আমাদের দেশে মাছ চাষের ব্যবসা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর সবচেয়ে বড় কারণ হল মাছের চারা ও প্রযুক্তিগত যন্ত্রপাতির সহজলভ্যতা। এছাড়াও মাছ চাষের ব্যবসা থেকে কম সময়ে ভালো লাভ করা যায়। একবার মাছের পুকুর তৈরি হয়ে গেলে তা সারাজীবনের আয়ের বড় উৎস হয়ে ওঠে। তবে মাছের রোগ সম্পর্কে জানা দরকার যাতে কোনো সমস্যা না হয়। এই ব্যবসায় আর্থিক ক্ষতি হতে পারে যদি আপনি মাছের রোগ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল না থাকেন। তাহলে চলুন জেনে নিই মাছের প্রধান রোগ ও তার প্রতিকার সম্পর্কে।
Saprolegniasis -এ রোগে মাছের শরীরে তুলোর বলের মতো বাদামি রঙের দাগ দেখা যায়।
চিকিৎসা- এই রোগ প্রতিরোধের জন্য মাছকে লবণের দ্রবণে (৩ শতাংশ পরিমাণ) বা কপার সালফেট দ্রবণে ২-৫ মিনিট ডুবিয়ে রাখুন। এটি প্রতিরোধ করার আরেকটি উপায় আছে। এর জন্য পুকুরে ম্যালাকাইট (১ গ্রাম ৫-১০ লিটারে) দিন।
ব্যাঞ্চিওমাইকোসিস- এ রোগে মাছের ফুলকা পচতে শুরু করে। এ কারণে তার দম বন্ধ হয়ে আসে। ফলে মাছ বারবার মুখ খোলে ও বন্ধ করে। এই রোগের প্রতিকার নাহলে মাছও মারা যেতে পারে।
চিকিৎসা- এর প্রতিরোধের জন্য চুন (৭০ থেকে ১০০ কেজি প্রতি হেক্টর) ব্যবহার করতে হবে। এ ছাড়া সেই অনুযায়ী কপার সালফেট (হেক্টর প্রতি ৮ কেজি) জলে দিতে হবে।
আরও পড়ুন ঃ বিনামূল্যে মাছ চাষ প্রশিক্ষণের জন্য শীঘ্রই আবেদন করুন, কোথায় এবং কিভাবে পড়ুন?
পাখনা/লেজ পচা
লক্ষণ- এ রোগে মাছের পাখনা ও লেজ পচতে শুরু করে। যদিও শুরুতে মাছের পাখনায় শুভ্রতা থাকে।
চিকিৎসা- ফলিক এসিড ও ইমাকিল ওষুধ (১০ মিলি % ১০০ লিটার পানি) প্রতিদিন খাবারের সঙ্গে খেতে হবে। এই সময়ে, ১% পরিমাণ অ্যাক্রিফ্লাভিন দুই বা তিনবার যোগ করুন।
আলসার- আলসার রোগে মাছের শরীরে ক্ষত দেখা দিতে থাকে, মাছের শরীরে কোনো ধরনের ক্ষত দেখা দিলে তা আলসার রোগ হতে পারে।
চিকিৎসা- মাছের আলসার রোগের চিকিৎসার জন্য পুকুরে পটাশ ও চুন দিতে হবে। এছাড়া সিফেক্সের এক লিটার দ্রবণও তৈরি করে জলে দেওয়া যেতে পারে।
ড্রপসি- এই রোগের উপসর্গ সম্পর্কে বলতে গেলে মাছের অভ্যন্তরীণ অঙ্গ ও পেটে জল জমে থাকে।
চিকিৎসা- ড্রপসি রোগ প্রতিরোধের জন্য মাছকে সঠিক খাবার দিতে হবে। এছাড়া পুকুরে চুন (হেক্টর প্রতি ১০০ কেজি) দিতে হবে।
প্রোটোজোয়ান রোগ- এই রোগে মাছের ফুলকা এবং শরীরে সূক্ষ্ম দাগ তৈরি হয়।
চিকিৎসা- এর চিকিৎসার জন্য মাছকে ফরমালিন দ্রবণে ১০ মিনিট রাখতে হবে।
চোখের রোগ- এ রোগে মাছের চোখ প্রায়ই লাল হয়ে যায় এবং ফুলকা বিবর্ণ হয়ে যায় এবং চোখ পড়ে যায়।
চিকিৎসা- এর চিকিৎসার জন্য মাছকে খাবারের সঙ্গে টেরামাইসিন এবং স্ট্রেপ্টোমাইসিন ইনজেকশন দিতে হবে।
সাদা দাগ- এ রোগে মাছের শরীরে সূক্ষ্ম দানা পড়ে।
চিকিৎসা- এর চিকিৎসার জন্য মাছকে ফারগিলানের দ্রবণ দিয়ে ৭ দিন রেখে দিতে হবে।
আরও পড়ুনঃ কাতলা মাছ চাষ করলে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত আর্থিক সহায়তা পাবেন মাছ চাষীরা
ট্রাইকোডিনোসিস - মাছের শ্বাসকষ্ট হয়, ফলে অস্থির হয়ে পুকুরের পাড়ে শরীর ঘষতে থাকে।
চিকিৎসা- এর চিকিৎসার জন্য কপার সালফেট, লবণের দ্রবণ বা ফ্রি ফরমালিন ব্যবহার করা যেতে পারে।
Coccitiosis- এ রোগে মাছের শ্বাস নিতে কষ্ট হয়।
চিকিৎসা- এর চিকিৎসার জন্য ফরমালিনের দ্রবণে ১০ দিন রাখতে হবে।
ড্যাক্টিলোগারুলোসিস- এই রোগটি শরীর এবং ফুলকাকে প্রভাবিত করে। মাছের শরীরে কালো রঙের কোষ তৈরি হয়।
চিকিৎসা- ড্যাকটাইলোগারিলোসিস থেকে মাছকে বাঁচাতে মাছকে পটাশে ৫ মিনিট রাখতে হবে।
অন্যান্য রোগ- এগুলি ছাড়াও মাছের ডিপ্লোস্টোমিয়াসিস, অ্যারুগুলাসিস, ল্যারিনিয়াসিস-এর মতো রোগও রয়েছে, যেগুলোর সঠিক সময়ে চিকিৎসা করা খুবই জরুরি।
Post a Comment