সিরিয়ায় বিশ্বের প্রাচীনতম সামরিক সমাধির সন্ধান

 


ODD বাংলা ডেস্ক:  প্রাচীন সভ্যতার ইতিহাস ঘাটলে বোঝা যায় যে, বিংশ শতাব্দীতে এসে মানব সভ্যতার উন্নতি কয়েকগুণ বেশি। তবে আমাদের প্রাচীন সভ্যতা কেমন ছিল তা জানার জন্য প্রতিনিয়ত কাজ করে চলেছেন প্রত্নতাত্ত্বিকরা। দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা আর অনুসন্ধানের পর বেরিয়ে আসছে একের পর এক সভ্যতার চমকপ্রদ সব তথ্য। সেই সময়কার মানুষের খ্যাদ্যাভ্যাস, জীবনযাপন, সংস্কৃতি, রীতিনীতি সব কিছুই। 

এর আগে প্রাচীন অনেক সমাধি ক্ষেত্রের সন্ধান পেয়েছেন নৃতত্ত্ববিদরা। যার মধ্যে সবচেয়ে প্রাচীন সমাধি পাওয়া যায় এক শিশুর। আফ্রিকার এক গুহায় ছিল সেই শিশুর সমাধি। তবে সম্প্রতি পাওয়া গেছে প্রাচীন সামরিক সমাধি। সিরিয়ার অতি প্রাচীন প্রত্নক্ষেত্র ‘হোয়াইট মনুমেন্ট’।  গবেষকদের মতে, এই সমাধিক্ষেত্রটি আনুমানিক ৪ হাজার ৪০০ বছরের পুরনো। তাল বানাত শহরের এই স্থাপত্য দেখতে প্রতি বছর ভিড় জমান লাখ লাখ মানুষ। তবে এর নিচেই যে আরো এক বিস্ময় চাপা পড়ে ছিল, সেই খবর এতদিন জানতেন না কেউই। 


সম্প্রতি হোয়াইট মনুমেন্টের নিচে সন্ধান পাওয়া গিয়েছে একটি একটি বহু প্রাচীন সমাধিক্ষেত্রের। ঐতিহাসিকদের মতে সমাধিস্থ প্রত্যেকেই ছিলেন কোনো একটি জনগোষ্ঠীর সৈন্যবাহিনীর সদস্য। কোনো এক যুদ্ধের সময় মৃত্যু হয় তাদের। আর তারপরেই এই সমাধিক্ষেত্রে তাদের মৃতদেহগুলো শায়িত হয়। ঐতিহাসিকদের মতে, এটিই সবচেয়ে প্রাচীন সামরিক স্মৃতির নমুনা।


যুদ্ধবিগ্রহের ইতিহাস মানুষের সমাজে নতুন নয়। সভ্যতার অনেক আগে থেকেই নানা গোষ্ঠীর মধ্যে বা একক মানুষের মধ্যে যুদ্ধ চলে আসছে। কিন্তু ঠিক কবে থেকে যুদ্ধে নিহত সৈনিকদের রাজকীয় অন্ত্যেষ্টির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, সেটা জানা যায় না। তবে সাম্প্রতিক এই আবিষ্কারে সেই ইতিহাস এক ধাক্কায় অনেকটাই পিছিয়ে গেল। কেমব্রিজের ‘অ্যান্টিকুইটি’ পত্রিকায় প্রকাশিত গবেষণাপত্র অনুযায়ী এই সমাধিক্ষেত্রের বয়স আনুমানিক ৪ হাজার ৪০০ বছর। আর মৃতদেহগুলো সম্ভবত তার থেকেও বেশ কয়েক বছরের পুরনো। যুদ্ধের সঙ্গে সঙ্গেই সৈন্যদের সমাধিস্থ করা হয়নি বলেই মনে করছেন টরোন্টো ইউনিভার্সিটির গবেষক অ্যানে পোর্টার। 


অধ্যাপক পোর্টার ও তার দলের বাকি সদস্যদের মতে, এখনও এই সমাধিক্ষেত্রের ইতিহাস সম্পর্কে অনেক কিছুই জানা বাকি। প্রতিটি সমাধির গায়ে মেসোপটেমিয় হরফে যে বাক্যগুলো লেখা আছে, তাও সব পড়া সম্ভব হয়নি। তাছাড়া এই মৃত সৈন্যরা জয়ীদের নাকি পরাজিত দলের, সেটাই জানা যায়নি এখনও। শুধু যা জানা গিয়েছে, তা হল সমাধিস্থ করার আগে দীর্ঘদিন মৃতদেহগুলো সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছিল। আর যুদ্ধে নানা ধরনের ধাতব অস্ত্রের ব্যবহারের পাশাপাশি ঘোড়ায় টানা রথের ব্যবহারও শিখেছিলেন দুই পক্ষই। সামগ্রিকভাবে ব্রোঞ্জ যুগের সময়কার এই ঘটনা সম্মন্ধে হয়তো ভবিষ্যতে আরও নানা তথ্য জানা যাবে। সেইসঙ্গে সিরিয়ার নানা অংশে আরো যে কত প্রাচীন ইতিহাস ছড়িয়ে আছে, তাও জানা নেই কারোরই। অচিরেই সব সামনে আসবে সবার। রচিত হবে নতুন এক ইতিহাসের পাতা।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.