জমির উর্বরতা বাড়াতে নিজেদের অন্তর্বাস মাটিতে পুঁতছেন কৃষকেরা
ODD বাংলা ডেস্ক: আদিকালে গুহাবাস থেকেই মানুষ সবজি এবং শাক পাতা খাওয়া শুরু করেছিল। তখন অবশ্য বুনো মটর, শিম খাওয়া শেখে মানুষ। ধীরে ধীরে হাতিয়ার তৈরি এরপর জমি চাষ এবং বীজ বপন। চাষাবাদের শুরু বহুকাল আগে থেকেই। এখনো বিশ্বের বিভিন্ন দেশ কৃশির উপরই নির্ভরশীল। আয়ের প্রধান উৎস কৃষি। এজন্য মাটির উর্বরতা ধরে রাখা এবং বৃদ্ধির জন্য অনেক কিছুই আবিষ্কার করেছেন অনেকে।
তবে মাটির স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য অন্তর্বাস এর ব্যবহার! এমন কোনো ইতিহাস খুঁজে পাওয়া যাবে না কোথাও। এবার অবাক করার মতো এমনই কাজ করেছে একদল বিশেষজ্ঞ। তাদের মতে, আপনার ব্যবহৃত শতভাগ সুতি অন্তর্বাস আপনার আশপাশের মাটির স্বাস্থ্য পরীক্ষায় দারুণ ভূমিকা রাখতে পারে।
আর তাই ছাত্র-শিক্ষক থেকে শুরু করে শতশত কৃষক এখন তাদের অন্তর্বাস বা জাঙ্গিয়া মাটিতে পুঁতে রাখে। আট সপ্তাহ পর সেটা আবার মাটি খুঁড়ে তুলে দেখা হয় কতটুকু আস্ত আছে। এটি মূলত আমেরিকায় শুরু হওয়া ‘সয়েল ইউর আন্ডিস’ নামক একটি নাগরিক বিজ্ঞান প্রকল্পের অংশ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শুরু হলেও বর্তমানে অস্ট্রেলিয়া নিউজিল্যান্ডের বাসিন্দারাও পাল্লা দিয়ে মাটির স্বাস্থ্য পরীক্ষায় নেমেছেন।
সাধারণত সুতা তৈরির কাঁচামাল হলো তুলো যা কিনা চিনি জাতীয় একপ্রকার সেলুলোজ থেকে উৎপন্ন হয়। আর তাই মাটিতে অবস্থানকারী বিভিন্ন উপকারী জীবাণু ও কীট-এর জন্য সুতি কাপড় বেশ সুস্বাদু নাস্তা। মাটি পুঁতে রাখা অন্তর্বাস নির্দিষ্ট সময় পর মাটি খুড়ে বের করার পর তার অবস্থা মাটিতে অবস্থানকারী মাইক্রোবায়োমের স্বাস্থ্য নির্দেশ করে। যদি কাপড়ের খুব বেশি অংশ অবশিষ্ট না থাকে তবে তবে মাটি স্বাস্থ্যকর। আর যদি সেটি বেশিরভাগ অক্ষত থাকে, তবে মাটির স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করা উচিত।
নিউ সাউথ ওয়েলস-এর ইউনিভার্সিটি অব নিউ ইংল্যান্ডের স্কুল অব এনভারয়নমেন্ট অ্যান্ড রুরাল সায়েন্সের একজন সিনিয়র লেকচারার অলিভার নক্স। তিনি কটনইনফো নামে এক অস্ট্রেলীয় কটন ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে কাজও করছেন। তিনিই মূলত এই প্রকল্পের উদ্যোক্তা। তিনি এবং তার অস্ট্রেলীয় সহকর্মী স্যালি ডিকিনসন মিলে ৫০ জন কৃষককে প্রথমে তাদের অন্তর্বাস বিজ্ঞানের স্বার্থে মাটিতে পুঁততে বলেন।
সে বিষয়ে একটু মজা করেই নক্স বলেন, আমরা তো কেবল বলেছিলাম তাদেরকে মাটিতে জাঙ্গিয়া পুঁততে। কিন্তু তারা রীতিমতো প্রতিযোগীতায় মেতে ওঠে কার বাগানের মাটি কত স্বাস্থ্যকর কাপড় পুঁতে সেই পরীক্ষা করতে। স্বাস্থ্যকর মাইক্রোবায়োম মাটির স্বাস্থ্যকে উন্নত করে। এটি মাটির উর্বরতা বাড়িয়ে গাছের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। গাছের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, স্বাস্থ্যকর মাইক্রোবায়োম ফসলের পুষ্টিগুণও বাড়াতে সাহায্য করে।
