস্ত কিছু মানুষের গল্প নিয়ে তৈরি এই থ্রিলার সিরিজ 'স্কুইড গেম'-এর গল্প লিখেছেন ও পরিচালনা করেছেন হোয়াং ডং-হিউক।
Post a Comment