আপনার অধীনস্থ কর্মী কাজে বড়সড় ভুল করলে কী করবেন?
ODD বাংলা ডেস্ক: যদি কর্মী জরুরি প্রজেক্টে ভুল করেন?
ধরুন, আপনি একজন টিম লিডার। আপনার অধীনস্থ একজন কর্মী নিজের কাজে বড়সড় একটা ভুল করে ফেলেছেন। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নিজের কাজ সম্পন্ন করতে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। আর বস হিসেবে তার কৃতকর্মের দায় অনেকটা বর্তেছে আপনার কাঁধেই। কর্মক্ষেত্রে যথেষ্ট ক্ষতির শিকারও হয়েছেন আপনি।
তবে আপনি কোনোভাবেই চান না ওই কর্মীকে ছাঁটাই করতে, বা বড় ধরনের সাজা দিতে। কেননা, এই একটি কাজে তিনি ভুল করলেও, সাধারণত তিনি যথেষ্ট বিশ্বাসভাজন এবং নিজের কাজে দক্ষ।
উপরের এমন দৃশ্যপটের সঙ্গে নিজেদের জীবনের মিল খুঁজে পাচ্ছেন হয়তো অনেক পাঠকই। আর তাই প্রসঙ্গতই একটি প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে মনে : কী করণীয় হবে এরকম পরিস্থিতিতে?
বিশ্বখ্যাত ব্যবসা-বাণিজ্য সংক্রান্ত ম্যাগাজিন ইঙ্কে এমনই একটি প্রশ্ন পাঠিয়েছেন কোনো এক টিম লিডার। আর সেই প্রশ্নের উত্তর বাতলেছেন ইঙ্কের কলামিস্ট অ্যালিসন গ্রিন।
গ্রিনের জবাব:
যদি কোনো ভালো কর্মী একবার একটা ভুল করে ফেলে, সঙ্গে সঙ্গে ভাবতে বসে যাওয়ার দরকার নেই যে কীভাবে তার উন্নতি ঘটানো, বা তাকে সুশৃঙ্খল করে তোলা যাবে। স্রেফ ওই মানুষটির সঙ্গে কথা বলুন। জানতে চান, কী হয়েছে, এবং কেন হয়েছে!
ব্যাপারটি সামলানো যেতে পারে এভাবে : আপনি তার সঙ্গে বসলেন, এবং ধীরেসুস্থে তাকে বললেন, "চলুন, 'এক্স' প্রজেক্টটির ব্যাপারে কথা বলা যাক। দশ তারিখ প্রজেক্টটি শেষ করার কথা ছিল, কিন্তু আপনি সেটা আমাকে জমা দিয়েছেন আরও এক সপ্তাহ পর। আপনি জানিয়েছেন, এটির গুরুত্ব নাকি আপনি বুঝতে পারেননি। অথচ যতবারই এই প্রজেক্টটি নিয়ে আপনার সঙ্গে আমার কথা হয়েছে, আমি পরিষ্কারভাবে বলেছি এটি একটি 'হাই প্রায়োরিটি'। আমি নিশ্চিত করতে চাই ভবিষ্যতে আর কখনও এমন ভুল যেন না হয়। তাই চলুন খুঁজে বের করা যাক, ঠিক কীভাবে আমাদের মধ্যে এই ভুল বোঝাবুঝিটা হলো। আপনার কী মনে হয়?"
এভাবেই আপনি একটি ফরমাল আলাপচারিতা শুরু করতে পারেন, যেটি একই সঙ্গে সাদাসিধে, বন্ধুত্বপূর্ণও বটে। তাছাড়া এখানে আপনি এটিও আপনার অধীনস্থ কর্মীকে বুঝিয়ে দিচ্ছেন যে আপনি তাকে কেবল কথাই শোনাচ্ছেন না, বরং তার তরফ থেকেও কিছু শোনার জন্য মুখিয়ে আছেন।
যেহেতু তিনি একজন ভালো কর্মী, এমনটি হতেই পারে যে আপনার অজ্ঞাতসারে কিছু একটা ঘটেছে, যার কারণে তিনি প্রজেক্টটির গুরুত্ব বুঝে উঠতে ব্যর্থ হয়েছেন। এমনটিও হওয়া অস্বাভাবিক নয় যে আপনি নিজেকে যতটা স্পষ্টভাষী ভাবছেন, আদতে আপনি হয়তো তা ছিলেন না!
