হাজার বছরের বিস্ময় কেয়া দ্বীপের রক্ষক ‘সিংহ’
ODD বাংলা ডেস্ক: প্রাচীনকাল থেকেই বিশ্বের একটি জনপ্রিয় স্থান গ্রিক দ্বীপ ‘কেয়া’। এটি এথেন্সের নিকটতম সাইক্ল্যাডিক দ্বীপ। এ দ্বীপের বিখ্যাত স্মৃতিস্তম্ভগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ‘লায়ন অফ কেয়া’ বা ‘কেয়া দ্বীপের সিংহ’। এটি গ্রিকের প্রাচীন স্মৃতিস্তম্ভের মধ্যে একটি। আনুমানিক খ্রিষ্টপূর্ব ৬০০ অব্দের দিকে এটি নির্মিত হয়েছিল। স্মৃতিস্তম্ভের এ সিংহ বছরের পর বছর ধরে বিস্ময়ের জন্ম দিয়েছে। এটি নিয়ে পৌরাণিক কাহিনি প্রচলিত রয়েছে।
‘লায়ন অফ কেয়া’ সম্পর্কিত পৌরাণিক কাহিনি
অসংখ্য পৌরাণিক কাহিনিতে এ সিংহ সৃষ্টির ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এসব কাহিনির বেশির ভাগের শুরুর কথা হলো কেয়া দ্বীপটিতে জলরাশির নিম্ফ’র (গ্রিক পুরাণের একটি নারী চরিত্র) বসবাস ছিল। যারা দেবতাদের ঈর্ষান্বিত করতে নিজেদের সৌন্দর্য ব্যবহার করতো। দেবতারা এ প্রবণতা দেখে দ্বীপটিকে উত্তেজক নিম্ফ থেকে রক্ষা করতে একটি সিংহ পাঠিয়েছিলেন। পৌরাণিক এসব কাহিনি প্রচলিত থাকলেও সিংহটি সম্পর্কে আসল কোনো তথ্যই জানা যায়নি। তবে প্রায় এ সম্পর্কিত সব পৌরাণিক কাহিনিই দাবি করে যে, দ্বীপটি একসময় জলরাশির নিম্ফ’র বাসস্থান ছিল।
প্রখ্যাত মার্কিন প্রত্নতত্ত্ববিদ জন ক্যাস্কি তার ১৯৮১ সালে প্রকাশিত একটি নিবন্ধে এ দ্বীপের উর্বরতা এবং সুপেয় জল বজায় রাখার ক্ষেত্রে সিংহ এবং এর গুরুত্ব সম্পর্কে বিস্তারিত লিখেছিলেন।
প্রচলিত আছে, এ দ্বীপে প্রচুর সুপেয় জলের ঝর্ণা ছিল, যা থেকে নিম্ফ’রা পান করতো। কিন্তু দেবতারা এ দ্বীপের সুপেয় জল রক্ষা করতে চেয়েছিলেন। সে কারণেই তারা নিম্ফদের দূরে রাখতে সিংহটিকে দ্বীপে প্রেরণ করেছিলেন।
ক্যাস্কির মতে, এ ভাস্কর্যটির সঙ্গে এ দ্বীপের বিরল ও ক্ষতিকারক খরার রেকর্ড হিসাবে কাজ করেছে। এটি এখনো আইওলিসের নিকটে একটি পাহাড়ের ওপরে বিশাল প্রতীকী মূর্তি আকারে রয়েছে।
অন্য একটি পৌরাণিক কাহিনি প্রচলিত আছে যে, কেয়া দ্বীপ একসময় অসংখ্য প্রাকৃতিক ঝর্ণা এবং নিম্ফদের কারণে ‘জল দ্বীপ’ হিসাবে পরিচিত ছিল।
এ পৌরাণিক কাহিনি অনুযায়ী, দেবতারা দ্বীপের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঈর্ষান্বিত হয়েছিলেন এবং তাদের ক্রোধে একটি সিংহকে দ্বীপটি ধ্বংস করতে প্রেরণ করেছিলেন। নিম্ফরা দ্বীপপুঞ্জের নতুন বাসিন্দাকে ভয় পেয়ে অন্যত্র চলে গিয়েছিল। এর ফলে দ্বীপটির জলের উৎস এবং সৌন্দর্য হারিয়েছিল।
