সেকেন্ডহ্যান্ড পোশাক শিল্প যেভাবে মালয়েশিয়ার অর্থনীতিকে বদলে দিয়েছে

 


ODD বাংলা ডেস্ক: কোভিড মহামারির কারণে হোক বা পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধি, অথবা দুটোই; বর্তমান সময়ে মানুষের মধ্যে সেকেন্ডহ্যান্ড শপিংয়ের প্রবণতা অনেক বেড়ে গিয়েছে। সেকেন্ডহ্যান্ড পোশাক শিল্প এই মুহূর্তে বিশ্বের দ্রুত বিকাশমান শিল্পগুলোর মধ্যে একটি। কারণ ফাস্ট ফ্যাশনে বিকল্প হিসেবে ভোক্তারা চাইছেন কম পয়সায় পরিবেশবান্ধব ও টেকসই পোশাক গায়ে জড়াতে। এমনকি পাঠক জেনে অবাক হবেন যে সেলিব্রেটিরাও আজকাল রেড কার্পেটে হাজির হওয়ার জন্য প্রি-ওউনড (পূর্ব-মালিকানাধীন) পোশাক হাতে তুলে নিচ্ছেন।   


সেকেন্ডহ্যান্ড পোশাক কি, সে সম্পর্কে নিশ্চয়ই আমাদের সবারই ধারণা আছে। রি-সেল প্ল্যাটফর্ম 'থ্রেডআপ' এবং অ্যানালিটিকস ফার্ম গ্লোবালডেটা'র ২০২১ সালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৫ সালের মধ্যে ব্যবহৃত পোশাকের বাজারে বিক্রির পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় ৭৭ বিলিয়ন ডলার। চলতি বছরে এই বিক্রির পরিমাণ ৩৬ বিলিয়ন ডলার।


বেশিরভাগ সময়ই সেকেন্ডহ্যান্ড পোশাকগুলো বিক্রি হচ্ছে এটসি, ইবে এবং গ্রেইলড-এর মতো অনলাইন প্ল্যাটফর্মে। পর্যাপ্ত সময় নিয়ে এসব সাইট ঘুরলে দেখা যাবে এর সিংহভাগ বিক্রেতাই দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের; আরও সুনির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে, মালয়েশিয়ার। 


জিকিউ-এর ফ্যাশন সমালোচক র‌্যাচেল তাশজিয়ান বলেন, "আমরা যখন এটসিতে শপিং করতে যাই তখন এ বিষয়টি খেয়াল করেছি।" এদিকে ম্যানহাটনের একটি অলঙ্কার বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানের ডিজাইনার সারাহ ব্রাউন বলেন, "আমি একটা সেকেন্ডহ্যান্ড অ্যাগনেস বি কার্ডিগান খুঁজছিলাম এবং দেখলাম যে এরা সবই মালয়েশিয়ার।"


সেকেন্ডহ্যান্ড পোশাকের ক্ষেত্রে মালয়েশিয়া্র এই আধিপত্য অনেক ক্রেতার মনে প্রশ্ন জাগিয়ে তুলেছে। কিন্তু বিক্রেতাদের উত্তর সোজাসাপ্টা- চাহিদা ও  যোগানই এর প্রধান কারণ। 


মালয়েশিয়ায় সেকেন্ডহ্যান্ড শপিং 'বান্ডিল' শপিং নামে বহুল পরিচিত। বড় বড় কাপড়ের গাঁটরি বুঝাতে এখানে বান্ডিল শব্দটি ব্যবহৃত হয়। ছবি: দ্য নিউইয়র্ক টাইমস

 

বান্ডিল শপিং এবং পুরনো কাপড়ের বান্ডিল


মালয়েশিয়ায় সেকেন্ডহ্যান্ড শপিং 'বান্ডিল' শপিং নামে বহুল পরিচিত। রাস্তার পাশের হকার থেকে আরম্ভ করে কর্পোরেট চেইন পরিচালিত বিশাল ওয়্যারহাউজ, সমগ্র মালয়েশিয়া জুড়েই রয়েছে হাজার হাজার থ্রিফট স্টোর বা পুরনো কাপড়ের দোকান। এমনই একটি কোম্পানি হলো 'জালান জালান জাপান'। প্রতিষ্ঠানটি মূলত জাপানি আইটেম আমদানি করে এবং মালয়েশিয়ায় তাদের ৮টি দোকান রয়েছে। 'ফ্যামিলি বান্ডিল' নামক আরও একটি প্রতিষ্ঠানের শুধু কুয়ালালামপুরেই আছে অসংখ্য আউটলেট।