তাহলে, এবার দেখুন তিনি কী জবাব দেন। তার কথার পরিপ্রেক্ষিতেই আলোচনা চালিয়ে যান। যদি বেরিয়ে আসে যে আপনার দিক থেকে কোনো ভুল ছিল না, তবু তিনি আপনাকে কথাকে সিরিয়াসলি নেননি, তাহলে তাকে বলুন, "এখন থেকে, চলুন এ ব্যাপারে একমত হওয়া যাক যে আমি যদি কোনো কাজকে হাই প্রায়োরিটি বলি, সেটিকে আপনি হাই প্রায়োরিটি বলেই মানবেন। আর যদি আপনার মনে হয় যে আপনি ডেডলাইনের মধ্যে কাজটি শেষ করতে পারবেন না, তাহলে আপনার উচিত হবে আগে থেকেই আমাকে সেটি জানিয়ে দেওয়া। সেই অনুযায়ী আমি আমার পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করতে পারব। দয়া করে নির্ধারিত সময় শেষ হওয়া অবধি অপেক্ষা করে বসে থাকবেন না।"
এমন আলাপচারিতার সুবিধাটি হলো, এর মাধ্যমে আপনারা দুজনেই আরও ভালোভাবে বুঝতে পারবেন যে আসলে ঘটনাটি কী ঘটেছিল, এবং ভবিষ্যতে একই ধরনের প্রেক্ষাপটে আপনাদের কী করা উচিত হবে।
তবে এর পাশাপাশি আপনি কিন্তু একটি দায়বদ্ধতার জায়গাও তৈরি করছেন। আপনি সোজাসাপটা বুঝিয়ে দিচ্ছেন যে ভবিষ্যতে যদি কেউ একই রকম কাজের পুনরাবৃত্তি ঘটান, তাহলে তার সঙ্গে আপনার একটি সিরিয়াস আলোচনা হবে। পাশাপাশি আপনি এর মাধ্যমে আপনার অধীনস্থ কর্মীদের এ ব্যাপারটিও বুঝিয়ে দিচ্ছেন যে তাদের কাছ থেকে আপনি কেমন কাজ আশা করছেন।
সিগারেট ছাড়ার পর যদি কর্মীর মেজাজ তিরিক্ষি হয়ে ওঠে?
এবার যাওয়া যাক একটি ভিন্ন প্রেক্ষাপটে। আপনার এক কর্মী আগে প্রচুর ধূমপান করতেন। কিন্তু হুট করে তিনি সিগারেট ছেড়ে দিয়েছেন। আর তারপর থেকেই তিনি বদমেজাজি হয়ে উঠেছেন। ভাটা পড়েছে তার পারফরম্যান্সেও। নিজ মুখেই তিনি স্বীকার করেছেন, সবসময় সিগারেট টানার জন্য উসখুস করেন, কিন্তু টানতে পারেন না, এটিই তার আচরণের এমন অবনতির কারণ।
কী করবেন এই পরিস্থিতিতে?
গ্রিনের জবাব:
কতটা বদমেজাজি হয়ে উঠেছেন তিনি? যদি একটু-আধটু হয়ে থাকেন, তাহলে সাময়িকভাবে তাকে একটু ছাড় দিয়ে দেখতেই পারেন। সকলের ব্যক্তিগত জীবনেই মাঝেমধ্যে এমন একেকটা পরিবর্তন আসে, যা তাদের আচার-আচরণে প্রভাব ফেলতে আরম্ভ করে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তারা নিজেদেরকে মানিয়ে-গুছিয়েও নেন।
তবে আপনার কর্মীর আচরণগত সমস্যা যদি মাত্রাতিরিক্ত হয়ে ওঠে, মানে তিনি সবার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন বা অহেতুক শত্রুতা করতে চান, তাহলে সরাসরি তাকে বিষয়টি বুঝিয়ে বলুন। জানিয়ে দিন, নিজের স্বভাবের অতিসত্বর পরিবর্তন আনতে হবে তাকে।
যেমন তাকে বলতে পারেন, "আমি জানি, আপনার খুবই কঠিন সময় যাচ্ছে, এবং আপনার প্রতি আমার পূর্ণ সহানুভূতি রয়েছে। কিন্তু আপনি প্রকাশ্যে সবার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করতে শুরু করেছেন। আমি চাই আপনি নিজের মেজাজের লাগাম টেনে ধরুন।"
একই কথা প্রযোজ্য পারফরম্যান্সের ব্যাপারেও। যদি তিনি সামান্য দুই-একটা ভুল করেন, কিন্তু মোটের উপর তার কাজ 'ওকে' থাকে, তাহলে আপনি একটু ধৈর্য ধরতে পারেন। কেননা আপনি তো জানেন তার ঠিক কোথায় অসুবিধাটা হচ্ছে। আপনি এ-ও জানেন, এমন অবস্থা খুব বেশিদিন থাকবে না।
তবে যদি কাজের অবনতির তীব্রতা আরও বেশি হয়, তাহলে আপনি তাকে বলতে পারেন, "আমি জানি আপনার পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ, এবং আমি এই মুহূর্তে আপনার থেকে শতভাগ আশাও করছি না। কিন্তু আপনি আপনার কাজে বেশ গুরুতর সব ভুল করে চলেছেন। আমাকে বলুন, এই সময়ে আপনার কাজের গুণগত মান ধরে রাখার জন্য আমি কীভাবে আপনাকে সাহায্য করতে পারি?"