নক্স আরো বলেন, কৃষকদের এই বিজ্ঞান প্রকল্পে যুক্ত করে ভালো সুফল পাচ্ছি। যেসব কৃষক বা উৎপাদনকারী তাদের মাটির স্বাস্থ্য পরীক্ষায় আশানুরূপ ফল পাচ্ছে না তারা তাদের জমি নিয়ে আরও উদ্যোগী হয়ে উঠেছে। মাটির স্বাস্থ্য ফেরানোর জন্য নানান পদক্ষেপ নিচ্ছে তারা। এই প্রকল্পে মানুষের ওই চেষ্টাই সবচেয়ে ভালো লাগে আমার।
এখন তো কৃষকদের থেকে স্কুল পর্যায়েও ছড়িয়ে পড়েছে সয়েল ইওর আন্ডিস প্রকল্প। স্কুলের বাচ্চারও এই প্রকল্পে মহানন্দে অংশ নিচ্ছে। যেখানে-সেখানে অন্তর্বাস পুঁতে মাটির স্বাস্থ্য পরীক্ষায় নেমে পড়ছে তারা। নিউজিল্যান্ডের ওটাগো শহরের স্কুলগুলোর শিক্ষার্থীরাও এই প্রকল্পে অংশ নিয়েছে। তারা মহা উৎসাহে পায়ের নীচের মাটি কতটা স্বাস্থ্যকর তা জানতে পরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছে। সরকারের অর্থায়নে সয়েল ইওর আন্ডিস পাইলট প্রকল্পের আওতায় ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে থেকে ৬টি স্কুলে মাটির স্বস্থ্য পরীক্ষার এই কাজ শুরু হয়। এরপর আস্তে আস্তে তা আরও বিস্তৃত হয়েছে।
প্রকল্পটি থেকে ভবিষ্যতের জন্য শিক্ষা
মজার কিন্তু কার্যকরী এই প্রকল্প থেকে মাটিকে আরও উর্বর করতে পরিচর্যা অব্যাহত থাকবে। আর স্কুলের বাচ্চাদের এতে অন্তর্ভুক্ত করার ফলে তারা ছোট থেকেই পরিবেশ নিয়ে ভাবতে শিখবে আর তা রক্ষায় ভূমিকা রাখবে।
উদাহরণস্বরূপ অস্ট্রেলিয়ার আর্মিডেল ওয়ালড্রফ স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একটি দল এই প্রকল্পে অংশ নিয়ে স্কুলের খেলার মাঠে ও বাগানে অন্তর্বাস পুঁতে রেখেছিল। সেখানে দেখা গেছে মাঠের মাটি কম উর্বর। কেন না সেখানে প্রচুর পা পড়ে। মাটিও তুলনামূলক বেশি শক্ত। তাই সেখানে মাইক্রোবায়োমের সংখ্যা কম ছিল। এটা বুঝতে পারার পর শিক্ষার্থীরা স্কুলমাঠের এক অংশের মাটিকে অর্গানিক উপায়ে স্বাস্থ্যকর করার কাজ শুরু করেছে।
নক্স বলেন, এই প্রকল্পে অংশ নেয়া প্রতিটি শিশুই যত বড় হবে তত তার আশপাশের মাটি তথা পরিবেশ নিয়ে বেশি বেশি ভাববে এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় সচেষ্ট হবে। নক্সের প্রায়ই বাচ্চাদের একটা প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়। সেটা হলো মাটিতে কেন অন্তর্বাসই পুঁততে হবে?
নক্স বলেন, এ বিষয়ে আমার অভিমত হলো- ভালো কোয়ালিটির আন্ডারগার্মেন্টেসে শতভাগ সুতা ব্যবহার করা হয়। আর মাটির স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য সুতি কাপড়ই প্রয়োজন আমাদের। সুতি কাপড় না হলে তা মাইক্রোবায়োম খায় না। এর ফলে একদিকে যেমন প্রকৃত সুতি কাপড় চিনতে সুবিধা হবে তেমনি যা কিছু পরিবেশবান্ধব তা ব্যবহারে মানুষের আগ্রহ বাড়বে।
Post a Comment