কুকুর-বিড়াল নিয়েই কাটছে জুলিয়ার দিন

 


ODD বাংলা ডেস্ক:  ঘড়ির কাঁটায় তখন সকাল সাতটা। কেউ দোকান খুলছেন আবার কেউ কর্মস্থলে যাচ্ছেন। ঠিক সেই সময়ে টমি, কালু, লাল্টুসহ বিভিন্ন নামের ডাক। এসব ডাকেই ছুটে আসে কয়েকটি কুকুর। তাদের মুখে তুলে দেওয়া হয় খাবার। প্রায় দুই বছর ধরে প্রতিদিন সকালে এভাবেই কুকুরের মুখে খাবার তুলে দেন জুলিয়া আক্তার মরিয়ম।

সড়কে ঘুরে-বেড়ানো কুকুর ছাড়াও বেশ কিছু বিড়াল রয়েছে জুলিয়ার বাসায়। সব মিলিয়ে কুকুর-বিড়ালের সংখ্যা ৪৫টি। এছাড়া আশপাশের একালায় ঘুরে প্রতিদিন সড়কের কুকুর-বিড়ালগুলোর মধ্যে খাবার বিলি করেন জুলিয়া।


সন্তান নিয়ে রাজধানীর শ্যামলীর খিলজি রোড এলাকায় স্বামীর সঙ্গে থাকেন জুলিয়া। এলাকার প্রায় সবাই তাকে পশুপ্রেমী হিসেবে চেনেন। পশুর প্রেমের কারণে যদিও মাঝে মধ্যেই শুনতে হয় বিরূপ মন্তব্য। এরপরও দমে যাননি এ গৃহবধূ। নিজের সন্তানের মতোই সেবা-যত্ন করেন এসব কুকুর-বিড়ালকে।


প্রথমে প্রতিবেশীরা কটু কথা বললেও এখন আশপাশে কোনো কুকুর-বিড়ালকে অসুস্থ বা আহত অবস্থায় দেখলে ফোন করেন জুলিয়াকে। ফোন পেয়ে শত ব্যস্ততার মাঝেও তাদের উদ্ধার করে আনেন পশুপ্রেমী এ নারী।


ঘুম থেকে উঠেই শুরু হয় জুলিয়ার ব্যস্ততা। কুকুর ও বিড়ালের জন্য তৈরি হয় মাছ-মাংসের পৃথক খাবার। নিজ বাসা কিংবা গ্যারেজে থাকা কুকুর-বিড়ালের মতোই দরদ সড়কে থাকা পশুর প্রতি। প্রতিদিন সকাল সাতটা আর রাত নয়টা বাজলেই শ্যামলীতে থাকা অর্ধশত কুকুরের জন্য খাবার নিয়ে হাজির হন জুলিয়া।


পশুপ্রেমী জুলিয়া বেগম মরিয়ম বলেন, ছোটবেলা থেকেই কুকুর-বিড়ালের প্রতি আমার আলাদা ভালোবাসা রয়েছে। যদিও সেই সময় তেমন কিছু করা হয়নি। তবে ২০২০ সালে করোনা শুরু হতেই সড়কে ঘুরে-বেড়ানো কুকুর-বিড়ালের প্রতি মায়া জন্মায়। লকডাউনে সবকিছু বন্ধ থাকায় এসব পশু কোথাও খাবার পাচ্ছিল না। হোটেল কিংবা চায়ের দোকান খোলা থাকলেও তাদের মুখে একটু খাবার জুটতো। এসব চিন্তা করেই নিজের সংসারের কিছু খরচ বাঁচিয়ে কুকুর-বিড়ালের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করি। তবে এসব কাজে আমার স্বামীই আর্থিক সহায়তা করছেন।


তিনি বলেন, শুরুতে আশপাশের লোকজন নানা রকম কথা বললেও কর্ণপাত করিনি। অনেকে পাগলও বলেছেন। এরপরও কুকুর-বিড়ালকে নিয়ম করে তিন বেলা খাবার দিয়েছি। এখন সব কিছুর দাম বেড়ে যাওয়ায় দু-বেলা দিচ্ছি। তবে কেউ সহায়তা করলে তিন বেলাই খাবার দেব।


জুলিয়া বলেন, এসব কুকুর-বিড়ালের জন্য প্রতি মাসে প্রায় ৩০ হাজার টাকার মতো খরচ হয়। প্রতিদিন তাদের মুরগির মাংস, ভাত, মাছ, গিলা-কলিজা দিতে হয়। বিস্কুট-পরটাও লাগে। এছাড়া কোনো কুকুর বা বিড়াল অসুস্থ হলে চিকিৎসা করাতে হয়। এর জন্য লাগে কয়েক ধরনের ওষুধ আর ইনজেকশন।


পশুপ্রেমী এ গৃহবধূ বলেন, কয়েকদিন আগে দেখি একটা কুকুর খুব অসুস্থ। এরপর কুকুরটিকে বাসার গ্যারেজে নিয়ে আসি। চিকিৎসককে খবর দিয়ে চিকিৎসা করানো হয়। পরে ১৫-২০ দিনের পরিচর্যায় কুকুরটি সুস্থ হয়ে ওঠে। এভাবেই দিনের পর দিন নিজ বাসায় এবং বাসার বাইরের পশুদের সেবা করছেন জুলিয়া।


জুলিয়া জানান, তার কাছে থাকা বিড়াল ও কুকুরদের বেশির ভাগ অসুস্থ এবং আহত অবস্থায় ছিল। বাসায় এনে তিনি সুস্থ করে তুলেছেন।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.