গত এক দশকে সেকেন্ডহ্যান্ড জিনিসপত্র কেনার ধুম পড়ে গেছে সাধারণ মানুষের মধ্যে এবং কুয়ালালামপুরের নাঈম আজহারের ভাষ্যে, এটা একটা দারুণ ব্যাপার! ২৮ বছর বয়সী নাঈম কুয়ালালামপুরের একটি সাইবারসিকিউরিটি কোম্পানিতে চাকরি করেন। থ্রিফট স্টোর থেকেই নামিদামি ব্র্যান্ডের পোশাক কিনে লাক্সারি ফ্যাশনের জন্য ২০১৯ সালে ইন্টারনেট দুনিয়ায় ভাইরাল হন তিনি।


নাঈম জানালেন তার অভিজ্ঞতার কথা, "আমি ঘন্টার পর ঘন্টা শুধু পুরনো কাপড়ের দোকানেই পড়ে থাকি। আর এভাবেই বেশকিছু ট্রেঞ্চ কোট, যেমন-বারবেরির ট্রেঞ্চকোটও খুঁজে পেয়েছি।" 

'বান্ডিল' শব্দটি এখানে ব্যবহার করা হয় অনেক বেশি পরিমাণ কাপড় বুঝাতে, যা স্থানীয় মার্চেন্টরা পাইকারদের কাছ থেকে কিনে নেয়। মালয়েশিয়ার থ্রিফট সংস্কৃতিকে ব্যাখ্যা করতে 'সেলাম বান্ডিল' শব্দদ্বয় ব্যবহৃত হয়, যার অর্থ 'কাপড়ের সমুদ্রে ডুব দেওয়া।' 


কুয়ালালামপুরের ৩১ বছর বয়সী সুরকার আমিরুল রুসলান জানান, মাঝেমাঝে মালয়েশিয়ান থ্রিফট দোকানগুলো কোনো একটি ইভেন্ট উপলক্ষ্যে বিশাল বিশাল কাপড়ের বান্ডিল বের করে। তিনি বলেন, "একজন লোক গিয়ে সেই বিশাল কাপড়ের গাঁটরির মুখ ছুরি দিয়ে কেটে ফেলে এবং লোকজন এর মধ্যে ঝাঁপিয়ে পড়ে পছন্দসই কাপড় খুঁজতে।"


ব্যক্তিগতভাবে রুসলান এমন দোকান পছন্দ করেন যারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারণা চালায় না, বরং শুধুমাত্র গুগল ম্যাপে লোকেশন দেওয়া থাকে। সম্প্রতি তিনি কুয়ালালামপুরের চায়নাটাউনে অবস্থিত ফ্যামিলি বান্ডিলের দোকান থেকে শপিং করেছেন। সেখানে জাপানি ব্র্যান্ড এডুইন ছাড়াও, অ্যাডিডাস, নাইকি এবং লেভির পণ্যও ছিল। সর্বনিম্ন ১ ডলার থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ২৩ ডলারের পণ্য ছিল দোকানটিতে।


এরপর রুসলানের পছন্দ রাস্তার পাশের স্টল 'ম্যাক্সস্টেশন।' মালয়েশিয়ার শ্রমজীবী মানুষের বসবাস যে এলাকায়, সেখানেই এই দোকানের অবস্থান। ত্রিপলের দেয়ালে তৈরি ৪টি তাঁবুর মধ্যে বসে এই দোকান। রুসলান জানালেন, কয়েক মাস আগে এখানে এসে তিনি দেখেছিলেন দোকানটিতে আগুন লেগেছে।


তবে ম্যাক্সস্টেশনের প্রোপাইটর নূর মোহাম্মদ মাত নূর এখনও জানেননা সেদিন ঠিক কি হয়েছিল। ১০ বছর ধরে এই পেশায় যুক্ত মোহাম্মদ বলেন, "দোকানে তখন কেউই ছিল না এবং ফায়ারসার্ভিসও কোনো সূত্র খুঁজে পায়নি।" জানা যায়, স্থানীয় বাজারের চাইতে বরং অনলাইন সাইট 'গ্রেইলড' এর মাধ্যমে তাদের বেশি বিক্রি হয়।


