স্ত্রী যদি আপনার চেয়ে বেশি আয় করে, তাহলে কী করবেন?

 


ODD বাংলা ডেস্ক: বিগত কয়েক দশকে গোটা বিশ্বের চেহারা যেমন বদলে গেছে, তেমনই মানুষের প্রেম ও বিয়ের ধরনও বদলে গেছে। একসময় আমরা দেখতাম, সফল পুরুষেরা হয় তাদের সেক্রেটারি বা সাধারণ কোনো নারীকে বিয়ে করছেন। কিন্তু বর্তমান যুগে পুরুষেরা নিজেদের সমান শিক্ষাগত যোগ্যতা ও সমান উপার্জনক্ষম নারীকে বিয়ে করতে চান। মানুষের এ প্রবণতাকে বলা হয় 'সমবৈশিষ্ট্যপূর্ণ মিলন'। কিন্তু অনেকেই জানেন না যে স্মার্ট ও সফল নারীদেরও রোমান্টিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে হাজারটা বাধাবিপত্তি পেরোতে হয়।     


যদিও সব সফল নারীই যে বিয়ে বা প্রেমের সম্পর্কে যাবেন, এমনটা নয়। ২০২০ সালের পিউ জরিপের মাধ্যমে উন্নত দেশগুলোর একটি চিত্র দেখানো হয়েছে। সেখানে দেখা গেছে, সঙ্গী খুঁজছেন এমন সিঙ্গেল আমেরিকান নারীর সংখ্যা মাত্র ৩৮ শতাংশ। কিন্তু অত্যন্ত সফল নারীরা যদি রোমান্টিক সম্পর্কে যেতেই চান, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় তাদেরকে ক্যারিয়ার বা প্রেমের মধ্যে যেকোনো একটিকে বেছে নিতে হচ্ছে। বিশ্বের প্রায় সব দেশেই বিদ্যমান এই কুৎসিত সংস্কৃতিটি পরিবর্তন করতে চাইলে আমাদেরকে পুরুষত্বের ধারণাগুলো পুনর্বিবেচনা করতে হবে। 


মুশকিলটা হচ্ছে অনেক পুরুষই যখন উপলব্ধি করেন কোনো নারী তার চাইতে বেশি স্মার্ট, তারা সেসব নারীর সাথে রোমান্টিক সম্পর্কে যেতে চান না। ২০০৬ সালে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের হেটেরোসেক্সুয়াল (বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ) শিক্ষার্থীদের নিয়ে করা একটি এক্সপেরিমেন্টে প্রমাণিত হয়, নিজের চাইতে বেশি স্মার্ট নারীদের সাথে ডেট করতে পুরুষদের আগ্রহ কম।


অন্যদিকে ক্যারিয়ারে সফল নারীরা এ প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, এটি তাদের রোমান্টিক সম্পর্কে জড়ানোর সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়। হয়তো এই দৃষ্টিকোণ থেকেই লেখিকা মরিন দাউদ তার বইয়ে লিখেছেন 'পুরুষের দরকার আছে কি?'


যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল বিচারপতি ফ্রেডেরিক ব্লক তার বইয়ে লিখেছেন, মার্কিন সুপ্রিম কোর্টের সহযোগী বিচারপতি সোনিয়া সোটোমেয়ার কোর্টে মনোনয়ন পেয়েও প্রত্যাখান করতে চেয়েছিলেন, কারণ এতে তার ডেটিংয়ে ব্যাঘাত ঘটবে। কিন্তু চারপাশে তাকালে আমরা দেখি,  সফল পুরুষদের এ ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় না। 


তবে মুদ্রার উল্টোপিঠও রয়েছে। সফল নারীরাও নিজের চাইতে কম উপার্জশীল কোনো পুরুষকে বিয়ে করতে তেমন আগ্রহী নন। শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় ও সিঙ্গাপুরের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত একটি বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এরকম অসম আয়ের জুটিদের মধ্যে বিয়ের সংখ্যা খুব কম।


তবে গবেষণায় আরও কিছু চমকপ্রদ তথ্য উঠে এসেছে। যেমন, সফল নারীরা বেশি আয় করা সত্ত্বেও এমন আচরণ করেন যাতে তার পুরুষ সঙ্গী নিজেকে দুর্বল না ভাবেন। এমনকি অনেক নারী তখন নিজের কাজের প্রতিই অনাগ্রহ দেখান! যদি কোনো উপায়ই না মেলে এবং নারী ক্রমাগত বেশি টাকা আয় করতে থাকেন, তাহলে তিনি একইসাথে গৃহস্থালি কাজ করার মাধ্যমে সেই ক্ষতি (?) পুষিয়ে দিতে চান।  কেউ কেউ আবার ভান করেন যে তার আয় তার স্বামী বা প্রেমিকের চাইতে কম!    


