কিছু রহস্যময় হত্যাকান্ড, যার কারণ এখনো অজানা

 


ODD বাংলা ডেস্ক:  জন্মিলে মরিতে হয়, গানটির মত চিরন্তন সত্য মানুষের মরণ। একজন মানুষ জন্ম নিলে তার মৃত্যুর দিন এগিয়ে আসতে শুরু করে। তবে পৃথিবীতে একটা গোষ্ঠী অমরত্ব নিয়ে ভীষণ রকম টানা-হ্যাচড়া করলেও অমরত্ব যেন অদেখা এক অধ্যায়। এমনকি শিবের নিকট বহুল সাধনা আর দশবার নিজের মস্তক কাটলেও রাবণ অমরত্ব লাভ করতে পারেননি। আবার অমরত্বের অধিকারী হলে মানুষ শ' শ' বছর পরে কিভাবে বেঁচে থাকবে, তাদের শরীরের অবস্থা কি হবে সেটাও একটা বিরাট প্রশ্ন বটে। তাই অমরত্ব নয়, আজকাল খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকাটাই মানুষের জন্যে সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত একটি বিষয় হিসেবে ধরা দিয়েছে। সুতরাং দু'দিনের জীবনে চার্বাক দর্শন মতে বলতে হয়, ঋণ করে হলেও ঘি খাও।

আমার কাছে মনে হয়, পার্থিব জীবনে সুখী তারাই, যারা অনেক টাকা পয়সার মালিক। যার গাড়ি, বাড়ি আছে মূলত এই পৃথিবীটা তার জন্য। তবে অধিক সম্পত্তির মালিক হয়েও পৃথিবীতে এমন কেউ নেই যারা নিজের মৃত্যু রুখতে পেরেছে। মৃত্যু সকলের জন্য অবাধারিত। তবে সেটি যদি স্বাভাবিক মৃত্যু হয়, তাহলে খুব সহজেই মেনে নেয়া যায়। আর যদি এমন মৃত্যু হয়, যা অমিমাংসিত আর রহস্যময়, তাহলে কষ্টের যেন শেষ নেই। 


পাঠক বন্ধু আজ এমন কিছু মৃত্যুর সন্ধান দিব, যা আসলে স্বাভাবিক মৃত্যু নয়। এসব ছিল খুনের মৃত্যু। তবে এর নেপথ্য কারণ এখনো অজানা।


স্কট রুফালো হত্যাকাণ্ড


স্কট রুফালোক বিখ্যাত একজন ব্যক্তি। তবে তাকে মানুষ খুব কমই চেনে। কিন্ত তার ভাই মার্ক রুফালোকে চেনে না এমন মানুষ খুঁজে পেতে একটু বেগ পেতে হবে। তিনি হচ্ছেন অ্যাভেঞ্জার সিরিজের জনপ্রিয় অভিনেতা। আর তিনিই তার ভাইকে হারান ২০০৮ সালের ১ ডিসেম্বরে। মাথায় ঠাসা বুলেটসহ স্কটের দেহ ব্রেভারী হিলে অবস্থিত তার নিজ অ্যাপার্টমেন্ট থেকে উদ্ধার করা হয়। তার বাম হাতে বুলেট ছোড়া পিস্তলটিও পাওয়া যায়। এই ঘটনার পর তার দেহ উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। আর এর ঠিক এক সপ্তাহ পর তিনি মারা যান।

 

তবে এই ঘটনা শুনে যা কারোই এটা আত্মহত্যা মনে হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু বিপত্তি ঘটে ঠিক লাশের ময়না তদন্তের পর। এই রিপোর্টে বলা হয়, এটি কোন আত্নহত্যা নয়, বরং হত্যাকান্ড। মুলত এমনটি ভাবার মূল কারণ ছিলো– মাথা ছাড়াও স্কটের দেহে আরো একটি বুলেটের দাগ পাওয়া যায়। এই বুলেট শরীরে প্রবেশের পরেই তিনি নিস্তেজ হয়ে পড়েন। অন্যদিকে মাথার বুলেট কেবল তার নির্ঘাত মৃত্যু নিশ্চিত করেছে! এখানে সন্দেহের কথা– প্রথম যে বুলেটটি তার শরীরের ছোড়া হয় তা অন্য একটি পিস্তলের ছিলো! অর্থাৎ দুই পিস্তলের বুলেটে তিনি মরেছেন।  


