Odd বাংলা ডেস্ক: জনি ওয়াকার, এক মিল-কর্মী পরিবারে ১৯২৬ সালে সেন্দুওয়া, বারওয়ানি জেলার, ইন্দোর, ব্রিটিশ ভারতের মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। জন্মের সময় তাঁর নাম রাখা হয় বদরুদ্দিন জামালউদ্দিন কাজী। তাঁর বাবা যে মিলটিতে কাজ করতেন তা বন্ধ হয়ে গেলে, তার পরিবার, মহারাষ্ট্রের বোম্বেতে চলে আসেন। দশ সন্তানের মধ্যে যার মধ্যে কাজী ছিলেন দ্বিতীয়, কাজী বোম্বেতে আসার পর বেশ কয়েক বার চাকরি পাবার চেষ্টা করেছিলেন এবং শেষ পর্যন্ত বি.ই.এস.টি (বোম্বে ইলেকট্রিক সাপ্লাই এবং ট্রান্সপোর্ট) বাস সার্ভিসে একজন বাস কন্ডাক্টর হিসাবে একটি চাকরি পান। বরফের মিছরি, ফলমূল, শাকসবজী, স্টেশনারি এবং অন্যান্য পণ্য ক্রয় এবং বিক্রয় করার জন্য বিভিন্ন সময়ে তিনি একাধিক মাইল অতিক্রম করতেন এবং একসময়ে তিনি রুটিওয়ালার কাজও করেছেন। তারুণকালে, তিনি চলচ্চিত্রে জড়িত হবার স্বপ্ন দেখেছিলেন। নূর মোহাম্মদ চার্লিকে অনুসরণ কতেনন এবং অন স্ক্রিনে যে স্টান্ট দেখেছিলেন তা অনুশীলন করতেন।
কর্মজীবন
জনি ওয়াকার সবসময় চলচ্চিত্রে কাজ করার স্বপ্ন দেখতেন, তাই তিনি বাসে কাজ করার সময় মাজাদার অংঙ্গ-ভংঙ্গি করে যাত্রীদের বিনোদন দিতেন। মনে মনে আশা করতেন যে, কোনো এক সময় চলচ্চিত্রের জগতের কোন ব্যক্তির নজরে আসতে পারবেন। তাঁর স্বপ্ন সত্য হয়েছিল, যদিও কীভাবে তার বিবরণ অস্পষ্ট। সম্ভবত একটি বাসে অথবা যখন হুলচুল চলচ্চিত্রের লোকদের তিনি তার অভিনয় দক্ষতা দেখাচ্ছিলেন, তখন অভিনেতা বলরাজ সাহনী তাকে দেখতে পান। হুলচুল চলচ্চেত্রে তিনি মাতালের ভূমিকায় ছোট্ট একটি চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। সূত্র অনুযায়ী বলরাজ সাহনী, সেই সময়ে বাজি (১৯৫১) চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য লিখছিলেন কিংবা হুলচুল চলচ্চিত্রে অভিনয় করছিলেন, বলরাজ সাহনী কাজীকে গুরু দত্তের কাছে তার মাতাল অভিনয় প্রদর্শন করতে বলেছিলেন। মাতালিকার চরিত্রে কাজির অভিনয় দেখে গুরু দত্ত সন্তুষ্ট হয়ে তাকে সেই সময়ই বাজি চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য চরিত্রটি তাকে দিয়েছিলেন। এবং তার (গুরু দত্তের) প্রিয় স্কট হুইস্কির ব্র্যান্ডের নাম অনুসারে তার নাম জনি ওয়াকার রেখেছিলেন।
এরপরে, ওয়াকার দত্তের একটি মাত্র সিনেমা বাদে সমস্ত চলচ্চিত্রে নিয়মিত অভিনয় করেন এবং পরিচালক পর্দায় তাঁর জীবনের বাস্তব অভিজ্ঞতা ফুটিয়ে তুলতে উৎসাহিত করেছিলেন। তিনি মূলত কৌতুক চরিত্রের অভিনেতা ছিলেন তবে জীবনের শেষদিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েন, বলেছিলেন, "এর আগে কৌতুক অভিনেতাদের একটি সম্মানজনক অবস্থান ছিল এবং নায়কের সাথে প্রায় সমান্তরাল ভূমিকা ছিল, এখন এটি কেবল একটি হাস্যরস মাত্র"। জনি ওয়াকার এবং মিঃ কোয়ার্টুন চলচ্চিত্রে বীরত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব চিত্রিত করার ক্ষেত্রে তাঁর প্রচেষ্টা সফল না হলেও সিআইডি, পিয়াসা এবং চোরি চোরি' চলচ্চিত্রগুলি তাঁকে খ্যাতি এনে দেয়। '১৯৫০ এবং ১৯৬০ এর দশকের তিনি একজন তারকা অভিনেতা ছিলেন। তবে ১৯৬৪ সালে দত্তের মৃত্যু তার চলচ্চিত্র জীবনে প্রভাব ফেলে। তিনি বিমল রায় এবং বিজয় আনন্দ এর মতো পরিচালকদের সাথে কাজ করেছিলেন তবে ১৯৮০ এর দশকে তাঁর চলচ্চিত্র জীবন জৌলুস হারায়। তিনি কৌতুকের চাতুর্যহীন রূপটি গ্রহণ এবং অগ্রাধিকার পরিবর্তন করতে নারাজ ছিলেন, তিনি বলেছিলেন যে:
"সেই দিনগুলিতে আমরা ক্লিন কমেডি করতাম। আমরা সচেতন ছিলাম এবং এটা মনে রাখতাম যে চলচ্চিত্র দেখতে যে এসেছিল সে তার স্ত্রী এবং সন্তানদের নিয়ে এসেছে ... গল্পটি ছিল সবচেয়ে আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কোন গল্প বাছাই করার পরেই আবরার আলভী এবং গুরু দত্ত উপযুক্ত অভিনেতা খুঁজে নিতেন! এখন সব উল্টো ... এখন একজন বড় নায়ক লাইনে দাঁড় করায় এবং ফিট করার জন্য একটি গল্প খুঁজে নেয়। কৌতুক অভিনেতাদের একটি চরিত্র হয়ে ওঠার পথ বন্ধ করে দিয়েছে ... এখন কমেডি অশ্লীলতার কাছে জিম্মি হয়ে গিয়েছে। আমি ৩০০ টি ছবিতে অভিনয় করেছি এবং সেন্সর বোর্ড কখনও একটি লাইনও বা দৃশ্যও কাটেনি।"
জনি ওয়াকার বিশেষত বিআর চোপড়ার নয়া দৌড় (১৯৫৭), চেতন আনন্দের ট্যাক্সি ড্রাইভার (১৯৫৪) এবং বিমল রায়ের মধুমতি (১৯৫৮) এ তাঁর কাজ নিয়ে বিশেষভাবে সন্তুষ্ট ছিলেন। তার ১৪ বছর বিরতির দিয়ে তিনি তার শেষ ছবিটি মিসেস ডাবটফায়ার এর পুনঃনির্মাণ চাচী ৪২০ (১৯৯৭) এর মাধ্যমে পুনরায় কামব্যাক করেন।মধ্যবর্তী সময়কালে, তিনি মূল্যবান এবং আধা-মূল্যবান পাথরের সফল ব্যবসা করেছিলেন।
কিছু গান বিশেষত তাঁর জন্য রচিত হয়েছিল। বক্স অফিসে তার পর্দার শক্তি এমন ছিল যে বিতরণকারীরা সিনেমায় তার জন্য একটি গান রাখার জন্য জোর দিতেন এবং এটি নিশ্চিত করার জন্য অতিরিক্ত অর্থ দিতেন। তিনি একমাত্র অভিনেতা যিনি তাঁর নামে একটি ছবি করেছেন, জনি ওয়াকার। তিনি সেক্রেটারি/ম্যানেজার রাখা প্রথম বলিউড অভিনেতা ছিলেন। তিনিই প্রথম অভিনেতা যিনি রবিবারে কাজ করতেন না। তিনিই প্রথম অভিনেতা যিনি ট্যাক্সি ড্রাইভার চলচ্চিত্রের মাধ্যমে সাধারণ ভাষা ব্যবহারের রীতি নিয়ে এসেছিলেন। গায়ক মোহাম্মদ রফি অন্য কোনও অভিনেতার চেয়ে জনি ওয়াকারের জন্য সবচেয়ে বেশি গান করেছেন। তিনি ১৯৮৫ সালের পহুঞ্চে হুয়েয়ে লগ ছবিটি প্রযোজনা ও পরিচালনা করেছিলেন।
পারিবারিক জীবন
জনি ওয়াকার তার পরিবারের বিরোধিতা সত্ত্বেও শাকিলার বোন নূরকে (নূরজাহানের সংক্ষিপ্ত) বিয়ে করেছিলেন। তাদের তিন কন্যা ও তিন পুত্র ছিল, যার মধ্যে একজন অভিনেতা নাসির খান। তিনি ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় স্কুল ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন বলে দুঃখ প্রকাশ করেন, তিনি তার ছেলেদের স্কুলে পড়াশোনার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রেরণ করেছিলেন। মাতাল হয়ে প্রায়শই ভূমিকা পালন করা সত্ত্বেও জনি ওয়াকার একজন মদ্যবিমুখ ছিলেন এবং জীবনে কখনও মদ পান করেননি।
Post a Comment