স্পেনের প্রাগৈতিহাসিক গুহাচিত্রে নিয়ান্ডারথালদের ছবি আঁকার প্রমাণ মিলল

 


ODD বাংলা ডেস্ক: বর্তমান মানব সভ্যতা কিন্তু আদিমকালে এমন ছিল না। একথা সবারই কমবেশি জানা। আদিম মানবের বিভিন্ন প্রজাতি পেরিয়ে তবে আজকের হোমো স্যাপিয়েন্সদের আগমন। আর এই যাত্রাপথে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নিয়ান্ডারথাল মানুষরা। তবে নিয়ান্ডারথালরা যে হোমো স্যাপিয়েন্সদের থেকে বিচ্ছিন্ন কোনো গোত্রের ছিল না।

আজ থেকে ৪২ হাজার বছর আগে পৃথিবীর মেরুদ্বয়ের প্রান্ত বদলের কারণেই অতিকায় স্তন্যপায়ী প্রজাতি মেগাফনা ও নিয়ান্ডারথাল মানবরা বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। নিয়ান্ডারথাল প্রজাতি প্রাগৈতিহাসিক যুগের মানবজাতির সঙ্গে কতটা সাদৃশ্যপূর্ণ, তা নিয়ে এখনো রয়েছে নানা বিতর্ক। কিন্তু সম্প্রতি স্পেনে পাওয়া গুহাচিত্র প্রমাণ করে দিয়েছে যে, নিয়ান্ডারথালদের মধ্যেও শিল্পের প্রতি অনুরাগ ছিল! আর এটিই আদিম মানুষের পূর্বপুরুষদের সঙ্গে নিয়ান্ডারথালদের নৈকট্য আরও এক ধাপ এগিয়ে এনেছে।


স্পেনের দক্ষিণাঞ্চলের প্রদেশ মালাগার কাছেই অবস্থিত 'কেইভস অফ আর্দালেসে'র স্ট্যালাগমাইটস (গুহার মেঝে থেকে ওপরের দিকে উঠে যাওয়া পাথুরে স্তম্ভ বিশেষ) এর উপর রেড ওকার নামক রঙের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। 


গবেষকদের মতে, এটি ৬৫ হাজার বছর আগে নিয়ান্ডারথাল মানবদের আঁকা। আর তাই যদি হয়, তাহলে তারাই হবে পৃথিবীর প্রথম শিল্পী। প্রসিডিংস অফ দ্য  ন্যাশনাল একাডেমি অফ সায়েন্সেস (পিএনএএস)-এ প্রকাশিত এক গবেষণায় রোববার এসব তথ্য প্রকাশ করা হয়।


এরকম দাবি করার পেছনে কারণ হলো, গুহাচিত্রগুলো যখন আঁকা হয়েছে; তখনো আধুনিক মানুষ এই পৃথিবীতে বসতি গড়ে তুলতে পারেনি। প্রায় ৪০ থেকে ৪২ হাজার বছর আগে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া নিয়ান্ডারথাল যে হোমো স্যাপিয়েন্সদের থেকে বিচ্ছিন্ন কোনো গোত্রের ছিল না, নতুন এ গবেষণা তা প্রমাণ করে।


মালাগার এই গুহার ভেতরের চিত্রগুলো ১৫ থেকে ২০ হাজার বছর সময়কালের ব্যবধানে বিভিন্ন সময়ে আঁকা হয়। এর আগে একই গুহা পর্যবেক্ষণ করে গবেষকরা জানিয়েছিলেন যে, চিত্রগুলো হয়তোবা প্রাকৃতিক অক্সাইডের কারণে তৈরি হয়ে গেছে। কিন্তু এবার তারা সেই বক্তব্যকে নাকচ করে দিয়ে জানান, এগুলো আসলে মানুষেরই আঁকা।


পিএনএএস গবেষণার একজন লেখক, জোয়াও জিলহাও বলেন, "লালচে বাদামিরঙা ওকার পিগমেন্টেশনের মাধ্যমে স্ট্যালাগমাইটসে ছবিগুলো আঁকা হয়েছে। খুব সম্ভবত কোনো রীতির আনুষ্ঠানিকতার অংশ হিসেবে তারা ছবিগুলো আঁকে।"


তিনি আরও বলেন, "মূল বিষয়টা হলো, এই উদ্ভাবনের ফলে নিয়ান্ডারথালদের প্রতি আমাদের মনোভাব বদলে যাবে। মানবজাতির সঙ্গে তাদের সত্যিই ভালো যোগসূত্র রয়েছে। সাম্প্রতিক কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, তারা বিভিন্ন বস্তু পছন্দ করতো। মানুষের সঙ্গেও তারা সঙ্গম করেছে। আর এখন আমরা দেখাতে পারবো যে তারা ছবিও আঁকতো।" এর আগে ফ্রান্সের শোভে-পঁ দা'র্ক গুহায় প্রাগৈতিহাসিক যুগের মানুষের আঁকা দেয়ালচিত্র পাওয়া যায়; যা ছিল ৩০ হাজার বছরেরও বেশি পুরানো।


মানুষের বিভিন্ন প্রজাতির মধ্যে নিয়ান্ডারথালদের সম্পর্কেই সব থেকে বেশি তথ্য পাওয়া গিয়েছে। ১৮৫৬ সালে জার্মানির নিয়ান্ডারথাল উপত্যকা থেকে পাওয়া এক ফসিলের নাম জায়গার নামে রাখা হয় নিয়ান্ডারথাল মানুষ। নিয়ান্ডারথালদের সঙ্গে সাধারণ মানুষদের সাদৃশ্য রয়েছে অনেকটাই।


জেনেটিক গবেষণা থেকে জানা গেছে, আমাগের ডিএনএ’র সঙ্গে অনেকটাই মিল রয়েছে তাদের। কিন্তু ইউরোপ ও এশিয়ায় বসবাসকারী নিয়ান্ডারথালরা কেন আজ থেকে প্রায় ৪০ থেকে ৪২ হাজার বছর আগে বিলুপ্ত হয়েছিলো তা আজও স্পষ্ট নয়। নানা মত রয়েছে। এমনকী, হোমো স্যাপিয়েন্সদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় ঠিকতে না পেরে হারিয়ে যাওয়ার থিয়োরিও রয়েছে। কিন্তু এবার সম্পূর্ণ এক ভিন্ন দাবি করতে দেখা গেলো বিজ্ঞানীদের।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.