হিমালয় পর্বতমালায় লুকায়িত রয়েছে রহস্যময় ১০ হাজার গুহা!

 


ODD বাংলা ডেস্ক:  বিশ্বের অন্যতম প্রত্নতাত্ত্বিক রহস্য যেন লুকিয়ে আছে নেপালের হিমালয় পাহাড়ে। এই পর্বতমালার উপরে এবং ঢালে রয়েছে অসংখ্য গুহা। এর সংখ্যা প্রায় ১০ হাজারের কাছাকাছি। 

অবাক করা বিষয় হলো, এসব গুহা মানবসৃষ্ট। অনেকের মনেই হয়ত প্রশ্ন জাগতে পারে, প্রাচীন এই কাঠামো কারা তৈরি করেছিল? কিংবা কেন তৈরি করেছিল? 


নেপালের মুস্তাং জেলার উপত্যকায় এই সব মানবসৃষ্ট প্রাচীন গুহার অবস্থান। ১৯৯০ এর দশকের মাঝামাঝি সময় নেপাল এবং জার্মানির কোলন বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল প্রত্নতত্ত্ববিদ হিমালয় পর্বতমালায় সমতল থেকে ১৫৫ ফুট উপরের গুহাগুলো নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। তারা সেখানে কয়েক ডজন মানুষের দেহাবশেষের সন্ধান পান। গবেষণার মাধ্যমে জানা যায়, এসব কঙ্কাল দুই হাজার বছরেরও বেশি পুরনো। 


পরবর্তী সময়ে আরো কয়েকটি গবেষণা দল নেপালের ওই হিমালয় অঞ্চলে গবেষণা চালায়। অতঃপর ২০১০ সালে এক গবেষণা দল সেখান থেকে ২৭ টি নতুন মানব দেহাবশেষের সন্ধান পায়। যেগুলো খ্রিষ্টীয় তৃতীয় থেকে অষ্টম শতাব্দীর মধ্যকার। নেপালের প্রত্যন্ত ‘আপার মুস্তাং’ অঞ্চলের এই গুহাগুলোকে গবেষকদের অনেকে জায়ান্ট স্যান্ডক্যাসেলের সঙ্গে তুলনা করেছেন।


প্রত্যন্ত অঞ্চলের এই প্রাচীন লুকায়িত গুহার আকার আকৃতি বেশ রহস্যজনক। গুহায় পৌঁছানো এবং প্রবেশ করা দুটিই বিপজ্জনক। উপর থেকে শিলা পাথর পড়ে কিংবা ছিটকে পড়ে আহত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে সব সময়। চারপাশের পরিবেশ এবং বিপজ্জনক পথ দেখে গবেষকরা সত্যিই অবাক হয়েছিলেন যে, প্রাচীনকালে কীভাবে এই গুহাগুলো তৈরি করেছিল এবং বসবাসের জন্য সেখানে পৌঁছেছিল?


দুর্গম এই সব গুহার বেশিরভাগ থেকেই গবেষকরা কোনো নিদর্শন পায়নি। কিছু গুহা থেকে অবশ্য মানুষের বসবাসের নিদর্শনের সন্ধান মিলেছে। ঘুমানোর স্থান, চুলা এবং শস্য রাখার পাত্রও পাওয়া গিয়েছে বেশ কিছু গুহা থেকে। এখান থেকে দ্বাদশ থেকে চতুর্দশ শতাব্দীর মূল্যবান বৌদ্ধ চিত্রকর্ম, ভাস্কর্য, পাণ্ডুলিপি এবং অসংখ্য নিদর্শনের সন্ধান মিলেছে। 


প্রত্নতাত্বিক বিভিন্ন নিদর্শন থেকে গবেষকরা সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন, এই গুহাগুলো কালক্রমে বিভিন্নভাবে ব্যবহৃত হয়েছে। তিনটি প্রধান সময়কাল চিহ্নিত করে এর ব্যবহার সম্পর্কে বলা হয়েছে। খ্রিষ্টপূর্ব এক হাজার অব্দ থেকে গুহাগুলো সমাধি হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়। 


গবেষকদের ধারণা, সেসময় এই অঞ্চলে পর্বতের উপর সমাধিস্থল তৈরির রীতি প্রচলিত ছিল। খ্রিষ্টীয় ১০ শতাব্দীতে বসবাসের স্থান ছিল। সেসময় সংঘাত থেকে বাঁচার জন্য নিরাপদ স্থান হিসেবে বিবেচিত হয়েছিল গুহাগুলো। তবে খ্রিষ্টীয় ১৪ শতকে এগুলো মেডিটেশন চেম্বার ও সামরিক স্থানে পরিণত হয়েছিল।


প্রাচীনকালে গুহাগুলো ঠিক কী কারণে তৈরি করা হয়েছিল তা এখনো অজানাই রয়ে গিয়েছে। তবে এই প্রত্নতাত্ত্বিক সাইট নিয়ে গবেষণা অব্যাহত। ১৯৯৬ সালে ইউনেস্কো এই অঞ্চলটি টেন্টেটিভ সাইট হিসেবে তালিকাভুক্ত করে। 

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.