পৌরাণিক কাহিনিতে আরো বলা হয়েছে, এরপর কেয়া দ্বীপের লোকেরা আরিস্তায়েস দেবতার কাছে দ্বীপটি রক্ষা করার জন্য অনুরোধ করে। পরে জিউস সন্তুষ্ট হলে বৃষ্টিপাত হয় এবং নিম্ফরা ফিরে আসার অনুমতি পায়। পুনরায় দ্বীপটি সৌন্দর্য ফিরে পায়। দর্শনার্থীরা দ্বীপের সেই সৌন্দর্য আজও উপভোগ করতে পারেন।
কেয়া দ্বীপের আকর্ষণীয় গড়ন
কেয়া দ্বীপটিতে ব্রোঞ্জ যুগের শুরু থেকেই বহু শতাব্দী ধরে বসবাসের স্থান ছিল। এথেন্স এবং মূল ভূখণ্ডের গ্রিসের সঙ্গে এর সান্নিধ্য ছিল। দ্বীপটি খাড়া পাহাড়, জলপাইয়ের বাগান এবং হেলেনিস্টিক টাওয়ারে পূর্ণ ছিল। প্রাচীন গ্রিকদের সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ উদ্ধৃতি দিয়ে কিয়ার উপর চারটি প্রাচীন নগর নির্মিত হয়েছে। দ্বীপের চারপাশে এখনো নগর ধ্বংসাবশেষ রয়েছে। এসব ধ্বংসাবশেষ দর্শকদের প্রাচীন শহরগুলোর জীবনের এক ঝলক দেয়।
কেয়ার সিংহের ইতিহাস
কেয়ার সিংহটি প্রাচীন শহর ইওলিডার বাইরে অবস্থিত। এর কিছু মূল ধ্বংসাবশেষ এখনো দৃশ্যমান। খ্রিষ্টপূর্ব ৬০০ অব্দের আগে তৈরি হয়েছিল। সিংহটি পাথরে খোদাই করা, যার দৈর্ঘ্য ৮ মিটার (২৬ ফুট) এবং উচ্চতা ৩ মিটার (৯.৮ ফুট)। এ রহস্যময় ভাস্কর্যটির ভাস্কর কে তা জানা সম্ভব হয়নি। তবে প্রত্নতাত্ত্বিকদের মতে, এটি স্থানীয় চুনাপাথরের তৈরি।
ভাস্কর্যটির চারপাশের জায়গা একটি সমাধি চিহ্ন হতে পারে, কারণ গ্রিসজুড়ে বিশিষ্ট সমাধিসৌধের চারপাশে একাধিক সিংহ ভাস্কর্য রয়েছে। কেয়ার সিংহটি যদি একটি সমাধি চিহ্ন হয় তবে এটি প্রাচীন সমাধি স্মৃতিস্তম্ভগুলোর মধ্যে একটি হবে। অন্যদিকে এমন বিকল্প তত্ত্ব রয়েছে যা দাবি করে যে, সিংহটি মিঠা জলের প্রবাহের চিহ্নিতকারী ছিল।
লেখক এবং আবিষ্কারকরা কয়েকশ বছর ধরে কেয়ার সিংহটি দেখতে দ্বীপটিতে আসছেন। ডেনিশ লেখক পিটার অলুফ ব্রডস্টেড ১৮২৬ সালে সিংহটি সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেছিলেন। একইভাবে ১৮৮৫ সালে জেমস থিওডোর ব্রেন্ট দ্বীপটি পরিদর্শন করেছিলেন এবং স্মৃতিসৌধটি তৈরি সম্পর্কে তিনি বিস্তারিত লিখেছিলেন। একই সঙ্গে সিংহের একটি বিশদ বিবরণও লিখেন ব্রেন্ট।
প্রাচীন গ্রিক ভাস্কর্য এবং কেয়ার সিংহ
অনেক ঐতিহাসিক ধারণা করেন যে, কেয়ার সিংহ আজ অবধি আবিষ্কৃত গ্রিক স্মৃতিস্তম্ভ ভাস্কর্যগুলোর মধ্যে অন্যতম প্রাচীন। এটির মাধ্যমেই প্রাচীন গ্রিকদের ভাস্কর্যের দক্ষতা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। সিংহ হাজার বছর ধরে শক্তি ও সুরক্ষার চিহ্ন হিসেবে ধরা হয়। শহরের শত্রুদের চ্যালেঞ্জ জানাতে কিংবা প্রতিকূল আবহাওয়ায় সিংহ তাদের সাহস জুগাতো। তবে কেয়া দ্বীপের সিংহের বিষয়ে স্পষ্ট কিছু জানা যায়নি।
Post a Comment