ডায়াবেটিসের ঝুঁকিতে কারা? নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধে উপায়
ODD বাংলা ডেস্ক: ১৪ নভেম্বর ‘বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস’। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতোই ভারতেও বর্তমানে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা বেড়েছে অনেক। তবে শৃঙ্খলাবদ্ধ জীবনযাপন ও নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলার মাধ্যমে এ ঘাতক ব্যাধিকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। ফলে এর ক্ষতিকর প্রভাব থেকেও মুক্তি মেলে।
ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ ডা. মো. এজাজ বারী চৌধুরী জাগো নিউজকে জানিয়েছেন ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধের উপায়। তিনি সিটি হাসপাতাল ডায়াবেটিস সেন্টার ও মেডিনোভা ডায়াবেটিস সেন্টারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আনিসুল ইসলাম নাঈম-
জাগো নিউজ: ডায়াবেটিস কি সংক্রমক রোগ?
ডা. এজাজ বারী চৌধুরী: ডায়াবেটিস কোনো সংক্রামক রোগ নয়। এটি একজনের দেহ থেকে আরেকজনের দেহে ছড়ায় না। এমনকি স্বামী স্ত্রীর মিলন ও রক্তদানেও এই রোগটি ছড়ায় না।
জাগো নিউজ: ডায়াবেটিসের লক্ষণ গুলো কী কী?
ডা. এজাজ বারী চৌধুরী: ডায়াবেটিসের সাধারণ কিছু লক্ষণ আছে। ডায়াবেটিসের লক্ষণগুলো হলো-
>> ঘন ঘন প্রসাব হওয়া
>> গলা শুকিয়ে যাওয়া
>> ঘন ঘন জলের পিপাসা পাওয়া
>> বেশি বেশি ক্ষুধা লাগা
>> শরীরের ওজন কমে যাওয়া
>> শরীরের কোনো জায়গায় ঘা বা ক্ষত হলে সেরে উঠতে দেরি হওয়া
>> শরীর দূর্বল লাগা
>> চোখে ঝাপসা দেখা ইত্যাদি।
কারও কারও ক্ষেত্রে সবগুলো লক্ষণ প্রকাশ পায় আবার কারও ক্ষেত্রে ২-৩ টা লক্ষণও প্রকাশ পেতে পারে। আবার অনেকের ক্ষেত্রে কোনো লক্ষণই প্রকাশ পায় না।
জাগো নিউজ: ডায়াবেটিস রোগে গর্ভধারণে ঝুকি আছে কী?
ডা. এজাজ বারী চৌধুরী: ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ না করে গর্ভধারণ করলে গর্ভপাতের ঝুঁকি বেশি থাকে, অর্থাৎ বাচ্চা নষ্ট হবার সম্ভাবনা থেকে যায়। তাই বাচ্চা নিতে হলে গর্ভধারণের আগে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
তবে কেউ যদি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ না করেই গর্ভবতী হয়ে যান বা গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন। তবে অবশ্যই ডায়াবেটিস ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
জাগো নিউজ: ডায়াবেটিস রোগীর জীবনযাপন কেমন হবে?
ডা. এজাজ বারী চৌধুরী: ডায়াবেটিস রোগীর জীবনযাপন অনেক সুশৃঙ্খল হতে হবে। নিয়মিত স্বাস্থ্যকর খাবার-দাবার গ্রহণ করতে হবে। শরীরে যে পরিমাণ ক্যালোরি বা শক্তি প্রয়োজন তা দৈনিক পাচঁ ভাগ করে খেতে হবে।
সকাল, দুপুর ও রাত তিন বেলার খাবার দৈনিক একই সময়ে খেতে হবে। সময়ের সঙ্গে সকাল-দুপুরের মাঝামাঝি হালকা নাস্তা ও দুপুর-রাতের মাঝখানে একটা হালকা নাস্তা খেতে হবে। এভাবে রোগীর ডায়েট ঠিক রাখতে হবে।
অলস জীবনযাপন করা যাবে না। সপ্তাহে ৫ দিন আধা ঘণ্টা করে ব্যায়াম করতে হবে বা হাঁটতে হবে। তবে খালি পেটে না হেঁটে হালকা কিছু খেয়ে হাঁটতে হবে।
পাশাপাশি ডায়াবেটিস রোগীকে যে ইনসুলিন ও মেডিসিনের জন্য পরামর্শ দেওয়া হবে তা অনুসরণ করতে হবে। অবশ্যই কিছুদিন পরপর চিকিৎসকের ফলোআপে থাকতে হবে। কারণ একই ওষুধ সব সময় সমান ডোজ কাজ নাও করতে পারে।
রোগীর ঘরে ডায়াবেটিস মাপার মেশিন রাখতে হবে। মাসে অন্তত দুইবার ডায়াবেটিস মাপতে হবে। সকালের নাস্তার আগে ও তিনবেলা খাবার ২ ঘণ্টা পর ডায়াবেটিস মাপার সঠিক সময়।
জাগো নিউজ: ডায়াবেটিস রোগের চিকিৎসা কি?
