কর্মস্থলে সুখী না? জেনে নিন কাজ উপভোগের এই ৩ উপায়!


 

ODD বাংলা ডেস্ক: মহামারির সময়ে চাকরি ছেড়ে দেওয়াটা একটি প্রথাতেই পরিণত হয়ে গেছে। গত দুই বছরে সারা বিশ্বে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন লাখ লাখ চাকরিজীবী । অসুখী কর্মজীবীদের চাকরি ছাড়ার এই মিছিলকে বলা হয়ে থাকে 'দ্য গ্রেট রেজিগনেশন'। 


তবে হ্যাঁ,  চাকরি ছেড়ে দেওয়াটা কখনোই চূড়ান্ত সমাধান না। উত্তরের চেয়ে তখন আপনি আরও বেশি প্রশ্নের মুখে পড়েন। যেমন: কোনো কাজ ছাড়া কতদিন টিকে থাকতে পারবেন? ছেড়ে দেওয়া কর্মস্থলে কেন অখুশি ছিলেন? কাজের পরিবেশ কেমন হলে আপনি সন্তুষ্ট হবেন? বর্তমান অবস্থা থেকে কীভাবে সেই কাঙ্ক্ষিত কর্মস্থলে জায়গা করে নিবেন আপনি? 


হার্ভার্ড বিজনেস স্কুলে একটি আলাদা কোর্স রয়েছে "লিডারশিপ অ্যান্ড হ্যাপিনেস" নামে। স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের জন্য প্রযোজ্য এই কোর্সের প্রবক্তা  আর্থার ব্রুকসের মতে, সুখ আসে "পরিবার, বন্ধু, অর্থপূর্ণ কাজ এবং বিশ্বাস বা জীবন দর্শন" থেকে। এই কোর্সে কর্মজীবনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কীভাবে নিজের সুখী সত্তাকে পরিচালিত করতে হয়, তা শিখিয়ে থাকেন ব্রুকস। 


ব্রুকস ও হার্ভার্ড বিজনেস স্কুলের পরামর্শ অনুযায়ী এই প্রতিবেদনে তিনটি পন্থাকে খুঁজে বের করা হয়েছে, যেগুলো অনুসরণ করে কর্মস্থলে নিজেকে সন্তুষ্ট ও সুখী রাখতে পারবেন আপনি- 


১. কোন কর্মস্থল আপনাকে সুখী করবে, তা খুঁজে বের করুন


অনেকে অল্প বয়সেই সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয় তারা জীবনে কী করতে চায়। কলেজে থাকাকালীন বা এর আগেই তারা জেনে যায় ডাক্তার, আইনজীবী, প্রফেসর বা অন্য কোন পেশায় যেতে হবে তাদের।


বাকিদের এই সিদ্ধান্ত নিতে বেশ পরিশ্রম করতে হয়। কোন কাজ বা পেশা আমাকে সুখী করবে, তা বাছাই করতে আমাকেও অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। কবি, ডাক্তার ও স্থপতি; এই তিনটি পেশা গ্রহণ করা চেষ্টা করেও বাতিল করেছি আমি। এরপর স্ট্র্যাটেজি কনসালট্যান্ট হওয়ার ব্যাপারে মনস্থির করি আমি।


এই অভিজ্ঞতা থেকে যা শিখেছি তা হচ্ছে, কোন ক্যারিয়ার গ্রহণ করবেন সে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আপনার উচিত সেই ক্যারিয়ার সংশ্লিষ্ট মানুষজনের সঙ্গে কথা বলা এবং সংশ্লিষ্ট কোর্স ও ইন্টার্নশিপ করা।


ক্যারিয়ার নিয়ে এভাবে একটু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করলেই আপনি হয়তো সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে যদি মনে হয় এই সেক্টরে নিজেকে একজন দক্ষ কর্মী বা নেতা হিসেবে গড়ে তোলার সুযোগ রয়েছে আপনার এবং যারা এই সেক্টরে আছেন তাদেরকে আপনি পছন্দ করেন, তাহলে এটাই আপনার সুখের গন্তব্য।