তার মনের কথা শোনার পাশাপাশি আপনি নিজে থেকেও তাকে কিছু ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারেন। যেমন : কয়েক সপ্তাহের জন্য তার উপর থেকে কাজের চাপ কমিয়ে দেওয়া, তার কাজের ডেডলাইন বাড়িয়ে দেওয়া, এবং যতটা সম্ভব তার মানসিক চাপ কমানো।"
পাবলিক প্লেসে কোনো ম্যানেজারের কাছে চাকরি চাইবেন?
এবার নিজেকে টিম লিডার বা বসের জায়গা থেকে সরিয়ে কল্পনা করতে পারেন একজন সাধারণ কর্মী হিসেবে, যিনি বর্তমান চাকরির চেয়েও আরও ভালো কোনো চাকরির সন্ধানে রয়েছে। মনে করুন, আপনি কোনো একটি ক্যাফেতে গিয়েছেন, যেখানে আপনি একজন স্বনামধন্য ম্যানেজারের মুখোমুখি হয়ে গেলেন। আপনার বিশ্বাস, আপনি তার দলে যোগ দেওয়ার যোগ্য। তাহলে আপনার কি উচিত হবে হুট করে তাকে গিয়ে বলা যে আপনি তার অধীনে কাজ করতে আগ্রহী?
গ্রিনের জবাব:
এ কাজের কথা ভুলেও ভাববেন না! কিছু কিছু ম্যানেজার হয়তো সত্যিই আছেন, যারা সবসময় নতুন কর্মী নিয়োগের মেজাজে থাকেন। কিন্তু বাস্তবে এমন ম্যানেজারের সংখ্যাই বেশি, যারা যারপরনাই বিরক্ত হবেন, যদি আপনি তাদের বিশ্রামের সময়ে অযাচিতভাবে গিয়ে কাজের আলাপ জুড়ে দেন, এমনকি চাকরি প্রার্থনাও করেন!
তাছাড়া এমনও তো নয় যে আপনি একদমই অনন্যোপায়, কাউকে পাবলিক প্লেসে গিয়ে কাজের প্রস্তাব দেওয়াই আপনার হাতে একমাত্র অপশন! আপনার যদি কোনো ম্যানেজারকে আসলেই মনে ধরে আর চান তার অধীনে কাজ করতে, তাহলে আপনি সেটি আরও বেশি ফরমালি করতে পারেন ইমেইলে বা লিংকডইনে। আপনার তরফ থেকে যা বলার আছে আপনি বলে রাখলেন, তারা তাদের সুবিধাজনক সময়ে রিপ্লাই দিলেন… এমনটিই তো হওয়া উচিত আদর্শ দৃশ্যপট। তাছাড়া ইমেইল বা লিংকডইনে আপনি নিজের একটি সিভিও যোগ করে দিতে পারেন, যা দেখে তারা আশ্বস্ত হবেন যে আসলেই আপনার সঙ্গে কাজের আলাপ করা যেতে পারে।
এই নিয়মের ব্যত্যয় কেবল তবেই ঘটতে পারে, যদি ওই নির্দিষ্ট ম্যানেজার আপনার কোম্পানিতেই কাজ করেন। সেক্ষেত্রে আপনি হয়তো ইনফরমালি তার সঙ্গে কথা বলতেই পারেন। তবু আমি আবারও বলব, যখন তারা একটু রিল্যাক্স করতে চাইছেন, তখন কোনোভাবেই তাদের বিরক্ত করবেন না।
Post a Comment