বিপদ দেখলেই শুয়ে পড়ে যে পাখি



 ODD বাংলা ডেস্ক: মাঝে মধ্যে ওরা করুণ সুরে ডাকে। দেখতেও যেমন সুন্দর, তেমন তার চলাচলের ঢং। একটি পাখি হয়েও বেশ বুদ্ধি রাখে। মানুষ দেখলেই অনেকটা দূরে সরে যায়। তাইতো পাখিটিকে খুব বেশি দেখাই যায় না। তবে অন্য পাখিদের থেকে একটু আলাদা করে তাকে উপস্থাপনের মতো বেশ কিছু বিষয় আছে। বিপদ দেখলেই শুয়ে পড়ে। হঠাৎ করে উঠেই উরে যায় দূরে। পাকিটির নাম শাবাজ ট্রিটি।

এদের বাংলা নাম শাবাজ ট্রিটি, কালো শিরযুক্ত হট টিটি বা হাট্টিমা। ইংরেজি নাম- Northern Lapwing। বৈজ্ঞানিক নাম: Vanellus vanellus। শাবাজ ট্রিটি বা কালো শিরযুক্ত হট টিটি বা হাট্টিমা লম্বা ঝুটিযুক্ত Charadriidae পরিবারের সাদাকালো পাখি।


২৮ থেকে ৩১ সে.মি. দৈর্ঘ্য ও আকার ভেদে ১৪০ থেকে ৩২০ গ্রাম ওজনের এরা জলচর পাখি। এরা মূলত ইউরোপ, আফ্রিকা ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশে বসাবস করে। প্রজনন ঋতু ছাড়া প্রাপ্তবয়স্ক পাখির পিঠের দিকে কালচে সবুজ রঙের হয়। দেহের নিচের দিক সাদা। পেছনে লম্বা কালোযুক্ত শির বা ঝুঁটি থাকে।


মুখে কালো ও সাদা রঙ দেখা যায়। বুকে কালো প্রশস্ত ফিতা এবং কালো ডানার উপরের অংশের বাইরের ডানার তিনটি প্রান্ত পালকের আগা অনেকটা পীতাভ-সাদা। এদের চোখ বাদামী। চঞ্চু ছোট ও কালো। পা, পায়ের পাতা ও আঙুল কমলা-বাদামী। প্রজননকালে এদের ঝুঁটি দীর্ঘতর এবং চোখের নিচে সরু কালচে টান থাকে। ছেলে ও মেয়ে পাখির চেহারা অভিন্ন।


শাবাজ ট্রিটি স্যাঁতসেঁতে তৃণভূমি, জলাভূমি, হাওর, নদীর পাড়, পতিত জমি ও আবাদি জমিতে বিচরণ করে। সচারচর জোড়ায় বা ছোট বিচ্ছিন্ন ঝাঁকে থাকে। জলের প্রান্তে হেঁটে ও দৌড়ে এরা ঠোঁট দিয়ে শিকার তুলে খায়। খাদ্যতালিকায় রয়েছে পোকা, শামুক জাতীয় প্রাণী ও কেঁচো। মার্চ থেকে জুন মাস এদের প্রজননকাল। প্রজননকালে পুরুষ পাখি মেয়ে পাখিকে আকৃষ্ট করার জন্য আকাশে উড়ে কসরত দেখায়। এরা মাটিতে বাসা বানায়। বাসার ত্রিসীমানায় কোনো পাখি আসতে দেয় না। পুরুষ পাখি পাহারা দেয়।


নিজেদের বানানো বাসায় মেয়ে পাখি ৩-৪টি ডিম পাড়ে। দুজনে মিলে ডিমে তা দেয়। ২৬ থেকে ২৮ দিনে ডিম থেকে বাচ্চা ফোটে। ডিম থেকে বের হয়েই ছানারা বাসা ছেড়ে দেয় এবং নিজেরা খাবার খুঁটে খায়। ভয় পেলে ছানারা মাটিতে শুয়ে পড়ে এবং ছানাদের থেকে শত্রুর দৃষ্টি ফেরানোর উদ্দেশ্যে বাবা-মা কিছু দূরে মাটিতে শুয়ে ছটফট করে। এটা বাবা-মায়ের একটি কৌশল মাত্র।


শাবাজ ট্রিটি ভারতের বিরল পরিযায়ী পাখি। শীত মৌসুমে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের জলাশয়ে দেখা যায়। এ ছাড়াও এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকায় এদের বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে। এরা বিশ্বে বিপদমুক্ত বলে বিবেচিত। ভারতের বন্যপ্রাণী আইনে এরা সংরক্ষিত।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.