২. পেশাদার জীবন নিয়ে যতই ব্যক্ত থাকুন না কেন, নিজের সুখের জন্য সময় বের করুন 


ব্রুকসের মতে, ত্রিশের শুরু বা মাঝামাঝিতে এসে আমরা আমাদের সর্বোচ্চ পেশাদার পারফরম্যান্সটা দিতে সক্ষম হই। তবে কর্মস্থলে যাই হোক না কেন, এই সময়ে নিজের সুখের দিকেও আমাদের মনোযোগী হওয়া উচিত বলে মনে করেন ব্রুকস।


অল্প বয়সে অনেকেই অর্জনের মধ্যে নিজের জীবনের অর্থ খুঁজে পায়। কিন্তু তাদের মাঝে ইতিবাচক আবেগের অভাব থাকে। এক্ষেত্রে ব্রুকসের পরামর্শ হচ্ছে, ভবিষ্যতের লক্ষ্যগুলো মাথায় রেখেই নিজেকে খুশি করার জন্য প্রতিদিন কিছু করতে হবে। নতুবা সম্ভাবনা আছে, একসময় ক্যারিয়ার ও জীবন, দুটোর প্রতিই আপনার আগ্রহ তলানিতে চলে যাবে।  


প্রথম চাকরিতে ছয় মাসের মধ্যে ম্যানেজার পদে পদোন্নতি পেয়েছিলাম আমি। এটি আমাকে ক্লায়েন্টদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলার সুযোগ করে দেয়। কিন্তু আমি এটাও বুঝতে পারি, এই চাকরি করতে থাকলে পরিবারকে সময় দিতে পারব না আমি।


যে কারণে, এই চাকরি ছেড়ে আরেকটি ছোট পরিসরের চাকরি নেই। যেখানে কাজ একই, কিন্তু পরিসর ছোট হওয়ায় পরিবারকে সময় দিতে পারতাম আমি। 


শেষে অবশ্য এই চাকরির উপরও বিরক্ত হয়ে পড়ি। তবে পরবর্তীতে একজন স্ব-নিযুক্ত পরামর্শদাতা, বিনিয়োগকারী, লেখক এবং পণ্ডিত হিসেবে আমি সাফল্যের শেখরে পৌঁছাই।


মূল কথা: পেশাদার জীবনে অর্জনের পিছনে ছুটতে গিয়ে যদি আপনি ব্যক্তিগত জীবনে অসুখী হন, তাহলে অবশ্যই আপনাকে ব্যক্তিগত সুখ-শান্তির জন্য আলাদা সময় বের করে নিতে হবে। 


৩. শেখরে পৌঁছানোর আগেই দানের অভ্যাস করুন 


যখন বুঝতে পারবেন, আপনি পেশাদার জীবনের শেখরে পৌঁছেছেন, তখন আবার ক্যারিয়ারের পরবর্তী পর্যায়ে কী করবেন তা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করুন। 


আমি নিজের কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করার ছয় বছর পর এটা করতে শুরু করি। বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক পর্যায়ে ক্লাস নেওয়া শুরু করি আমি, যা এখনও করে যাচ্ছি। 


ব্রুকস বলে থাকেন, একবার বিমানে পিছনের সিটে বসা এক ভদ্রমহিলার গল্প শুনে ফেলেছিলেন তিনি। সেই মহিলা ফোনে কাউকে বলছিলেন, এই বয়সে এসে কেউ আর তার ফোন ধরে না বা ব্যাক করে না। 


এই গল্প আমাকে বেশ ধাক্কা দিয়েছিল। তাই আমি কোম্পানির কর্তা ব্যক্তিদের পরামর্শ দেই, নিজের সঞ্চিত জ্ঞান যেন মানুষের মাঝে বিলিয়ে দেন তারা। এটা করলে নিজের মাঝেও এক ধরনের পরিপূর্ণতা অনুভব করবেন আপনি। 


দিনশেষে আপনার অর্জন ও জ্ঞান যদি তরুণ প্রজন্মের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নিতে পারেন, তবেই আপনি সুখী হবেন। 

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.