২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের আদমশুমারি ব্যুরোর প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায়, নারীরা প্রায়ই স্বামীর চাইতে বেশি আয় করার তথ্য জরিপকারীদের কাছে লুকিয়েছেন।


কিন্তু সবকিছু সত্ত্বেও নারীই যদি পরিবারের প্রধান জীবিকা উপার্জনকারী ব্যক্তি হন; তখনো তার স্বামী এবং ওই নারী নিজেও অখুশি থাকেন। এসব ক্ষেত্রে প্রায়ই দুজনের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ লেগে থাকে এবং বিচ্ছেদের দিকে এগিয়ে যান। তাছাড়া, টাকা আয়ই এখানে মুখ্য নয়। নারীদের ক্যারিয়ারের অন্যান্য সফলতাও তাদের ব্যক্তিগত সম্পর্কের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় বলে জানিয়েছে এই জরিপ।


এমনকি অস্কার পুরস্কারের সাথেও জড়িয়ে আছে এই সংস্কৃতি! উদাহরণস্বরূপ, এক গবেষণায় দেখা গেছে, 'সেরা অভিনেতা' শাখায় অস্কারজয়ী পুরুষদের চাইতে 'সেরা অভিনেত্রী' শাখায় একাডেমি অ্যাওয়ার্ডজয়ী নারীরা ৬৭ শতাংশ কম সময় সম্পর্কে টিকে ছিলেন। এমনকি সমানাধিকারে বিশ্বাসী বলে খ্যাত সুইডেনের গবেষণায়ও দেখা গেছে, কোনো নারীর সরকারি অফিসে চাকরি পাওয়া মানে তার বিচ্ছেদের সম্ভাবনা দ্বিগুণ হয়ে যাওয়া! 


নারীর সফলতা ও পুরুষের পুরুষত্বের এই প্রতিচ্ছেদের কারণ হতে পারে এই যে, শীর্ষ নেতৃত্বদানকারী পদে নারীদের উপস্থিতি কম। তাই যেসব নারী প্রথা ভেঙে শীর্ষ পর্যায়ে পৌঁছান এবং অসাধারণ কৃতিত্ব দেখান, পরিবারের উচিত তাদের নিয়ে গর্ব করা। কারণ তার সেই বিশালঙ্কের আয় থেকে পরিবারের পুরুষ সদস্যরাসহ সবাই-ই লাভবান হন।  


নারীদের পাশে স্বতঃস্ফূর্তভাবে দাঁড়ান এবং সমর্থন দেন, এমন পুরুষ অবশ্যই আছে। মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস তার স্বামী ডগ এমহফের সাথে যখন ডেটিং শুরু করেন, ইতোমধ্যেই তিনি ক্যালিফোর্নিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেলের পদে ছিলেন। এমহফ তার স্ত্রীর রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষাকে সমর্থন দেওয়ার জন্য নিজের আইনি পেশা ছেড়ে দেন। 


কিন্তু আমরা সবাই জানি, এ ধরনের পুরুষের সংখ্যা খুবই কম। হলিউড সিনেমায় আমরা যা দেখি—নারী সিইওকে প্রেম নিবেদনের জন্য মরিয়া জনৈক পুরুষ কর্মী—বাস্তব জগতে তা কোথায়? এরকম পুরুষের সংখ্যা কম হওয়া অবশ্যই একটি সমস্যা। কিন্তু এর কারণ হিসেবে তারা বলছেন, তারা সমাজের প্রচলিত পুরুষত্বের ধারণার সাথে একমত না হলেও সহসা এটিকে চ্যালেঞ্জ করতে পারেন না এবং এক ধরনের সামাজিক চাপ অনুভব করেন।  


প্রশ্ন হচ্ছে, এ সমস্যার সমাধান কী? সমস্যা বুঝতে পারলেই সমাধানের পথে এগোনো যায়। সফল নারীরা যে স্রোতের বিপরীতে দাঁড়িয়েছেন, সেটিকে যখন আমরা সমর্থন করব, তখন আমরা ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে পুরুষদের দেখতে শিখব। একইসাথে পুরুষত্ব ও শক্তিমত্তা সম্পর্কে সমাজের প্রচলিত ধারণায়ও পরিবর্তন আনতে পারব। তখন পুরুষেরাও সফল নারীদের সাথে ভালোবাসার সম্পর্কে যেতে দ্বিধা করবে না।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.