যে ক্যাফে এখনো চলে দালাই লামার অনুপ্রেরণায়

Odd বাংলা ডেস্ক: আজ থেকে প্রায় ২০ বছর আগের কথা। দালাই লামার অনুপ্রেরণায় এডিনবরায় হিমালয়া ক্যাফে খুলেছিলেন রেকা গাওয়া। রেকাকে ভিনদেশে তিব্বতের সংস্কৃতি প্রচার করতে বলেছিলেন দালাই লামা। দালাই লামাকে দেওয়া কথা রাখতেই বহু কাঠখড় পুড়িয়ে একটি ক্যাফে প্রতিষ্ঠা করেন রেকা। তবে দীর্ঘ সময় ভাড়া নেয়া ক্যাফেটি বিক্রি করার কথা ভাবছেন মালিক। ফলে, দেখা দিয়েছে ক্যাফে বন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা।

ভারতের মুসৌরিতে জন্ম নেয়া রেকা ১৩ বছর বয়সে ডেনমার্কে পাড়ি জমান। ২২ বছর বয়সে এডিনবরায় আসেন রেকা। সেখানে স্কটিশ পার্লামেন্টে চাকরি পান তিনি।

রেকা বলেন, "আমি প্রিসাইডিং অফিসার জর্জ রেইডকে প্রতি সকালে কফি পরিবেশন করতাম। একদিন তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন দালাই লামার আসার খবর আমি জানি কি না। তিনি জানতেন আমি তিব্বতি। আর তাই আমি দালাই লামার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চাই কি না, তাও জানতে চান তিনি।"

২০০৪ সালে দালাই লামার সঙ্গে দেখা হয় রেকার। সেদিন বাড়িতে ছুটে গিয়ে রেকা তার সবচেয়ে সেরা তিব্বতের ঐতিহ্যবাহী পোশাকটি বেছে নেন। রেকা এতো বেশি উচ্ছ্বসিত ছিলেন যে, ভারতে তার বাবা-মাকে ফোন করে সেই খবর জানিয়েছিলেন। সরাসরি তার সঙ্গে দেখা হবে সেটা ভেবে ভয় লাগছিল। এর আগে আমার শুধু তাকে ছবিতে দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল," বলেন রেকা।  

দালাই লামাকে সামনে দেখে কেঁদে ফেলেছিলেন রেকা। রেকা বলেন, আমি দেখলাম তিনি আমার হাত দুটো ধরে আমাকে শান্ত করার চেষ্টা করলেন। আমি কাঁদছিলাম কারণ সেটা ছিল আনন্দের কান্না। আমি কোথা থেকে এসেছি, কতদিন এখানে আছি এসব শোনার পর তিনি আমাকে বললেন যে, তিব্বতের সংস্কৃতির প্রচার করা খুবই জরুরি। সেদিনই আমি তাকে স্কটল্যান্ডে থেকে যাওয়ার প্রতিজ্ঞা করলাম। জানালাম তিব্বতের সংস্কৃতির প্রচারই হবে আমার জীবনের প্রধান কাজ। পুরো জিনিসটা ছিল স্বপ্নের মতো। 

২০০৬ সালে স্কটিশ পার্লামেন্টে ক্যাটারিংয়ের কাজ ছেড়ে দেন তিনি। ২০০৭ সালে সাউথ ক্লার্ক স্ট্রিটে হিমালয়া ক্যাফে স্থাপন করেন রেকা। বন্ধুদের সহায়তায় ক্যাফেটি সাজিয়ে তোলেন রেকা। বর্তমানে ক্যাফের জায়গাটির মালিক জায়গাটি বিক্রি করে অবসরে যেতে চান। রেকা জানান ক্যাফেটি রক্ষা করতে তিনি ব্যাংক থেকে লোন নিয়েছেন। পরিবার, স্বজন ও বন্ধুদের থেকেও টাকা ধার করেছেন। তবে, ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত তাকে সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে তাকে আরো অর্থ যোগাড় করতে হবে

গত ১৪ বছরে রেকা এই ক্যাফে ঘিরে একটি শক্তিশালী কমিউনিটি গড়ে তুলেছেন। নিচতলায় রয়েছে মেডিটেশনে জন্য পৃথক একটি ঘর। যে কেউ বিনামূল্যে এখানে এসে মেডিটেশন করতে পারেন। উত্তর ইউরোপ, বাল্টিক অঞ্চল ও পোল্যান্ডে দালাই লামার প্রতিনিধি সোনাম স্টিয়ারিং ফারসি বলেন, দালাই লামা এই ক্যাফে এবং রেকার তিব্বতি সংস্কৃতি প্রচারণার কথা শুনেছেন।

বহু বছর ধরে স্কটল্যান্ডে রেকার তিব্বতি সংস্কৃতি প্রচারণাকে উৎসাহিত করছি। আমি চাইব তার ক্যাফের ব্যবসা যেন নির্বিঘ্নে চলে। একইসঙ্গে এডিনবরার মানুষ যেন তিব্বতের খাবার ও প্রশান্তির স্বাদ পান। ক্যাফে বাঁচাতে না পারলে কষ্ট পাব। এটা আমার সারা জীবনের অর্জন। মহাত্মার কাছে দেওয়া প্রতিশ্রুতি আমি রক্ষা করতে চাই, এভাবেই আবেগ আপ্লুত হয়ে বলছিলেন রেকা। 

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.