আমেরিকান বাজার


ভিন্টেজ পোশাক এবং ব্যান্ড টি-শার্টের প্রতি মানুষের চাহিদা দেখে স্থানীয় বাজারে এসব পোশাক বিক্রির সিদ্ধান্ত নেন মোহাম্মদ। ২০১৭ সালে তিনি বিদেশেও এগুলো সরবরাহ করতে শুরু করেন এবং তিন বছর পর দোকান চালু করেন। বর্তমানে তিনি প্রতি মাসে অনলাইনে ১০-১৫টি আইটেম বিক্রি করেন। জাপানি ব্র্যান্ড কমো দেস গারসো, ইয়োঝি ইয়ামামোতো ও কাপিতাল-এর পোশাকগুলো থেকেই তার লাভ হয় সবচেয়ে বেশি।


মোহাম্মদ দিনের তিন ঘন্টা সময় ব্যয় করেন পুরনো পোশাক খুঁজতে। বিদেশি ব্র্যান্ডের পোশাক আমদানি করে, এমন পাইকারি আউটলেটগুলো ঘুরে বিভিন্ন পণ্য বাছাই করেন তিনি। মোহাম্মদ জানালেন, তিনি আমেরিকান এবং জাপানি পোশাক ব্র্যান্ডগুলোকে প্রাধান্য দেন কারণ এগুলো থেকে ভালো মানের পণ্য পাওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। উচ্চ মানসম্পন্ন একটি পোশাকের দামই অনেক সময় পুরো বান্ডিল পোশাকের দামের সমান হতে পারে বলে জানান তিনি।


আমেরিকান ব্র্যান্ডগুলোর ভোক্তাদের চাহিদা বুঝতে বিভিন্ন গণমাধ্যম ও ম্যাগাজিনগুলোর দিকে নজর রাখেন মোহাম্মদ। এছাড়া, কেনিয়ে ওয়েস্ট, ভিভিয়েন ওয়েস্টউড এবং মালয়েশিয়ান ইনফ্লুয়েন্সার ওয়েক দয়োকের মতো তারকাদেরও নিয়মিত ফলো করেন তিনি।


গেল বছরের অক্টোবরের অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর অনেক ভোগান্তির মধ্য দিয়ে গেছেন মোহাম্মদ। এরপর গত ডিসেম্বরে আবার দোকানটি চালু করেন তিনি। চলতি বছরের জানুয়ারিতে এক প্রতিবেদক তার দোকানে হাজির হলে দেখতে পান, শর্টস এবং ডেনিম অ্যাপ্রোন পরে কয়েক বান্ডিল কাপড়ের গাঁটরি খুলছেন মোহাম্মদ। 


"এগুলোর প্রতি বান্ডিলে ৩০০-৪০০ পিস কাপড় থাকে। এখান থেকে কাপড় বাছাই করতে অন্তত এক ঘন্টা সময় লাগে আমার। আমি প্রতিটি পণ্যের গায়ে লেখা দাম ভালোভাবে দেখি, সুতা-সেলাই বা জিপ ভালো আছে কিনা তা পর্যবেক্ষণ করি এবং পণ্যটি কোনো ভালো ব্র্যান্ডের কিনা সেটাও দেখতে হয়", বলেন মোহাম্মদ।


একটি ভিন্টেজ লেদার ভার্সিটি জ্যাকেট হাতে নিতে নিতে মোহাম্মদ বলেন, "এটা জাপানের খুব ভালো একটা ব্র্যান্ড 'জনবুল'-এর জ্যাকেট। তাই এটা আমি অনলাইন সাইটে উঠাবো।"


দোকানে অগ্নিকান্ডের ফলে গেল বছর প্রায় ১০,০০০ ডলারের ক্ষয়ক্ষতি হয় মোহাম্মদের। তিনি বলেন, "আমি কিছু দামি পোশাক বাছাই করে রেখেছিলাম অনলাইনের জন্য, এর মধ্যে ছিল ১৮০ ডলারের বার্বার জ্যাকেট এবং ৫৯০ ডলারের বাপে জ্যাকেট। কিন্তু সবই আগুনের পেটে গিয়েছে।"


দানের পোশাক কোথায় যায়?


