বিশ্বের সবচেয়ে প্রাণঘাতী বিড়াল
ODD বাংলা ডেস্ক: 'ফেলিস নাইগ্রিপস' (Felis nigripes) নামের আফ্রিকান ব্ল্যাক-ফুটেড বা কালো-পায়ের বিড়াল হিসেবে পরিচিত বিড়ালের উচ্চতা মাত্র ৮-১০ ইঞ্চি। গড়পড়তায় একটি সিংহের ওজনের চাইতে এটির ওজনও ২০০ গুণ কম। তবুও, ক্ষুদে এই প্রাণীটিই বিশ্বের সবচেয়ে দুর্ধর্ষ শিকারী বিড়াল।
ব্ল্যাক-ফুটেড বিড়াল আসলে গোটা আফ্রিকার মধ্যেই সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম বিড়াল। মানুষের কাছে কিংবা বনের বড় বড় জন্তুর কাছে এই ছোট্ট শিকারী বিড়ালটি কোনো উদ্বেগের কারণ নয়। কিন্তু আফ্রিকান সাভানাতে বসবাসরত, অপেক্ষাকৃত ছোট প্রাণীদের কাছে ব্ল্যাক ফুটেড বিড়াল রীতিমতো এক দুঃস্বপ্নের নাম! কিন্তু কেন?
আপনার আশেপাশে ঘুরে বেড়ানো সাধারণ বিড়ালের চাইতে আকারে ছোট হলেও, তার যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার কোনো সুযোগ নেই। সাদাকালো ডোরাকাটা শরীরের প্রাণীটি তার নিজস্ব মেটাবলিজমের জোরে প্রায় বিরতিহীনভাবে শিকার করে যেতে পারে। প্রতি রাতে এটি গড়ে ১০-১৪ টি ইঁদুর বা ছোট পাখি শিকার করতে পারে। এই শিকারের সংখ্যা একটি চিতাবাঘের এক মাসের শিকারের চাইতেও বেশি!
শুধু তাই নয়, শিকারের ক্ষেত্রে বিড়ালটি ৬০ শতাংশ সফল। অথচ, শিকার ধরার ক্ষেত্রে একটি সিংহের সফলতার ভাগ মাত্র ২০-২৫ শতাংশ।
রাতের বেলা নিজের প্রখর দৃষ্টিশক্তি ও শ্রবণশক্তির মাধ্যমে শিকারকে সহজেই বাগে আনতে পারে বিড়ালটি। তাই এটির সামনে দিয়ে শিকারের পালিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ।
বর্তমানে দক্ষিণ আফ্রিকার মাত্র তিনটি দেশ: বতসোয়ানা, নামিবিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্ল্যাক-ফুটেড বিড়ালের দেখা মিলবে। আফ্রিকা মহাদেশের অন্যান্য বিড়ালের তুলনায় এটি একটি বিরল প্রজাতির বলে মনে করা হয়।
ব্ল্যাক-ফুটেড বিড়াল সাধারণত তৃণভূমি, ছোট ঝোপঝাড়পূর্ণ মরুভূমি, বালুকাময় সমতলসহ যেসব স্থানে ইঁদুর ও ছোট পাখি বেশি থাকে, সেখানে বাস করতে পছন্দ করে।
'ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর এনডেঞ্জারড ক্যাটস' এর তথ্য অনুযায়ী, একটি আফ্রিকান ব্ল্যাক-ফুটেড বিড়াল বছরে তিন হাজারেরও বেশি ইঁদুর শিকার করতে ও খেতে পারে।
এমনকি, প্রচলিত আফ্রিকান কিংবদন্তি অনুযায়ী, ব্ল্যাক ফুটেড বিড়াল একটি জিরাফকেও ভূপাতিত করতে পারে! মিথ হওয়া সত্ত্বেও, এটি আসলে আদুরে, কিন্তু ঘাতক বিড়ালটির দৃঢ়তা নির্দেশ করে।
কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, বিরল প্রজাতির ব্ল্যাক-ফুটেড বিড়ালের অস্তিত্ব আজ হুমকির মুখে। আর এর পেছনেও মানুষই দায়ী। তৃণভূমিতে অতিরিক্ত মাত্রায় গবাদি পশু চড়ানোর ফলে বিড়ালদের আবাসস্থল ধ্বংস করা থেকে শুরু করে শিকারী ফাঁদ বসানো, সব মিলিয়ে তাদের টিকে থাকা বেশ কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
Post a Comment