স্বামীকে ফাঁকি দিয়ে ১০ বছর পরকীয়া, তারপর..!

ODD বাংলা ডেস্ক: জার্মানি ওয়ালবুর্গা ওয়েসটেরেইচ, যার ডাকনাম ছিলো ডলি। তিনি বিয়ে করেছিলেন উইলিয়াম নামে আমেরিকার একজন ধনী কাপড় ব্যবসায়ীকে। ডলির স্বামী থাকতেও পরকিয়া জড়িয়ে পড়েন। সেই প্রেমিকের নাম ছিলো ওট্টো। এই ত্রিকোণ প্রেম ঘিরে এক সময় এক অদ্ভুত ঘটনা সামনে আসে।
স্বামী এবং প্রেমিক ওট্টোর সঙ্গে ১০ বছর একই ঘরে থাকতেন ডলি। তবে মজার বিষয় ছিল ১০ বছরের একটি দিনও তার স্বামী সে সত্য জানতে পারেননি। ঘরের মধ্যে ওট্টোকে এমন একটি জায়গায় লুকিয়ে রেখেছিলেন ডলি, যে কোনোদিন তৃতীয় ব্যক্তির উপস্থিতির আঁচটুকুও পাননি তিনি।

তাদের বাড়ির চিলেকোঠায় এই ১০ বছর লুকিয়ে ছিলেন ওট্টো। স্বামী উইলিয়াম কাজে বেরিয়ে গেলেই ডলির কাছে নেমে আসতেন তিনি। উইলিয়াম আসামাত্রই আবার নিজের জায়গায় চলে যেতেন।
ডলির পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভাল ছিল না। ১২ বছর বয়সে তিনি উইলিয়ামের কাপড়ের কারখানায় কাজে যোগ দেন। সুন্দরী এবং বুদ্ধিমতী ডলির প্রতি খুব সহজেই কারখানার পুরুষকর্মীরা আকৃষ্ট হতেন। উইলিয়ামও ব্যতিক্রম ছিলেন না। ১৭ বছর বয়সে উইলিয়ামকে বিয়ে করেন তিনি। ১৯১৩ সালে ডলির বয়স যখন ৩৩ বছর, স্বামী উইলিয়ামই তখন তার সঙ্গে ১৭ বছরের ওট্টো সানহুবারের পরিচয় করিয়ে দেন।

ওট্টোও ছিলেন উইলিয়ামেরই কারখানার এক কর্মচারী। তিনি জামাকাপড় সেলাই করতেন। একবার ডলির সেলাই মেশিন খারাপ হয়ে গিয়েছিল। তখনই ওট্টোকে বাড়িতে পাঠিয়েছিলেন উইলিয়াম। প্রথম পরিচয় থেকেই একে অপরের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েছিলেন তারা। মাঝেমধ্যেই সেলাইয়ের অজুহাতে ওট্টোকে বাড়িতে ডেকে পাঠাতে শুরু করলেন ডলি। উইলিয়াম বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলেই ডলির কাছে আসতে শুরু করলেন ওট্টো।

প্রতিবেশীদের কাছে তিনি ওট্টোকে নিজের দূর সম্পর্কের ভাই বলে পরিচয় দিয়েছিলেন। তা সত্ত্বেও বিষয়টি প্রতিবেশীরা ভালোভাবে নিচ্ছিলেন না। সেই কারণে ওট্টোকে বাড়িতে লুকিয়ে রাখাই শ্রেয় মনে করেন ডলি। ডলির প্রেমে এতটাই পাগল ছিলেন ওট্টো যে কারখানার কাজ ছেড়ে তিনি প্রেমিকার বাড়িতে পাকাপাকিভাবে থাকতে চলে আসেন। বাড়ির ছোট্ট চিলেকোঠায় ঠাঁই হয় তার।

সারারাত চিলেকোঠায় থাকা আর উইলিয়াম বেরিয়ে গেলেই নিচে নেমে আসা। এই ছিল তার জীবন। পুরো বিষয় সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজ্ঞ ছিলেন উইলিয়াম। ১৯১৮ সালে স্ত্রী ডলিকে নিয়ে লস অ্যাঞ্জেলস চলে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন তিনি।

