সঙ্গী পেতে রোমান্টিক মাছ পাফার ফিশের বাহারি কাণ্ড
ODD বাংলা ডেস্ক: প্রাণী জগতে রোমান্টিক পশু-পাখির সংখ্যা খুব একটা কম নয়। সঙ্গীর মন পেতে তারা কত কিছুই না করে থাকে। অনেক মাছও সঙ্গীর সঙ্গে মিলিত হতে বিশেষ রীতি মেনে নানা প্রকার অঙ্গভঙ্গি করে থাকে। তবে কোনো মাছ সঙ্গীর মন পেতে একেবারে বাহারি বাসা তৈরি করে রাখে- এমন কিছু জানলে একটু অবাকই হতে হয়। এমনই অবিশ্বাস্য কাণ্ড করে রোমান্টিক মাছ পাফার ফিশ। এমনকি রোম্যান্সের জন্য প্রতিবারই নারী সঙ্গীকে আকর্ষণ করতে নতুন বাসা তৈরি করে।
পাফার ফিশ, ব্লো ফিশ নামেও পরিচিত। এটি এক ধরণের সামুদ্রিক মাছ। তবে এর কিছু প্রজাতি মিঠা জলেও বাস করে। এগুলো বিশ্বের অন্যতম রোম্যান্টিক প্রাণী হিসাবে বিবেচিত হয়। পাফার ফিশ বেলুন মাছ নামেও পরিচিত, যা ভারতে স্থানীয় ভাবে পটকা মাছ হিসেবে পরিচিত। এরা দেহের মধ্যে জল ঢুকিয়ে নিজেদেরকে বেলুনের মতো ফুলিয়ে ফেলতে পারে বলেই এদের ‘বেলুন মাছ’ নামেও আখ্যায়িত করা হয়।
সাধারণত, পাফার ফিশ হুমকির মুখে পড়লে কিংবা ভয় পেলে দেহের ভেতরে জল ঢুকিয়ে দেহকে বেলুনের মতো ফুলায়। তারা একই সঙ্গে শরীরের তীক্ষ্ণ লম্বা কাঁটাগুলো খাড়া করে রাখে। এর ফলে তাদের শত্রু আক্রমণ না করে ভয়ে পালিয়ে যায়। পৃথিবীর প্রায় সব সাগরেই পাফার ফিশের দেখা মেলে। এদের বসবাস ও বিচরণ সাধারণত সমুদ্রের শিলাময় তলদেশে। এ মাছের কিছু প্রজাতি বিষাক্ত।
তবে তাদের রোমান্টিক বৈশিষ্ট্যে এটি কিছু যায় আসে না। পুরুষ পাফার ফিশের খুব অনন্য বৈশিষ্ট্যটি হলো, এরা প্রাণীরাজ্যের সর্বাধিক উদযাপন শিল্পীদের একটি। রোমান্টিক এ মাছ নারী সঙ্গীদের আকর্ষণ করতে সমুদ্রের তলে সুন্দর নকশার বাসা তৈরি করে।
বেশ কয়েকটি প্রজাতির মধ্যে সাধারণত সাদা দাগযুক্ত পাফার ফিশ অনন্য সঙ্গম রীতি প্রদর্শনীর জন্য পরিচিত। এ প্রজাতির পুরুষ মাছ সঙ্গীর সঙ্গে মিলিত হতে বালিতে বড়, জ্যামিতিক বৃত্ত তৈরি করে। বৃত্তগুলো মূলত তারা তৈরি করে নারী সঙ্গীদের আকর্ষণ করতে। নারী সঙ্গীকে আকর্ষণ করার জন্য পুরুষদের অবশ্যই এ বৃত্ত তৈরি করতে হয়।
রোমান্টিক এ মাছের পুরুষ প্রজাতি শুধু বৃত্তের বাসা তৈরি করেই নারী সঙ্গীর মন পায় না। সেগুলো সঙ্গীর পছন্দ মতো হতে হয়। পুরুষ প্রজাতি এমন বৃত্ত তৈরির পর নারী মাছগুলো তার মূল্যায়ন করে। বাসা পরখ করে দেখে মনের মতো হলেই নারী পাফার ফিশ মিলিত হওয়ার জন্য পুরুষদের বেছে নেয়।
