হাজার বছরের অদ্ভুত মূর্তি ‘মোয়াই’

 


ODD বাংলা ডেস্ক: প্রশস্ত নাক, বড় চিবুক ও আয়তক্ষেত্রাকার আকৃতির কান। মুহূর্তেই চোখের সামনেই ভেসে ওঠে দৈত্যের চিত্র। অদ্ভুত আকারের মূর্তি এক হাজারের কাছাকাছি রয়েছে। সেসব অদ্ভুত মূর্তিকে বিশেষ একটি নামে ডাকা হয়, তা হলো ‘মোয়াই’। ‘মোয়াই’ মূর্তি তৈরির চমকপ্রদ পৌরাণিক কাহিনি রয়েছে। ‘মোয়াই’ মূর্তি নিয়েই আজকের আয়োজন।

‘মোয়াই’ মূর্তি উৎপত্তি


‘মোয়াই’ মূর্তি তৈরির ব্যাপারে নানা তথ্য পাওয়া যায়। ধারণা করা হয়, আনুমানিক ১২৫০ থেকে ১৫০০ সালের মধ্যে এগুলো নির্মিত হয়েছিল। প্রায় ৯০০ বছর আগে নির্মিত ‘মোয়াই’র সংখ্যা এক হাজারের কাছাকাছি। আমেরিকার আদি পলিনেশিয়ান জাতি রাপা নুই আদিবাসীদের হাত ধরেই সৃষ্টি হয় অদ্ভুত সব ‘মোয়াই’ মূর্তি।


যেখানে ‘মোয়াই’ মূর্তির সমারোহ


চিলির একটি দ্বীপ ‘ইস্টার আইল্যান্ড’। প্রশান্ত মহাসাগরীয় এই দ্বীপটিতে দক্ষিণ আমেরিকার আদি পলিনেশিয়ান জাতি রাপা নুইয়ের বসবাস ছিল। রাপা নুই নামের আদিবাসীরাই ‘ইস্টার আইল্যান্ড’ দ্বীপের বিভিন্ন স্থানে মোয়াই মূর্তি তৈরি করেছে। দ্বীপটির ইতিহাস সম্পর্কে বেশি কিছু জানা যায়নি। বর্তমানে দ্বীপটি ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের অন্তর্ভুক্ত।


মোয়াই মূর্তির আকার-অবস্থান


ইস্টার দ্বীপের মূর্তিগুলো বৃহৎ, প্রশস্ত নাক, বড় চিবুক রয়েছে। কানের আকৃতি আয়তক্ষেত্রাকার। এর উচ্চতা প্রায় ৪০ ফুট (১২ মিটার)। একেকটির ওজন ১৪ টনের কাছাকাছি। মূর্তিগুলো স্থানান্তর একটি বিস্ময়ের ব্যাপার। মূর্তিগুলো নির্মাণের পর বসানো হয়েছিল ‘আহু’ নামের পাথরের ওপর। এ আহুর সংখ্যা ইস্টার আইল্যান্ডে প্রায় তিনশ। একটি প্রচলিত ধারণা হলো, প্রাচীন পলিনেশিয়ানরা পাথরের মূর্তি কিংবা চিহ্ন দ্বারা স্বচ্ছ জলের উৎস চিহ্নিত করে রাখতো।


মূর্তিগুলোর মাথা ছাড়া বেশিরভাগ অংশ মাটির নিচে পুঁতা। পূর্ব পলিনেশিয়ার ইস্টার দ্বীপে রাপা নুই লোকেরা মনোলিথিক এ মানব মূর্তি খোদাই করেছিল। ‘মোয়াই’ মূলত সংকুচিত আগ্নেয়শিলায় খোদাইকৃত অনেকগুলো আবক্ষ মূর্তি। প্রত্যেকটি মূর্তি একেকটি আস্ত শিলা হতে খোদাই করা।


প্রায় সব মোইয়ের মূর্তির মাথার আকার তুলনামূলকভাবে বড়। পুরো মূর্তির প্রায় তিন-অষ্টম অংশ জুড়ে মাথা। এর মাথার অংশ বড় হওয়ার কারণ হিসেবে মনে করা হয়, তাদের প্রাচীন বিশ্বাসের সঙ্গে সম্পৃক্ততা রয়েছে। ‘মোয়াই’ হলো পলিনেশিয়া জুড়ে পাওয়া মূর্তির ফর্মগুলোর একটি প্রতিচ্ছবি। মানব চিত্রগুলো প্রথমে শৈল প্রাচীরের মধ্যে নির্মিত হয়। মূর্তিগুলোর মুখ উপকূলের দিকে করা। ‘মোয়াই’ মূর্তিগুলো রাপা নুইদেরই পূর্বপুরুষদের প্রতিকৃতি বলেও ভাবা হয়। 


বেশিরভাগ ক্ষেত্রে  মূর্তিগুলো সাধারণত মৃত পূর্বপুরুষদের প্রতিনিধিত্ব করলেও শক্তিশালী জীবিত বা প্রাক্তন প্রধানদের ও গুরুত্বপূর্ণ বংশের স্থিতির প্রতীকগুলোর মূর্ত প্রতীক হিসাবেও বিবেচিত হতো। এর আকার দেখে অনুমান করা হয় ইস্টার দ্বীপপুঞ্জের সংস্কৃতিতে সর্বকালের সেরা মূর্তির প্রতিযোগিতা প্রচলিত ছিল। বিভিন্ন আকারের মোয়াই থেকে এর প্রমাণ পাওয়া যায়।


নানা প্রতীকে বিভক্ত ‘মোয়াই’ মূর্তি


বেশিরভাগ প্রত্নতত্ত্ববিদের মতে, মূর্তিগুলো ধর্মীয়, রাজনৈতিক কর্তৃত্ব ও ক্ষমতার প্রতীক ছিল। তবে এগুলো শুধু প্রতীকের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। এগুলোর সঙ্গে আধ্যাত্মিক উপাদান থাকার বিশ্বাস ছিল তাদের। প্রাচীন পলিনেশীয় ধর্মাবলম্বীদের কাছে পাথর কিংবা কাঠের নির্মিত বস্তুর মধ্যে আধ্যাত্মিকতার অনুষঙ্গ ছিল।


প্রত্নতত্ত্ববিদদের মতে, মূর্তিগুলো প্রাচীন পলিনেশিয়ানদের পূর্ব পুরুষদের প্রতিনিধিত্ব করেছিল। ‘মোয়াই’য়ের মূর্তিগুলো সমুদ্র থেকে দূরে এবং গ্রামের দিকে মুখ করে যেন মানুষের নজর রাখছে। তবে সমুদ্রের দিকে মুখ থাকার নজিরও আছে। সমুদ্রের দিকে মুখ থাকা মূর্তিগুলো ভ্রমণকারীদের দ্বীপটি সন্ধান করতে সাহায্যের জন্য রাখা হয়েছিল। জনশ্রুতি আছে যে, সেখানে সাতজন পুরুষ ছিল যারা তাদের রাজার আগমনের জন্য অপেক্ষা করেছিল।


‘মোয়াই’য়ের সুস্পষ্ট ইতিহাস অজানা। এমনকি মূর্তিগুলোর খোদাইকারীদের সম্পর্কেও সঠিক তথ্য নেই। প্রচলিত কাহিনি থেকে ধারণা করা হয়, মোয়াই মূর্তির খোদাইকারীরা পলিনেশিয়ার কারুকর্মে উচ্চ অবস্থানে ছিলেন।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.