উনিশ শতকে ১০৫ কিলোমিটার গতির ‘রহস্যময়’ গাড়ি



 ODD বাংলা ডেস্ক: পৃথিবীটা নানা জানা-অজানা রহস্যে ভরা। সময়ের বিবর্তনে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উৎকর্ষে ভেদ হয় অনেক রহস্য। ভেদ করা রহস্য প্রতিনিয়ত মানুষের হৃদয়ে জাগায় শিহরণ। তেমনি উনিশ শতকে বিশ্বের সৌখিন গাড়ি প্রেমীদের হৃদয়ে শিহরণ জাগায় পৃথিবীর সবচেয়ে গতির বৈদ্যুতিক গাড়ি ‘লে জামাইস কনটেন্ট’। সেই সময়ের গতির দানব গাড়িটি সবার হৃদয়ে চরমভাবে নাড়া দেয়। ‘লে জামাইস কনটেন্ট’ গাড়িটির গড়ন ছিল অদ্ভুত, যা মানুষকে অবাক করে এখনো।

‘লে জামাইস কনটেন্ট’ গাড়ির অবাক করা নকশাকারী ক্যামিল জেনাটজি। অবাক করা নকশার এ গাড়ি ছিল একটি ধাতব সিলিন্ডারের মতো, যাতে যুক্ত ছিল চার চাকা। গাড়িটির দৈর্ঘ্য চার মিটারের চেয়ে কম হলেও গতিতে ছিল শত কিলোমিটারের বেশি তেজ। এ গাড়ি উনিশ শতকে গড়েছিল দ্রুততম গতির সর্বোচ্চ রেকর্ড।


‘লে জামাইস কনটেন্ট’ গাড়ির গড়ন

গাড়ির গঠন ছিল বেশ অদ্ভুত। এ গাড়িতে চালক বসার যুতসই জায়গা ছিল না। গাড়ির শীর্ষে বসে ঘোড়া চড়ার স্বাদ পেতেন চালক। এমনকি এ গাড়িতে কোনো সিট বেল্ট, রোল কেজ বা কোনো আধুনিক সুরক্ষা ব্যবস্থাও ছিল না। অথচ এটিই পৃথিবীর প্রথম ১০০ কিলোমিটারের বেশি গতিতে চলা গাড়ি।


‘লে জামাইস কনটেন্ট’ গাড়ির গতির সর্বোচ্চ রেকর্ড


‘লে জামাইস কনটেন্ট’ মূলত একটি বৈদ্যুতিক গাড়ি। চালক হিসেবে ১৮৯৯ সালের ২৯ এপ্রিল দ্রুততম গাড়িটি চালিয়ে প্রতি ঘণ্টায় ১০৫ কিলোমিটারের বেশি গতির সর্বোচ্চ রেকর্ড গড়েন বেলজিয়ামের চালক ক্যামিল জেনাটজি। নির্ভীক কীর্তি গড়া জেনাটজি সেই সময় এ রেকর্ডটি নিজের করে নিয়েছিলেন। অবশ্য তিন বছরের মাথায় তিনি তার রেকর্ডটি হারান।


কে এই রেকর্ডধারী চালক ক্যামিল জেনাটজি?


জেনাটজি বেলজিয়ামের একটি ধনী পরিবারের সন্তান ছিলেন। একই সঙ্গে ছিলেন গাড়ির পোকা। তার জীবনের বিশাল আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয় গাড়ি। এজন্য ‘লে জামাইস কনটেন্ট’ গাড়ির নকশায় সফল হন কীর্তিমান এ চালক। দ্রুত গতির গাড়ি তৈরির ক্ষেত্রে তার সফলতা হচ্ছে সেটিকে প্রতি ঘণ্টায় ১০৫.৮৮ কিলোমিটার গতি উঠানোর সক্ষমতা অর্জন করা।


যেভাবে মোটর শিল্পে বৈদ্যুতিক গাড়ি বিপ্লব


শতাধিক বছর আগে মোটর শিল্পে বৈদ্যুতিক গাড়ির প্রাধান্য থাকায় অন্যান্য গাড়ির চেয়ে অনেক বেশি বৈদ্যুতিক গাড়িই প্রস্তুত করা হতো। ১৮৩০-এর দশকে প্রথম বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরি হয়েছিল। তবে সেই সময় নন-রিচার্জেবল সেল ব্যাটারিতে এগুলো চালিত হতো। রিচার্জেবল ব্যাটারি আবিষ্কারের মাধ্যমে মোটর শিল্পে বৈপ্লবিক পরিবর্তন হয়। ১৮৫৯ সালের দিকে প্রথম রিচার্জেবল ব্যাটারি আবিষ্কার হয়। তবে নিজস্ব শক্তির উৎসসহ প্রথম মানববহনকারী বৈদ্যুতিক যান ১৮৮১ সালের এপ্রিল মাসে প্যারিসের রাস্তায় চলেছিল। এটি অবশ্য পরীক্ষামূলক পরিচালনা ছিল। ফরাসি উদ্ভাবক গুস্তাভ ট্রোভ এ পরীক্ষা চালান। এরপর থেকেই বৈদ্যুতিক গাড়ি গতির নতুন নতুন রেকর্ড গড়তে থাকে চালকরা।


‘লে জামাইস কনটেন্ট’ গাড়ির শেষ ঠিকানা 


যেই গাড়িটি উনিশ শতকে গতির সর্বোচ্চ রেকর্ড করেছিল সেই গাড়িটি আজও গতির গাড়ি প্রেমীদের হৃদয়ে রক্ষিত। পৃথিবীতে গতির গাড়ির ইতিহাস খুঁজলেই ‘লে জামাইস কনটেন্ট’ গাড়ির ইতিবৃত্ত সামনে চলে আসবেই। আধুনিক যুগে যারা ‘লে জামাইস কনটেন্ট’ গাড়ি সম্পর্কে জানেন তারা তখনকার আবিষ্কার দেখে যারপরনাই অবাক হতে বাধ্য হন। বিশ্বের প্রথম ১০০ কিলোমিটারের বেশি গতিতে চলা সেই ঐতিহাসিক বিস্ময় গাড়িটির একটি রেপ্লিকা আজও ফ্রান্সের কমপিউন অটোমোবাইল জাদুঘরে সংরক্ষিত রয়েছে।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.