ডোডো পাখির নিকটতম আত্মীয় অবর্ণনীয় এই কবুতর



 ODD বাংলা ডেস্ক:  অবিশ্বাস্য সুন্দর একটি কবুতর হচ্ছে নিকোবর কবুতর। এদেরকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর কবুতর হিসেবে ধরা হয়। অনেকের কাছে এরাই পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর পাখি। তবে এরা পৃথিবীর সবচেয়ে দুর্লভ আবং দামি কবুতরগুলোর মধ্যেও অন্যতম। তবে এদের পাকস্থলীতে এক ধরনের দামি পাথর রয়েছে। আর সেই পাথরই এদের জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। এছাড়াও এই কবুতরগুলো রহস্যময় ডোডো পাখির একমাত্র নিকটতম আত্মীয়। 

কবুতরগুলোর মূল আবাস হচ্ছে আমাদের নিকটবর্তী বঙ্গোপসাগরের নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে। তবে মিয়ানমার, থাইল্যান্ড এবং মালয়েশিয়ার কিছু দ্বীপে এদেরকে দেখতে পাওয়া যায়। কবুতরগুলোর মূল আকর্ষণ হচ্ছে এদের ঝলমলে পালক। নীল, সবুজ এবং তামাটে, এই তিন রঙের ঝলমলে পাকলই এদেরকে এতোটা আকর্ষণীয় করে তুলেছে। তবে এদের শরীরের সবচেয়ে উজ্জল পালক হচ্ছে লেজে থাকা সাদা ধবধবে পালকগুলো। 


কবুতরগুলোর পালকগুলো এরকম উজ্জ্বল থাকার একটি রহস্য রয়েছে। সেটা হচ্ছে অন্য কবুতরের মতো এরা অন্য হিংস্র প্রাণী দ্বারা শিকার হয় না। যার কারণে ছদ্মবেশ ধারণ করার জন্য এদেরকে কোনো নির্দিষ্ট কোনো রং ধারণ করতে হয় না। ফলাফল স্বরূপ, এদের পালকগুলো মুক্তভাবে রং ধারণ করতে পারে। তবে শুধুমাত্র ঝলমলে পালকের মধ্যেই এদের সৌন্দর্য শেষ হয়ে যায় না। 


একটু মনোযোগ দিয়ে তাকালে দেখতে পারবেন, এদের লালচে পাগুলো বেশ আকর্ষণীয় হয়ে থাকে। তবে কবুতরগুলোর সৌন্দর্যের জন্যই এরা বেশি শিকার হয়ে থাকে। এছাড়া এদের পাকস্থলীতে এক ধরনের দামি পাথর পাওয়া যায়। যা দামি গয়না তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। তাই চোরাকারবারীরা এদেরকে হত্যা করে সেগুলো সংগ্রহ করে। অন্য সব কবুতরের চেয়ে এই কবুতরগুলোর বেশ কিছু পার্থক্য রয়েছে। যেমন অন্য কবুতরেরা উড়ার সময় এলোমেলোভাবে উড়তে থাকে। কিন্তু এরাই পৃথিবীর একমাত্র কবুতর যারা একসঙ্গে সারি বেঁধে উড়তে থাকে। 


ভোরবেলা কিংবা ঘন কুয়াশাতে উড়ার সময় এরা সামনের কবুতরের লেজের সাদা পালকের দিকে নজর রেখে লাইন মেইনটেইন করে। প্রাপ্তবয়স্ক কবুতরের লেজের পালকে সাদা বর্ণ দেখা যায়। তবে অপ্রাপ্তবয়স্ক কবুতরের লেজে এরকম রং থাকে না। এই কবুতরগুলো একদিক থেকে অন্য দিকে উড়াউড়ি করে। যদিও এরা খুব দ্রুত উড়তে পারে। তবুও অলস প্রকৃতির। যার কারণে যেখানে খাবার পায় সেখানেই বসবাস শুরু করে।


বিভিন্ন ফল এবং ফলের বিচি এদের প্রধান খাদ্য। এরা বিপদ এবং কোলাহল এড়াতে পছন্দ করে। যেসব জায়গায় মানুষ বা অন্য কোনো হিংস্র প্রাণী থাকে না সেখানে এরা বসবাস করে। এই কবুতরগুলো বিখ্যাত ডোডো পাখির নিকটতম আত্মীয়। যদিও এরা ডোডো পাখির মতো দেখতে না। ডোডো পাখি কয়েক মিলিয়ন বছর আগে আফ্রিকা থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। তবে দুঃখজনকভাবে এই কবুতরগুলোও বিলুপ্তির পথে। তবে এদের বিলুপ্তির কারণ একটু অদ্ভুত। 


এদের মূল আবাস বঙ্গোপসাগরের নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে। অতীতে এই দ্বীপে কোনো প্রকার হিংস্র প্রাণী থাকতো না। তবে মানুষ সেখানে যাওয়ার পর তাদের সঙ্গে ইঁদুর এবং বিড়াল জাতীয় প্রাণী সেখানে নিয়ে যায়। আর এই ইঁদুর, বিড়াল জাতীয় প্রাণীগুলো এই কবুতরগুলো খেতে শুরু করে। যার কারণে দ্রুত এই কবুতরগুলোর সংখ্যা কমতে থাকে। 


তবে নিকোবর দ্বীপ ছাড়াও মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, কাম্বোডিয়া এবং ভিয়েতনামেও এদের দেখতে পাওয়া যায়। সম্প্রতিকালে অস্ট্রেলিয়ার উত্তর অঞ্চলে এদের দেখতে পাওয়া গিয়েছে। এদের সংখ্যা দ্রুত কমে যাওয়ার কারণে আইইউসিএন এদেরকে তালিকা ভুক্ত করেছে।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.