সঙ্গমে তৃপ্তি দিতে হাড় ভেঙে পালটানো হতো নারীদের পায়ের গঠন

 


ODD বাংলা ডেস্ক:  পায়ের আঙুলগুলো দুমড়ে-মুচড়ে ঢুকে গেছে পায়ের পাতায় নিচে। দেখলে মনে হতে পারে, কোনো দুর্ঘটনায় এমনটা হয়েছেন। তবে আদতে ব্যাপারটা তেমন নয়। বরং, ইচ্ছাকৃতভাবেই অস্ত্রোপচার করে বদলে ফেলা হয়েছে পায়ের আকার।

পায়ের পাতার গঠন দেখে নারীর চরিত্র যাচাই করা, বাংলার বহু প্রাচীন প্রথা। প্রথা না বলে তাকে অবশ্য কুসংস্কার বলাই চলে। ঠিক এইরকম রীতি প্রচলিত ছিল চীনেও। পায়ের পাতার আয়তনই ছিল মহিলাদের রূপ ও সৌন্দর্যের মাপকাঠি। সেই পুরুষতান্ত্রিকতা থেকেই জন্ম নেয় বর্বরোচিত পা ছোটো করার প্রথা। যার নাম (Practice)— ‘ফুট বাইন্ডিং’ বা ‘পা বাঁধা’ (Foot Binding)। চৈনিকদের কাছে ‘পদ্ম পা’ নামেও পরিচিত এই রীতি।


প্রায় তিন হাজার বছর আগের কথা। ১৭০০ থেকে ১০২৭ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত চীনে রাজত্ব ছিল শাং বংশের রাজাদের। ‘পা বাঁধা’ প্রথার প্রচলন হয় সেই সময়েই। সম্রাট ঝৌ-এর হাত ধরে এ প্রথা শুরু হয় । শাং রানি আক্রান্ত ছিলেন ক্লাবফুট রোগে। তাঁর শারীরিক অস্বাভাবিকতাকে ঢাকতেই নর্তকীদের পা বাঁধা বাধ্যতামূলক করেছিলেন সম্রাট। ক্রমশ চৈনিক সমাজের মধ্যে সেই রীতি হয়ে ওঠে সৌন্দর্য ও আভিজাত্যের প্রতীক।


তবে এই সবটাই লোককথা। ‘পা বাঁধার’ প্রথম লিখিত ইতিহাস পাওয়া যায় চীনের ট্যাং বংশের রাজত্বকালে। সেই সময়ই ‘পদ্ম পা’-এর প্রচলন ছড়িয়ে পড়েছিল গোটা চীনে।


তৎকালীন সমাজের ধারণা ছিল, ‘পা বাঁধা’ প্রক্রিয়ার কারণে আকর্ষণীয় হয় মহিলাদের যৌনাঙ্গ। সঙ্গমে তাঁরা বিশেষভাবে তৃপ্তি দিতে পারেন পুরুষদের। সেই কারণেই প্রায় সমস্ত মহিলাদেরই বাধ্যতামূলকভাবে যেতে হত এই অমানবিক প্রথার মধ্যে দিয়ে। পায়ের আয়তন মাত্র ৪ ইঞ্চির মধ্যে আটকে রাখার চেষ্টা চলত প্রবলভাবে। শুধু স্বাভাবিকতা নষ্টই নয়, পা বাঁধার এই প্রক্রিয়াও ছিল যথেষ্ট কষ্টসাধ্য এবং অমানবিক।


মাত্র তিন থেকে চার বছর বয়সেই চৈনিক কিশোরীরা সাক্ষী হতেন এই বর্বরতার। পায়ের পাতা রেশমের দড়ি দিয়ে মুড়িয়ে বেঁধে রাখা হত সেই বয়স থেকে। হাড় নরম করার জন্য বিভিন্ন ভেষজ ওষুধ, গরম জল এবং পশুর রক্তে ভিজিয়ে রাখা হত তাঁদের পা। তারপর পালা অস্ত্রোপচারের। তাও সম্পূর্ণ অবৈজ্ঞানিক পথে। ছেনি-হাতুড়ি দিয়ে ভেঙে ফেলা হত পায়ের প্রতিটা আঙুল। কখনো কখনো পায়ের পাতার মাঝের হাড়ও দু’ টুকরো করে ব্যান্ডেজ দিয়ে মুড়ে ফেলা হত সমস্ত পা। ব্যবস্থা ছিল না কোনো ড্রেসিং-এর। কয়েক বছর এই অবস্থাতেই চলাফেরা করতে হত মহিলাদের। করতে হত সমস্ত কাজ। ফলে, সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার ঘটনা ঘটত হামেশাই। আবার ইচ্ছাকৃতভাবে ব্যান্ডেজের মধ্যে কখনো ঢুকিয়ে দেওয়া হত কাচের টুকরো বা লোহার আলপিন। যাতে দ্রুত পচন ধরে, খসে পড়ে পায়ের আঙুল। শুধু কৈশোর নয়, আজীবনই তাঁদের বয়ে বেড়াতে হত সেই যন্ত্রণা।


চীনের প্রাচীন ইতিহাস অনুযায়ী প্রায় ৪০০ কোটিরও বেশি মহিলাদের সাক্ষী হতে হয়েছিল এমন ভয়াবহ অভিজ্ঞতার। সপ্তাদশ শতকের মাঞ্চু বংশের রাজত্বকালে প্রথম নিষিদ্ধ করা হয় এই প্রথা। তাছাড়াও বিক্ষিপ্তভাবে চীনের বিভিন্ন অংশেও ছোটো ছোটো সাম্রাজ্যে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল এই প্রথার ওপরে। তবে তারপরেও থেমে যায়নি এই চল।


উনবিংশ শতকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ‌‌‌পদ্ম পা ছিল প্রায় ৪০ শতাংশ চৈনিক নারীদের। পরবর্তীতে পশ্চিমা শক্তির আগমনে বদলে যায় এই পরিস্থিতি। এ বিষয়টির তীব্র বিরোধিতা করে সমাজ সংস্কারকরা। ১৯১২ সালে আইন করে চীন সরকার বন্ধ করে ‘পদ্ম পা’ প্রথা। তবে প্রান্তিক অঞ্চলে, প্রশাসনের নজর এড়িয়ে কোথাও কোথাও মানা হতো এই রীতি। আজও  সেই প্রথার প্রমাণ হয়ে বেঁচে আছে বহু নারীরা।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.