এই কাঠামোগুলো সাধারণত সমুদ্রের ১০-৩০ মিটার গভীরতায় তৈরি করে। বৃত্তাকার কাঠামোগুলোর ব্যাস হয় সাধারণত ৬ ফুট।। পুরো কাঠামো তৈরি হয় জ্যামিতিকভাবে, যা তৈরি করতে সময় লাগে ৭ থেকে ৯ দিন। তাদের নীড়ের বাইরের রিংটি উঁচু ঢিবির মতো দেখতে হয়। খাঁজগুলো একটি সিরিজ নিয়ে গঠিত। এর কেন্দ্রের বাইরের অংশ অতি যত্নের সঙ্গে খুব সূক্ষ্ম বালি কণা দিয়ে গঠিত হয়।
কাঠামোটি সম্পূর্ণ করতে একটি মাছের কয়েকটি ধাপ অনুসরণ করতে হয়। পেট ব্যবহার করে বালিতে সরল বৃত্তের আকার তৈরি করে কাঠামো তৈরি শুরু করে। এটি সম্পূর্ণ হয়ে গেলে মাছটি নীড়ের বাইরের দিক থেকে নীড়ের ভেতরে সোজা রেখায় সাঁতার কাটার সময় তার পাখনা, ডানা দিয়ে উঁচু ঢিবি ও চুড়া তৈরি করে। পেছনের পাখনা নাড়ানোর সময় কেন্দ্রটি গঠিত হয়। চলাচলের মাধ্যমে খুব সূক্ষ্ম বালির কণা কেন্দ্রে সরায়।
এখন অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগতে পারে নারী মাছগুলো এই বাসা দেখেই কেন পুরুষ সঙ্গীকে পছন্দ করে? এ প্রশ্নের একেবারে সঠিক উত্তর না পাওয়া গেলেও অনেকগুলো সম্ভাব্য কারণ ধারণা করা হয়। এগুলোর মধ্যে রয়েছে বৃত্তের আকার, বালির গঠন, রঙ প্রভৃতি দেখে নারী মাছ পুরুষের দেহের আকারের পূর্বাভাস পায়। এ কাঠামো থেকে মাছের স্বাস্থ্য সম্পর্কেও জানতে পারে। বৃহত্তর পুরুষ মাছগুলো ছোটদের তুলনায় বালু বেশি দূরে ধাক্কা দিয়ে ফেলতে পারে। ছোট পুরুষের নীড়ের তুলনায় বাইরের রিং কাঠামোর মধ্যে আরো বেশি জায়গা তৈরি করে বড় মাছগুলো। নারী পাফার ফিশ এ পার্থক্যগুলো দেখে শনাক্ত করতে পারে যে, সে কার সাথে মিলিত হতে চায়।
কোনো নারী এই কাঠামো দেখে পুরুষ সঙ্গীর সঙ্গে মিলিত হওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে নীড়ের তলায় নেমে যায়। এর পর পুরুষ পাফার ফিশ তার কাছে এসে মিলিত হয়। এখানেই ডিম ফুটিয়ে তারা বড় করে। এভাবে পাফার ফিশ একে অপরকে ভালবাসার জন্য দীর্ঘ সময়ের জন্য অপেক্ষা করে। ডিম এবং সঙ্গীকেও শিকারিদের থেকে রক্ষা করে জন্য পুরুষ মাছটি। তারা একটি বাসা একাধিক বার ব্যবহার করে না। প্রতিবারই নারী সঙ্গীকে আকর্ষণ করতে নতুন বাসা তৈরি করে।
Post a Comment