বিলুপ্ত ঈগলটির দেখা মিলেছে ক্যামেরায়, তাও এভাবে!

 


ODD বাংলা ডেস্ক: ঈগল পাখি। এর ওপর নাম শিকারি পাখি। এরা মূলত একপ্রকার বৃহৎ আকার, শক্তিধর, দক্ষ শিকারি প্রাণী। তাই এদেরকে এই নামে ডাকা হয়। এটি সাধারণত বনে বা ঘন জঙ্গলে বসবাস করে। বানর, ছোট জাতের পাখি, টিকটিকি, হাস-মুরগী খেয়ে এরা জীবনধারণ করে থাকে। 

একটি পূর্ণবয়স্ক ঈগলের ওজন প্রায় ৩০ কেজি এবং লম্বায় প্রায় ৩০-৩৫ ইঞ্চি হয়ে থাকে। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো- একটি পূর্ণবয়স্ক সুস্থ ঈগল ১১,০০০ ফুট উপরে উঠতে পারে। 


শীতকালে এরা তুলনামূলক কম ঠান্ডা এলাকায় বা দেশে চলে যায়। এরা জনমানব এলাকার বাইরে এবং কমপক্ষে ১০০ ফুট উপরে বাসা তৈরি করে স্বামী-স্ত্রী উভয়ে একত্রে বসবাস করে প্রজনন ঘটায়। তাদের জীবন রক্ষার জন্য বড় হাতিয়ার পায়ের নখ। এই নখগুলো এতই তীক্ষ্ণ যে নিমিষের মধ্যে শিকারিকে ছিন্নভিন্ন করে দেয়। তবে এরা এখন বিলুপ্তির পথে। মূলত মনুষ্য সভ্যতার বৃদ্ধিতে ভারতে এদের দেখা পাওয়া যায় না বললেই চলে। 


পৃথিবীতে সবচেয়ে বড় জাতের ঈগল হলো হাস্ট ঈগল। ১৮৭৪ সালে জুলিয়াস ফন হাস্ট নিউজিল্যান্ডে এই জাতের ঈগলের প্রথম দেখা পান বলে তার নামানুসারে এই জাতের ঈগলের এই নামকরণ করা হয়। অবশ্য স্থানীয় মাওরি জাতের মানুষের কাছে এরা আগে থেকেই সুপরিচিত ছিল। এদের ডানামেলা অবস্থায় প্রস্থ তিন মিটার পর্যন্ত হয়, ওজন আঠারো থেকে কুড়ি কিলোগ্রাম পর্যন্ত হয়। কিন্তু বর্তমানে এদের আর দেখা যায় না, বিলুপ্ত প্রায়।


তবে হঠাৎ করে আবারো দেখা মিলল এই বিলুপ্ত প্রাণীর। দুই পাখা দু’দিকে মেলে জলের উপর দিয়ে উড়ে আসছিল এই ধরনের একটি ঈগল। তার দৃষ্টি ছিল একেবারে সামনের দিকে। তবে পাখা দু’টি একেবারে জল ছুঁই ছুঁই করছে। আর জলে ওই সময় ঈগলটির অবয়বের প্রতিবিম্বও তৈরি হয়েছে। আর সেই মুহূর্তটি ক্যামেরা ক্লিক করেছেন কানাডার আলোকচিত্রী স্টিভ বিরো। টরোন্টা থেকে দেড়শ কিলোমিটার দূরে তোলা ছবিটি এবার ইন্টারনেটে ভাইরাল হয়ে গেছে। কয়েক হাজার বার শেয়ার করাও হয়েছে ছবিটি।


এর আগে, প্রায় এক দশক ধরে প্রকৃতির ছবি তুলছেন বিরো। গত বছরও ওই স্থানে ছবি তোলার জন্য গিয়েছিলেন তিনি। তবে সেই সময় পুকুরে জল একটু বেশি ছিল। ঈগল দেখলেও এ ধরনের সুযোগ পাননি তিনি। পরে এমন ছবির জন্য একটা বছর অপেক্ষায় ছিলেন বিরো। এবার সেখানে গিয়ে আর খালি হাতে ফিরে আসতে হয়নি তাকে। তার পুরো বছরের অপেক্ষা সার্থক হয়েছে।


এদিকে, চলতি মাসের ৪ মে তিনি যখন ছবিটি তোলেন, সেই সময় আকাশও কিছুটা মেঘাচ্ছন্ন ছিল। ফলে বিরো সিদ্ধান্ত নেন,জলে মেঘাচ্ছন্ন আকাশের প্রতিচ্ছবির সঙ্গে পাখিকে রেখে ছবি তুলবেন। তবে আলোকচিত্রীর উপস্থিতি ভালোভাবে নেয়নি ঈগল। সে কারণে কয়েকবার সেখান থেকে উড়ে গিয়ে অন্য পুকুরের পাশের গাছে বসেছে। পরে ফিরে এসে এভাবেই ক্যামেরায় ধরা পড়ে ঈগলটি। মূলত এটি ছিল পৃথিবীর সবচেয়ে বড় জাতের হাস্ট ঈগল।


তবে বিরোকে ভয়ও দেখিয়েছে ঈগলটি। তিনি বলেন, কয়েকবার সে (ঈগল) উড়ে এসে একদম আমার মাথার উপর দিয়ে চলে গেছে। এমন আচরণ করেছে, যেন ভয় পেয়ে এখান থেকে আমি চলে যাই। শেষবার এভাবে আমার দিকেই উড়ে আসার সময় ছবিটি আমি ক্যামেরাবন্দী করি। আর ছবিটি প্রিন্ট করে বাজারে ছাড়ার ইচ্ছার কথাও প্রকাশ করেছেন বিরো।


তার ইচ্ছা, এই বিলুপ্ত প্রাণীদের এখন আমরা সহজে দেখতে পায় না। তাই এই ছবিটিকে বাজারে ছেড়ে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিব। আর বিলুপ্ত পাখিটিকে ছবির মাধ্যমে মানুষের নজরে রাখব। মূলত পৃথিবীর জঙ্গলগুলোতে এখন ঈগলের অবস্থান খুবই নগণ্য। ঘন বসতি ও লোক সমাগমে তাদের বসবাস অযোগ্য, তাই একেবারে হারিয়ে যেতে বসেছে এই পাখিটি। ঈগল যতটা শিকারি প্রবণ ততটাই বিচক্ষণ। তাই মানুষের হাঁটাচলা নিমিষেই বুঝতে পারে তারা। এই কারণে মানুষ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বিলুপ্তি হতে চলেছে এই পাখিটি। 

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.