ওট্টো এবং ডলি পড়েন মহা সমস্যায়। কিন্তু বুদ্ধিমতী ডলি ঠিক একটি উপায় বের করে নেন। লস অ্যাঞ্জেলসেও এমন একটি ঘর তিনি বেছে নেন, যার চিলেকোঠা রয়েছে। ডলি এবং উইলিয়াম নতুন বাড়িতে চলে যাওয়ার কিছুদিন পর ওট্টোও সেখানে গিয়ে আগের মতোই থাকতে শুরু করেন।

এভাবে ১০ বছর কেটে যায়। ওট্টোর উপস্থিতি বিন্দুমাত্র টের পাননি উইলিয়াম। এক রাতে স্ত্রী ডলির সঙ্গে তার কথা কাটাকাটি শুনে পিস্তল হাতে নিচে নেমে আসেন ওট্টো। উইলিয়ামকে গুলি করে খুন করেন তিনি। পুলিশের কাছে ঘটনাটিকে ডাকাতির রূপ দিয়েছিলেন ডলি।

স্বামীর মৃত্যুর পর এক আইনজীবী তার হয়ে মামলা লড়েছিলেন, তার সঙ্গেও সম্পর্কে জড়ান ডলি। পরে ডলির কিছু আচরণ তার সন্দেহের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আইনজীবীর সঙ্গে সম্পর্কে থাকাকালীন রয় ক্লাম্ব নামে আরও এক প্রেমিক জুটে গিয়েছিল তার।

রয়কে তিনি স্বামীকে খুন করা ওই পিস্তল লুকিয়ে রাখতে বলেছিলেন। অজুহাত দিয়েছিলেন, ওই পিস্তলটি নাকি খুনে ব্যবহার করা পিস্তলের মতোই দেখতে। পুলিশ তাকে তাই অহেতুক সন্দেহ করতে পারে।

পরবর্তীতে রয়ের সঙ্গে পরিচয় হলে তার থেকে সবটা শুনে এবং ডলির কথাবর্তার মধ্যে অসঙ্গতি লক্ষ্য করে পুলিশের কাছে যান ওই আইনজীবী। পুলিশ পিস্তল উদ্ধার করে।

স্বামীকে খুনের অভিযোগে ডলি গ্রেফতার হন। জেলবন্দি ডলি আইনজীবী প্রেমিকের কাছে সেসময় বাড়ির চিলেকোঠায় থাকা ‘ভাই’ ওট্টোর দেখভালের অনুরোধ করেছিলেন।

কিন্তু চিলেকোঠার দরজা খুলে ওট্টোর সঙ্গে পরিচয় হওয়ার পর আইনজীবী পুরো ঘটনাটি জানতে পারেন। ওট্টো আসলে তার প্রেমিক এবং কীভাবে তারা দু’জনে উইলিয়ামকে খুন করেছিলেন, সবটা জেনে ফেলেছিলেন তিনি।

ওট্টো এবং ডলি দু’জনের বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণও হয়। পরবর্তীতে জেল থেকে ছাড়া পেয়ে ওট্টো নিজের নাম বদলে কানাডায় চলে যান। সেখানে অন্য এক মহিলাকে বিয়ে করেন তিনি। অন্যদিকে ডলি লস অ্যাঞ্জেলসেই থাকতেন। ১৯৬১ সালে ৮০ বছর বয়সে তার মৃত্যু হয়।

তাদের নিয়ে একাধিক ছবি হয়েছে। ‘দ্য ব্লিস অব মিসেস ব্লসম’, ‘দ্য ম্যান ইন দ্য অ্যাটিক’। ২০১৭ সালে ইনভেস্টিগেশন ডিসকভারির ‘এ ক্রাইম টু রিমেম্বার’ সিরিজে ডলি এবং ওট্টোর কাহিনী সম্প্রচারিত হয়েছে।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.