শুভ্র সাদা বক : জল জুড়ে যার জীবনচক্র

 


ODD বাংলা ডেস্ক: ‘পুঁটি মাছ পাই না। একটা যদি পাই, অমনি ধরে গাপুস গুপুস খাই।’ ছোট বেলায় এ ছড়া আমরা অনেকেই পড়েছি। এ ছড়ার লাইনের মতোই শিকারের অপেক্ষায় থাকা বকের দৃশ্যও আমরা অনেকে দেখেছি। পুটি বা ছোট মাছ পেলেই গাপুস-গুপুস খায় সে। জল জুড়েই চলে তার জীবনচক্রের খুনসুটি।  

গত তিন থেকে চার দশক আগেও বিশাল বকের ঝাক দেখা যেত। তবে এখন আর আগের মতো ততোটা বক চোখে পড়ে না।


বক হচ্ছে আর্ডেইডি গোত্রের অন্তর্গত লম্বা পা বিশিষ্ট মিঠাজলের জলাশয় ও উপকূলীয় অঞ্চলে বসবাসকারী মৎস্যভোজী জলচর পাখি। এরা দলগতভাবে বসবাস করে তাকে। তাইতো ওরা অনেক দম্পতি মিলে গাছের মগডাল দখল করে। সেথানে বাসা বানিয়ে ডিম পাড়ে।


পৃথিবীতে স্বীকৃত মোট ৬৪ প্রজাতির বক রয়েছে। তবে ভারতে ১৮ প্রজাতির বক বসবাস করে। এর মধ্যে ছোট বক, মাঝলা বক,শৈল বক, ধুপনি বক, দৈত্যবক, ধলাপেট বক, লালচে বক, বড় বক, গোবক, চীনা কানিবক, দেশি কানিবক, খুদেবক, কালামাথা নিশিবক, মালয়ী নিশিবক, খয়রাবক, হলদে বক, কালো বক, বাঘা বক ইত্যাদি দেখা যায়। বকের এসব নাম মূলত গ্রামীণ স্থানীয় মানুষের দেওয়া।


বিশ্বেজুড়ে বকের বিস্তৃতি থাকলেও নিরক্ষীয় ও ক্রান্তীয় অঞ্চলে এদের বিস্তৃতি বেশি। তবে মরু ও মেরু অঞ্চলে বক অনুপস্থিত।


জলচর এ পাখির ঠোঁট খুব সরু, সোজা, লম্বা ও তীক্ষ্ণ, গলা খুব চিকন। প্রজননকালে দেহের পেছনে এবং কোনো প্রজাতির ক্ষেত্রে বুক ও মাথায় বাড়তি পালক গজায়। তাদের শরীরে সাদার প্রাধান্য বেশি থাকে।


সাধারণত বিল, হ্রদ, নদী, জলাভূমি, মৌসুমি প্লাবনভূমি, ধানক্ষেত, লবণ চাষের জমি, মোহনা, জোয়ার-ভাটার খাঁড়ি ও প্যারাবনে বিচরণ থাকে বকের। অগভীর জলে ধীরে ধীরে হেঁটে ওরা শিকার খোঁজে।


আবাসস্থলে বছরের নয় মাস বসবাস করে বক। শুকনো মৌসুমে সাধারণত খাদ্যের সংকটে আবাসস্থল ছেড়ে দূরে চলে যায়। নদীনালা, খালবিল, হ্রদ, প্লাবনভূমি, জলাভূমি, ধানক্ষেত, সেচের এলাকায় তারা খাদ্য সংগ্রহ করে। আবার নদীনালা জলে ভরলে তারা ফিরে আসে আবাসস্থলে।


গ্রামে গ্রামে স্থানীয় অসাধু কিছু শিকারীদের ফাঁদে প্রতিদিন মারা পড়ছে বক। এতে ছানা বকগুলো অকালে প্রাণ হারাচ্ছে। পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় পাখি শিকার নিষিদ্ধ হলেও তা মানছে না শিকারীরা। এতে নষ্ট হচ্ছে জীববৈচিত্র্য। ফলে প্রতিনিয়ত কমে যাচ্ছে বক।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.