যে রাজার ১০০ স্ত্রী আর ৫০০ সন্তানের সংসার



Odd বাংলা ডেস্ক: বিশ্বের নানান দেশের নানান জাতির মধ্যে বহুবিবাহের প্রচলন রয়েছে। তবে একজন মানুষ সর্বোচ্চ কতজন স্ত্রী থাকতে পারে? এই সংখ্যাটা যদি ১০০ ছাড়িয়ে যায়, তাহলে ব্যাপারটাকে রূপকথার মতোই মনে হবে। কিন্তু এই রূপকথার মতো ঘটনাই ঘটিয়েছেন ক্যামেরুনের বাফুটের রাজা দ্বিতীয় আবুম্বি। বাফুট হচ্ছে আফ্রিকা মহাদেশের ক্যামেরুনের একটি অঞ্চল। বাফুটের রাজাদের বলা হয় 'ফন'। বাফুটের বর্তমান রাজা বা ১১ তম ফন হচ্ছেন দ্বিতীয় আবুম্বি।

দুই, চার কিংবা পাঁচটা নয়, আবুম্বির বউ ১০০ জন। আর সন্তান ৫০০ এর বেশি। অবশ্য সেজন্য এতোগুলো বিয়ে তাকে করতে হয়নি। সিংহাসনে বসার পরই বেড়ে গেছে তার সংসার। স্থানীয় রীতি মেনে ১০০ জন স্ত্রীর সঙ্গলাভ করেছেন তিনি। 

ঘটনা হলো, ক্যামেরুনের এই প্রদেশে কোনো রাজার মৃত্যু হলে তার স্ত্রীদের দায়িত্ব নিতে হয় পরবর্তী রাজাকেই। অর্থাত্‍ বাফুটের রাজবংশের রেওয়াজ অনুযায়ী এক রাজার মৃত্যুর পর যিনি রাজা হবেন, তাকেই পূর্ববর্তী রাজার সব স্ত্রী ও সন্তান গ্রহণ করতে হবে। পূর্বের রাজার স্ত্রীদের নতুন রাজা স্ত্রীর মর্যাদা দিয়ে রাজ্য পরিচালনা করবেন। আগের রাজার সন্তানদের বাবাও হবেন নতুন রাজা।

ঐতিহ্য হিসেবে এমনটাই চলে আসছে। সেই রীতি মানতেই ক্যামেরুনের বাফুট প্রদেশের ১১তম রাজা আবুম্বিরও স্ত্রীর সংখ্যা দাড়িয়েছে ১০০ জনে এবং সন্তানের সংখ্যা ৫০০ জনে। রাজার প্রত্যেক স্ত্রীই শিক্ষিত। পাশাপাশি তারা বেশ কয়েকটি ভাষাতেও কথা বলতে পারেন। ১৯৬৮ সালে বাবার মৃত্যুর পর রাজা হন আবুম্বি। ক্যামেরুনে বহুবিবাহকে এখনো বেআইনি ঘোষণা করা হয়নি। 

স্থানীয় রীতি, সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখাই তার উদ্দেশ্য বলে জানিয়েছেন রাজা আবুম্বি। বাফুটের রাজপরিবারে নিয়ম হচ্ছে, রাজ্যের জ্যেষ্ঠ রানীরা নতুন রানীদের সব রীতি-রেওয়াজ শিখিয়ে দেবেন। যেহেতু রাজ্যের নতুন রাজা অর্থাত্‍ তাদের বর্তমান স্বামী পূর্বে রাজপুত্র ছিলেন, তাই রাজাকে পরম্পরার শিক্ষা দেওয়ার দায়িত্বও জ্যেষ্ঠ রানীদের ওপর থাকে।

রাজার প্রকৃত মা বা বোন রাজার সহায়িকা এবং প্রধান উপদেষ্টার ভূমিকা পালন করে থাকেন। রাজার বড় ভাইকে মুমা এবং ছোট ভাইকে নিমফর বলা হয়, যারা রাজ্য পরিচালনায় ফনকে সহায়তা করে থাকেন। তবে ফনের হঠাত্‍ মৃত্যু বা পদত্যাগে তার ভাইরা রাজ্য শাসনের ক্ষমতা পান না।