যারা পুরনো পোশাক দান করে দেন, বেশিরভাগ সময়ই এগুলোর জায়গা হয় গুডউইল বা সালভ্যাশন আর্মির তাকে। 'সেকেন্ডহ্যান্ড: ট্রাভেলস ইন দ্য নিউ গ্লোবাল গ্যারেজ সেল' বইয়ের লেখক অ্যাডাম মিন্টার বলেন, "আমেরিকান থ্রিফট স্টোরগুলোতে রাখা কাপড়ের তিনভাগের এক ভাগ শুধু বিক্রি হয়। বাকি কাপড় ভারত, পাকিস্তান ও মালয়েশিয়ার মতো দেশগুলোতে রপ্তানি করে তারা। সেখানে সেলাররা সস্তায় এসব পোশাক কিনে নেয় এবং অনলাইনে বিক্রির জন্য তোলে। আপনি ভাগ্যবান হলে শত শত কাপড়ের মধ্যে একটা ভালো ব্র্যান্ডের পোশাক পেতেও পারেন!"


ধরা যাক নাইকির একটি হুডি হয়তো তাইওয়ান বা ভারতের কোনো কারখানায় তৈরি হয় এবং তা যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বিক্রি করা হয়। একবার ব্যবহারের পর এটি আবার গুডউইলকে দান করা হয়; এরপর তা চলে যায় মালয়েশিয়াতে এবং অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে আবার তা যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রি হয়। সোজা হিসাব হচ্ছে, উন্নত বিশ্বের লোকেরা শুধুমাত্র ব্র্যান্ডের নাম দেখেই বেশি দামে পণ্য কিনবে, কিন্তু উন্নয়নশীল দেশে পাইকাররা এগুলো কেজি দরে বিশাল বিশাল বান্ডিল হিসেবে বিক্রি করে।


আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের হিসাব নিয়ে কর্মরত সংস্থা অবজারভেটরি ফর ইকোনমিক কমপ্লেক্সিটি'র তথ্যানুযায়ী, ২০১৯ সালে ব্যবহৃত পোশাকের সবচেয়ে বড় রপ্তানিকারক ছিল যুক্তরাষ্ট্র। ২০১৯ সালে দেশটি মোট ৭২০ মিলিয়ন ডলারের ব্যবহৃত পোশাক রপ্তানি করেছে। শীর্ষ আমদানিকারকদের মধ্যে আছে ইউক্রেন (২০৩ মিলিয়ন ডলার), পাকিস্তান (১৮৯ মিলিয়ন ডলার), ঘানা (১৬৮ মিলিয়ন ডলার) এবং কেনিয়া (১৬৫ মিলিয়ন ডলার)। একই বছরে মালয়েশিয়ার আমদানির পরিমাণ ছিল ১০৫ মিলিয়ন ডলার।


বিশেষত, পূর্ব আফ্রিকার কিছু দেশে পশ্চিমা দেশগুলো থেকে আগত সেকেন্ডহ্যান্ড পোশাকের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। যদিও মানুষ প্রায়ই বলে থাকে যে আমেরিকা দরিদ্র দেশগুলোকে তাদের 'ফেলনা' পোশাক দিচ্ছে, কিন্তু অ্যাডাম মিন্টারের মতে, বাস্তবতা আরও জটিল। কারণ এসব দেশের মানুষ সত্যিই সেকেন্ডহ্যান্ড পোশাকগুলো চায়।


"তাদের এই পোশাকগুলো প্রয়োজ়ন রয়েছে। এগুলো পাইকারি হিসেবে কেনা হচ্ছে এবং বন্টন করা হচ্ছে", বলেন অ্যাডাম।


তবে সেকেন্ডহ্যান্ড পোশাক শিল্পেও আছে নানা জটিলতা ও বাধাবিঘ্ন। ২০১৫ সালে বুরুন্ডি, কেনিয়া, রুয়ান্ডা, দক্ষিণ সুদান, তানজানিয়া এবং উগান্ডা সম্মিলিতভাবে ঘোষণা দেয়, ২০১৯ সালের মধ্যেই তারা নিজেদের দেশে সেকেন্ডহ্যান্ড পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করবে। নিজেদের গার্মেন্ট শিল্পের বিকাশের জন্যই এই সিদ্ধান্ত নেয় তারা। কারণ সেকেন্ডহ্যান্ড পোশাকগুলো খুবই সস্তায় পাওয়া যায় বাজারে।


