অদ্ভুত পায়ে ‘ক্যামেল গার্ল’ মাতিয়ে রাখতো লাখো দর্শক

Odd বাংলা ডেস্ক: স্বাভাবিক শারীরিক আকৃতির বাইরেও বিশেষ বৈশিষ্ট্য কিংবা প্রতিবন্ধকতা নিয়ে অনেক মানুষই জন্ম গ্রহণ করে। এগুলো স্বাভাবিক জীবনযাপনে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে। আবার বিশেষ শারীরিক আকৃতি বা বৈশিষ্ট্য অনেকের পরিচিতিও বাড়িয়ে দেয়। তেমনই একজন নারী এলা হার্পার। নিজের শারীরিক বিশেষ আকৃতির কারণেই সার্কাসে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে ওঠে সে। নিজের অদ্ভুত পায়ে মাতিয়ে রাখতো লাখো দর্শক।

এলা হার্পারের জন্ম যুক্তরাষ্ট্রের টেনেসি অঙ্গরাজ্যের হেন্ডারসনভিলে ১৮৭০ সালের ৫ জানুয়ারি। তার বাবা মায়ের নাম উইলিয়াম হার্পার ও মিনার্ভা। উইলিয়াম হার্পার ছিল পেশায় একজন কৃষক। সেসময় সুমনার কাউন্টিতে স্টক রাইজার হিসেবেও তার জনপ্রিয়তা ছিল। এলার এভারেট নামে এক যমজ ভাইও ছিল। সে মাত্র ৩ মাস বয়সে মারা যায়। এলার বাবা মায়ের স্যালি, উইলি ও জেসি আরো তিনটি সন্তান ছিল।

একটি খুব বিরল জন্মগত ত্রুটি নিয়ে জন্মগ্রহণ করে এলা হার্পার। যে কারণে তার হাঁটু পিছন দিকে বাঁকিয়ে যেতে থাকে। জন্মগত এ ত্রুটি জেনু রিকার্ভাটাম নামে পরিচিত। তার হাঁটু পিছনের দিকে বাঁকিয়ে যাওয়ার কারণে হাঁটার সময় তাকে অনেকটা উটের মতো দেখা যেতো। এর ফলে সে ‘ক্যামেল গার্ল’ হিসেবে পরিচিতি পায়। এলা তার হাত ও পা ব্যবহার করে নিজের চারপাশে হাঁটতে পারতো।    

শারীরিক এই বিশেষ আকৃতির কারণে মানুষের তার প্রতি ছিল প্রবল কৌতূহল। এর ফলে সার্কাস দলও তার প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠে। সে সার্কাস দলের প্রস্তাব ফেরায়নি। সার্কাস তার জীবনে খ্যাতি এনে দেয়। ঐতিহাসিক রেকর্ড অনুসারে, এলা হার্পার ১৮৮২ সালের অক্টোবরে সার্কাসে কর্মজীবন শুরু করে। তখন তার বয়স ছিল মাত্র ১২ বছর। প্রাথম দিকে সে নিজের আশপাশের অঞ্চলে সার্কাস শো করতো। পরবর্তীতে সে যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি রাজ্যে শো করে।

সার্কাস দলে যোগ দেওয়ার পর খুব দ্রুতই সে দর্শকদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে শুরু করে। তার অস্বাভাবিক চেহারা জনগণের কৌতূহলের প্রধান কারণ ছিল। সে সময়ের বিখ্যাত এখন শো-ম্যান ডাব্লিউ এইচ হ্যারিস এলাকে দেখেছিলেন ১৮৮৬ সালে। তিনি এলাকে ‘নিকেল প্লেট সার্কাস’ -এর যোগদান করতে আমন্ত্রণ জানান। এলাও এ সুযোগ গ্রহণ করে। সেখানে প্রথম শোতেই এলা তুমুল জনপ্রিয়তা পায়। এ শোতে তাকে একটি উটের সঙ্গে পারফরমেন্স করতে হয়েছিল।

শো-ম্যান এমনভাবে মঞ্চ তৈরি করেছিলেন যাতে দর্শকরা এলার পিছনে বাঁকানো হাঁটুকে পশুর সঙ্গে তুলনা করতে পারে। সার্কাসের দর্শকরা তার চেহারা দেখে বেশ অবাক হয়েছিল। সার্কাস দেখতে আসা বেশিরভাগ দর্শক এলাকে অর্ধেক মানুষ ও অর্ধেক উট হিসেবে বিবেচনা করেছিল। সেখান থেকেই এলা হার্পার ‘ক্যামেল গার্ল’ নামে পরিচিতি পায়।

এরপর এলা হার্পারের জনপ্রিয়তা ক্রমেই বাড়তে থাকে। লাখো দর্শক অপেক্ষায় থাকতো এলার সার্কাস শো-এর জন্য। তার প্রতিটি পারফরম্যান্সের আগেই সব টিকিট শেষ হয়ে যেতো। সেসময় এলা প্রতি সপ্তাহে ২০০ ডলার বেতন পেত, বর্তামানে যা প্রায় প্রতি সপ্তাহে ৫ হাজার ডলারের সমান।

তবে জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকা অবস্থায়ই এলা হার্পার সার্কাসে তার কর্মজীবন ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। ১৮৯০ -এর দশকের শুরুতেই সে সার্কাস ছেড়ে দেয়। এরপর তার সম্পর্কে খুব বেশি তথ্য পাওয়া যায়নি। কিছু রেকর্ড অনুযায়ী, সার্কাস ছেড়ে দেওয়ার পর এলা হার্পার টেনেসির সুমনার কাউন্টিতে ফিরে যায়। সেখানে এলা হার্পার রবার্ট সেভলি নামের একজন স্কুলশিক্ষক ও ফটোগ্রাফি দোকানের বুক কিপারকে ১৯০৫ বিয়ে করেছিল। তাদের বিয়ের বেশ কয়েক বছর পর টেনেসির ন্যাশভিলতে বসবাস করতে যায় তারা। সেখানেই ১৯২১ সালে মৃত্যু বরণ করে এলা হার্পার।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.