অদ্ভুত ‘স্মোকড মমি’ রাখা হতো সমাধি ছাড়াই

 


ODD বাংলা ডেস্ক: মমির কথা বলা হলেই সাধারণত প্রাচীন মিশরের কথাই সবার স্মরণে আসে। তবে বিশ্বজুড়ে আরো অনেক প্রাচীন সংস্কৃতিতে মৃতদেহ মমি করার রীতি পাওয়া যায়। পাপুয়া নিউগিনির পূর্বাঞ্চলের পাহাড়ি এলাকায় আঙ্গা নামের এক উপজাতি বসবাস করে। বাইরের বিশ্বের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ খুবই কম। এই আঙ্গা উপজাতির লোকেরাই মৃতদেহ মমি করে রাখতো অদ্ভুত পদ্ধতিতে, যা ‘স্মোকড মমি’ নামে পরিচিত।

প্রাচীন সভ্যতার মমি করার রীতিগুলো থেকে জানা যায় মৃতদেহ আর্দ্রতা শূন্য করে শুষ্ক করা হতো। আর্দ্রতা অপসারণ না করলে মৃতদেহ সংরক্ষণ করা যায় যেতো না। তাতে পচন ধরত। প্রাচীন মিশরীয়রা মৃতদেহ বিশেষ পদ্ধতিতে শুষ্ক করতে পারতো। তবে আঙ্গা উপজাতির পদ্ধতিটা বেশ অদ্ভুত। তারা মৃতদেহ আগুনের উপরে উত্তপ্ত করে ও ধোঁয়ার সাহায্যে জল শূন্য করে মমি করতো। এজন্যই এগুলো ‘স্মোকড মমি’ নামে পরিচিত। আঙ্গার মমিগুলো অবশ্য ব্যান্ডেজ দ্বারা আবৃত করা হতো না এবং সমাধিতেও রাখতো না। ‘স্মোকড মমি’ উঁচু খোলা স্থানে রাখা হতো। বেশিরভাগ সময় তাদের পূর্বের বসবাসের স্থানে এগুলো রাখা হতো।


এই প্রক্রিয়ায় মৃতদেহের হাঁটু, কনুই, পা ও অন্যান্য জয়েন্টগুলো খুলে গেলেও পরে জোড়া লাগানোর ব্যবস্থা করতো। মৃতদেহ সম্পূর্ণ শুষ্ক করতে প্রায় এক মাস ধোঁয়ার মধ্যে রাখতো আঙ্গা উপজাতির লোকেরা। এসময় তারা ফাঁকা বাঁশের মাধ্যমে মৃতদেহের তরল পদার্থ বাইরে আসার ব্যবস্থা করে সংরক্ষণ করতো। পরবর্তীতে এই উপজাতির লোকেরা মৃতদেহের থেকে সংরক্ষিত তরল পদার্থ নিজেদের শরীরে ম্যাসেজ করতো। তাদের বিশ্বাস ছিল মৃতদেহের তরলের মধ্যমে তাদের শক্তি জীবন্ত শরীরে স্থানান্তরিত হয়।


আঙ্গা উপজাতির অদ্ভুত এসব রীতি সম্পর্কে প্রথম জানা যায় চার্লস হিগিনসন নামে এক ব্রিটিশ আবিষ্কারকের বর্ণনা থেকে। তিনি ১৯০৭ সালে এই উপজাতির উপর একটি ডকুমেন্টারি তৈরি করেছিলেন। সেখানেই তিনি ‘স্মোকড মমি’ সম্পর্কে বর্ণনা করেছিলেন। মৃতদেহ ধোঁয়ায় শুকানোর পর তারা আয়রন অক্সাইডের মাটির মতো একটি ফর্ম দ্বারা আবৃত করে দিতো, যা দেহগুলো সংরক্ষিত রাখতে সহায়তা করতো। 


‘স্মোকড মমি’র প্রথা বিশ শতকের মাঝামাঝি এসে বিলুপ্ত হয়। ১৯৪৯ সালে এই অঞ্চলে মিশনারিদের আগমন ঘটে এবং এর পর থেকেই মূলত আঙ্গাদের ‘স্মোকড মমি’ করার রীতি বন্ধ হয়ে যায়। তবে পূর্বের মমিগুলো এখনো তারা যত্ন সহকারে সংরক্ষণ করে রেখেছে। আঙ্গা উপজাতির অদ্ভুত এই ‘স্মোকড মমি’ পাপুয়া নিউ গিনির আসেকি জেলার বেশ কয়েকটি গ্রামে দেখা যায়।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.