রাজা আবুম্বির তৃতীয় রানী কনস্ট্যান্সের কথায়, 'প্রতিটি সফল পুরুষের সফলতার পেছনে থাকে একজন নারীর অবদান। আমাদের ঐতিহ্য হলো কেউ যখন রাজা হন, তখন তার বড় স্ত্রীরা সব ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি কনিষ্ঠ স্ত্রীদের শিখিয়ে দেন এবং নতুন রাজাকে তাদের ঐতিহ্য সম্পর্কে অবহিত করেন। কেননা, তিনি আগে রাজা ছিলেন না, ছিলেন রাজপুত্র।'

এই সুযোগে রাজা আবুম্বির রাজকার্য সম্পর্কে একটু জেনে নেয়া যাক। রাজার মতে, তার রাজ্যের জনগণের ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতি লালন করা ও রক্ষার দায়িত্ব তার। আর এজন্য স্ত্রীরা তাকে সহযোগিতা করেন। এসবের বাইরেও একজন রাজার বেশ কিছু দায়িত্ব রয়েছে। তিনি বহির্বিশ্বের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখেন, অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগ করে থাকেন। রাজ্যের সব ধরনের বিচার কাজ তার নামে পরিচালিত হয়। কেননা, তিনিই সেখানকার চূড়ান্ত আদালত এবং তারই সিদ্ধান্তে অপরাধীকে শাস্তি দেওয়া বা মওকুফ করা হয়।

এছাড়া রাজাই এই রাজ্যের প্রধান যাজক। তিনি পূর্বপুরুষদের শান্তি প্রার্থনা করে বলি দেন। ক্যামেরুনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উত্‍সব 'আবিন-ই-মফর'-এ সবার মধ্যমণি হিসেবে সব অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন তিনি। ক্যামেরুনের বাফুট রাজ্যটি ঐতিহ্যবাহী এবং একইসঙ্গে আধুনিক শাসন ব্যবস্থার জন্য বিখ্যাত। এছাড়া বাফুট রাজ্যের একটি অন্যতম আকর্ষণ হলো রাজা দ্বিতীয় আবুম্বির রাজবাড়ি। 

রাজপ্রাসাদ বলতে যেমন বড় বড় অট্টালিকা বুঝি আমরা, আবুম্বির রাজবাড়ি কিন্তু তা নয়। তার এই রাজবাড়িকে 'টহ' নামে ডাকা হয়ে থাকে। এটি তৈরি হয়েছে কাঠ এবং পুষ্পলতা দিয়ে। ২০০৬ সালে এটিকে ক্যামেরুনের অন্যতম পর্যটক আকর্ষণ এবং বিশ্বের সবচেয়ে বিপন্ন পর্যটন এলাকা হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়। রাজবাড়ি ঘিরে রয়েছে একটি 'পবিত্র বন'। উত্তর-পশ্চিম ক্যামেরুনের বাফুট প্রাসাদটি ৪০০ বছরের বেশি সময় ধরে এই রাজ্যের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে আছে। 

বাফুটের নিজস্ব সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় আচার এবং প্রথাগত অনুষ্ঠান সবকিছুই এটিকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়। রাজবাড়িতে ৫০টির বেশি ঘর রয়েছে। এগুলো বাফুটের ফন ও তার স্ত্রীদের বসবাস এবং রাজার দরবার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। রাজবাড়িতে অবস্থিত তালপাতায় ঘেরা কাঠ ও বাঁশ দিয়ে তৈরি উপাসনালয়টি ঐতিহ্যবাহী ভক্তিমূলক স্থাপনার দারুণ এক নিদর্শন। এখানে বাফুটের প্রথম তিন রাজা ফিরলো, নেবাসি শু ও আম্বেবির সমাধি রয়েছে।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.