চিৎকার করে গান গায় বিশ্বের সবচেয়ে নিঃসঙ্গ তিমি!
ODD বাংলা ডেস্ক: গল্পের শুরু ১৯৮৯ সালে। শত্রু সাবমেরিন শনাক্ত করতে মার্কিন নৌবাহিনীর নির্মিত সোসাস নামক হাইড্রোফোনের একটি বিন্যাস কিছু অদ্ভুত আওয়াজ শনাক্ত করে। পরে আবিষ্কৃত হয়, সেগুলো তিমির গান ছিল।
শব্দগুলো নীল তিমির গানের শব্দের মত হলেও এই তিমির গানের মধ্যে একটি বিরাট পার্থক্য ছিল। তার গানগুলো প্রত্যেকবার ৫ থেকে ৬ সেকেন্ড স্থায়ী হত।
এর কণ্ঠস্বর ছিল অন্য সব তিমিদের চেয়ে একেবারে আলাদা। যেখানে অন্য তিমিরা যোগাযোগের জন্য ১০ থেকে ৪০ হার্জ কম্পাঙ্কের শব্দ ব্যবহার করে, সেখানে এই তিমি ৫২ হার্জ কম্পাঙ্ক উৎপন্ন করে। তাই তিমির এই প্রজাতিটির নামও দেয়া হয়েছে ‘৫২ কিলোহার্টজ তিমি’।
অনেক বছর ধরে ৫২ কিলোহার্টজ তিমিদের গান শোনা গেলেও সমুদ্র ভ্রমণকারীরা কেউ একে দেখতেও পেতেন। আবার কেউ দেখতে পেতেন না। কারণ হুট করে জলের উপরে লাফ দিয়েই আবার ডুবে যেত তারা।
এই তিমিটিকে বলা হয়ে থাকে ‘বিশ্বের সবচেয়ে নিঃসঙ্গ তিমি’। তার কারণ, এর গান অন্য কোনো তিমির মতো নয়। সে প্রশান্ত মহাসাগর জুড়ে একা একা চড়ে বেড়ায়, প্রলাপ বকে, কখনো কখনো চিৎকার করে কাঁদে। অন্য তিমিদের মতো তার কোনো বন্ধু কিংবা বান্ধবী নেই। এমনকি কোনো পরিবারও নেই। তিমিটি পুরুষ না মহিলা বা কার জন্য এভাবে কাঁদতো তা কেউই জানে না। তবে অনেকের ধারণা এটি মেয়ে তিমি।
বিশ্বের সবচেয়ে নিঃসঙ্গ এই তিমির গান নিয়ে চলেছে অনেক অনুমান। কিছু কিছু ক্ষেত্রে গবেষকরা এর ব্যাখা অনুসন্ধান করার চেষ্টাও চালিয়েছেন।
২০০৯ সালে প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়েছে, শুধু প্রশান্ত মহাসাগরেই নয়, বিশ্বজুড়ে গভীর সমুদ্রগুলোতে ৫২ কিলোহার্টজ নীল তিমিদের গান শোনা গেছে। ১৯৬০ সালের পর থেকে নীল তিমিরা গানের শব্দের মাত্রা বাড়িয়েছে। যার উদাহরণ উত্তর আটলান্টিকের তিমিদের স্বরের কম্পাঙ্ক ক্রমবর্ধমান হয়েছে।
এক গবেষণায় এর কারণ সম্পর্কে এটাও অনুমান করা হয়েছে যে, মানুষের শিকারে পরিণত না হতেই নীল তিমিরা তাদের স্বরকে ক্রমশ গভীর করছে। এ ধরনের হুমকি প্রতিরোধে ৫২ কিলোহার্টজ কম্পাঙ্কের শব্দ বা গান নীল তিমিদের মূল অস্ত্র বলেও মনে করেন তারা।
এই তিমি সম্পর্কে ম্যাসাচুসেটসে উডস হোল ওশানোগ্রাফিক ইনস্টিটিউশন- এর সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী গবেষক বিল ওয়াটকিন্স তার মৃত্যুর আগে একটি সঠিক গবেষণা দিয়ে গেছেন। নেভির করা রেকর্ডিং শুনে তিনি এই গবেষণা করেন। যেখানে তার কাছে ৫২ হার্জ কম্পাঙ্ক মানে অস্বাভাবিক নয় বরং অনন্য।
এছাড়া ২০১৩ এর দিকে ব্রিটিশ ম্যাগাজিন দ্যা এক্সপ্রেস দাবি করে, তিমির এই অস্বাভাবিক শব্দের মানে হচ্ছে ভালবাসার খোঁজ সে বন্ধ করেছে।
তবে কোনো কোনো বিজ্ঞানীর ধারণা এ তিমি হয়তো একাই থাকতে চায়। তার কোনো সঙ্গীর প্রয়োজন বোধ হয়নি। এ জন্যই সেই অন্য তিমির কান পর্যন্ত তার গান পৌঁছাতেই দেয় না।
আবার কেউ কেউ ধারণা করছে কোনো তিমিই তাকে শুনতে পায় না। তার প্রত্যেকটা আকাঙ্ক্ষার ডাকের কোনো উত্তর সে পায় না। তার কান্নার ধ্বনি কেউ শুনতে পায় না। প্রত্যেক গান শেষে সে পূর্বের চেয়ে আরো দুঃখী ও হতাশ হয়ে যাচ্ছে। তবে এই তিমি নিয়ে গবেষণা এখনো চলছে।
এদিকে এ ধরনের নীল তিমি খুঁজে বের করে তার ওপরে তথ্যচিত্র, চলচ্চিত্র এবং গানের পূর্ণাঙ্গ রেকর্ডিং তৈরির লক্ষ্যে প্রশান্ত মহাসাগরে বিশাল বাজেটের অভিযান চলছে।
Post a Comment