এ প্রসঙ্গে একটি মার্কিন সংস্থা সেকেন্ডারি ম্যাটেরিয়ালস অ্যান্ড রিসাইকেলড টেক্সটাইলস এসোসিয়েশন জানায়, উল্লিখিত দেশগুলো পোশাক আমদানি বন্ধ করে দিলে ৪০,০০০ আমেরিকান কর্মক্ষেত্র বন্ধ হয়ে যেতে পারে। সেই সাথে রপ্তানিতে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াবে ১২৪ মিলিয়ন ডলার।


জবাবে ট্রাম্প প্রশাসন উক্ত দেশগুলোর উপর পণ্য আমদানিতে শুল্ক বৃদ্ধির হুমকি দিলে রুয়ান্ডা ছাড়া বাকি সবাই আগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে।


মানুষ তাদের সেকেন্ডহ্যান্ড পোশাক বিদেশে বিক্রি করতে পারবে কিনা তা নির্ভর করে তার দেশের পণ্য পরিবহন-বিক্রয় সংক্রান্ত লজিস্টিকসের উপর। 


অ্যাডাম মিন্টার বলেন, "কিছু দরিদ্র দেশে দেখা যাবে যে প্রতিনিয়তই পুরনো পোশাক যাচ্ছে। কিন্তু তারা তেমন লাভ করতে পারছে না। ধরুন নাইজেরিয়াতে এক বিশাল বান্ডিল কাপড় গেল এবং এর মধ্যে লেভির একজোড়া দারুণ প্যান্টও রয়েছে। কিন্তু নাইজেরিয়ার কেউ সম্ভবত চেষ্টাই করবে না ঐ প্যান্টজোড়া এটসি'র মতো অনলাইন প্ল্যাটফর্মে বিক্রি করার। কারণ সেখানে এ ধরনের কাঠামো বা লজিস্টিকসই নেই। কিন্তু কেনিয়া বা মালয়েশিয়ায় তা আছে। ই-কমার্স এখানে বেশ পরিচিত।"


মিন্টার জানালেন, মালয়েশিয়া ছাড়াও থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, ইউক্রেন এবং লাটভিয়াও এই ব্যবসায়ে অংশগ্রহণ করছে। তার ভাষ্যে, মালয়েশিয়ার জনগণ গ্লোবাল ফ্যাশন ট্রেন্ডের দিকে বেশ আগ্রহী এবং এ ধরনের ব্যবসা করার মতো নিষ্পত্তিযোগ্য আয় তাদের রয়েছে। বিশ্বব্যাংকের অনুমান, আগামী দুই থেকে ছয় বছরের মধ্যেই মালয়েশিয়া মধ্যম আয়ের দেশ থেকে উচ্চ-আয়ের দেশে পরিণত হবে।


শুধু তাই নয়, ডেল এবং ইন্টেলের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর উৎপাদন ঘাঁটি হিসেবেও মালয়েশিয়ার গুরুত্ব রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান প্রচুর পণ্য আমেরিকায় পাঠায়। তাছাড়া, জাপানও নানা ধরনের বিরল ও চাহিদাসম্পন্ন পণ্য এ অঞ্চলে রপ্তানি করে। মালয়েশিয়ায় আসা সেকেন্ডহ্যান্ড পোশাকের সিংহভাগই আসে জাপান থেকে।


ডিএইচএল এক্সপ্রেস মালয়েশিয়া অ্যান্ড ব্রুনেই-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক জুলিয়ান নিও জানান, তাদের সাথে আড়াই শতাধিক ভিন্টেজ ক্লথিং সেলার কাজ করে যারা মালয়েশিয়া থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য পাঠায়। ২০১৩ সাল থেকে প্রতি বছর ভিন্টেজ পোশাকের ক্রেতার সংখ্যা বেড়েই চলেছে।


ইন্দোনেশিয়ার বাংদুং সিটির একজন বিক্রেতা ইয়োপি আরদিয়ান্তো মনে করেন, বহু দেশেই সেকেন্ডহ্যান্ড পোশাক ব্যবসায়ের একটি বড় সুযোগ তৈরি করেছে এবং এই প্রতিযোগিতামূলক বাজারকে তিনি স্বাগত জানান। 

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.