ডা. এজাজ বারী চৌধুরী: খাদ্য নিয়ন্ত্রণ, ব্যায়াম ও নিয়মিত ওষুধ গ্রহণ ডায়াবেটিস রোগের মূল চিকিৎসা। শরীরে রোগের ধরন একেক সময় ভিন্ন হয়ে থাকে। এজন্য একই চিকিৎসা দীর্ঘদিন নাও চলতে পারে। শরীরের অবস্থা বুঝে চিকিৎসার ধরন পরিবর্তন ঘটতে পারে।
কারও কারও ক্ষেত্রে ওষুধ লাগে না। শুধু খাওয়া-দাওয়া ও ব্যায়াম করলেই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে। আবার কারও কারও ক্ষেত্রে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ওষুধ, ইনসুলিন, ব্যায়াম ও খাবার-দাবার সব কিছুই লাগতে পারে। এটা রোগীর অবস্থান বুঝে ঠিক করা হয়।
জাগো নিউজ: কি কি কারণে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বেড়ে যায়?
ডা. এজাজা বারী চৌধুরী: বিভিন্ন কারনে ঝুঁকি বাড়তে পারে যেমন-
>> অলস জীবনযাপন করলে
>> শরীরের ওজন অত্যধিক বেড়ে গেলে
>> ফাস্টফুড ও জান্ক খাবার বেশী খেলে ও
>> পরিবারে ডায়াবেটিস রোগ থাকলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে।
তবে নিয়মিত ফ্যাটমুক্ত খাবার গ্রহণ, শাক-সবজি খাওয়া, শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা ও সক্রিয় জীবনযাপন করলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমে যায়।
জাগো নিউজ: কীভাবে তরুণরা ডায়াবেটিসকে নিয়ন্ত্রণে রাখবে?
ডা. এজাজ বারী চৌধুরী: তরুণরা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে কিছু কিছু বিষয় মেনে চলবে। যেমন-
>> শরীরের ওজন ঠিক রাখবে
>> বেশি বেশি ফলমূল ও শাক-সবজি খেতে হবে
>> ফাস্টফুড ও জাঙ্কফুড আসক্তি কমাতে হবে
>> যতটুকু সম্ভব ব্যায়াম ও শারীরিক পরিশ্রম করতে হবে
>> নেশাদ্রব্য সেবন থেকে বিরত থাকবে।
এসব বিষয় মেনে চললেই তারা ডায়াবেটিস থেকে দূরে থাকতে পারবে।
জাগো নিউজ: শীতে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার উপায় কী?
ডা. এজাজ বারী চৌধুরী: শীতেও নিয়মিত ব্যায়াম চালিয়ে যেতে হবে। সেক্ষেত্রে বাহিরে না গেলে বাসায় ফ্রি হ্যান্ড ব্যায়াম বা হাঁটাহাটি করতে হবে। শীত হচ্ছে পিঠাপুলির সময়। এই সময়ে নানা ধরনের পিঠা তৈরি করা হয় ঘরে। তাই অতিরিক্ত পিঠা খাওয়া যাবে না।
তাছাড়া শীতে নানা রকমে শাক-সবজি পাওয়া যায় যেমন- লালশাক, পুঁইশাক, ফুলকপি, বাঁধাকপি, মুলা, ওলকপি, টমেটো, কাঁচা পেঁপে, বেগুন, শসা, করলা, ধুন্দল, ও চালকুমড়া ইত্যাদি। এই সময়ে বেশি বেশি শীতকালীন শাক-সবজি খেতে হবে।
Post a Comment