এরপর পুলিশ এটিকে হত্যাকান্ড হিসেবে আখ্যায়িত করে। হত্যাকান্ডের এই মামলায় প্রথমে নাম আসে স্কটের ক্লায়েন্ট সাহা মিশাল অ্যাডাম ও তার প্রেমিক ব্রায়ান স্কফিল্ডের উপর। হত্যাকান্ডের সময় তারা সেই অ্যাপার্টমেন্টের মধ্যেই ছিলেন। তাদের কাছে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, রাশিয়ান রউলেট খেলতে গিয়ে স্কট নিজের মাথায় নিজে বন্দুক রেখে গুলি করেন। কিন্তু পুলিশ তাদের বক্তব্যে খুব একটা সন্তুষ্ট হতে পারছিলেন না। অন্যদিকে উপযুক্ত কোন প্রমাণও পুলিশের হাতে নেই। তাই মামলাটি থেমে যায়। পরবর্তীতে ২০১২ সালে ঘটে নতুন মোড়। মামলার প্রধান ব্যক্তি মিশাল অ্যাডাম ড্রাগের ওভারডোজের কারণে মারা যায়। সুতরাং সকল প্রমাণ বিলুপ্ত হয়ে যায়। এরপর এই মামলাটি এখনো অমিমাংসিত বা অসম্পূর্ণ থেকে গেছে।


জো কোল হত্যাকাণ্ড  


জো কোল। তিনিও বেশ পরিচিত একজন ব্যক্তির সন্তান। মূলত তিনি ষাট ও সত্তর দশকের বিখ্যাত টিভি ও সিনেমা অভিনেতা ড্যানিশ কোলের ছেলে। ১৯৯২ সালের ১৯ ডিসেম্বর ডাকাতদের আক্রমণে তার মৃত্যু হয়। ঘটনার দিন রাতে জো এবং ব্ল্যাক ফ্যাগ প্রতিষ্ঠাতা হেনরি রোলিনস একটি দোকান থেকে বের হতেই কয়েকজন তাদেরকে ঘিরে ধরে। তারা তাদের দুজনের কাছ থেকে চাঁদা দাবি করে। জো তাদের ৫০ ডলার দেন। কিন্তু ডাকাতদলের সদস্যরা তাদের দুজনকে বাড়ি থেকে আরো অর্থ এনে দেয়ার প্রস্তাব করেন। এরপর ডাকাত দল তাদের মাথায় বন্দুক ধরে বাড়িতে নিয়ে আসে। 


বাড়ির ঠিক সামনে আসতেই ডাকাতরা তাকে গুলি করে। এসময় রোলিনস বাড়ির পেছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে যান। পরবর্তীতে মুখোশধারী এসব ডাকাতদের আর উন্মোচন করা সম্ভব হয় নি। অন্যদিকে রোলিনস জোয়ের রক্তভেজা মাটি একটি কন্টেইনারে স্মৃতিসরূপ দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করে রাখেন। পরবর্তীতে তিনি তার অ্যালবামে অনেক গানও জোকে উৎসর্গ করেন। এইখানেই মূলত মৃত্যুটি অমীমাংসিত হয়ে আছে।


রাফেল জোস ভার্গারা হত্যাকাণ্ড


রাফেল জোস ভার্গারা। টিভি মিডিয়ার অনেকেই বিখ্যাত আমেরিকান টিভি শো ‘মর্ডাণ ফ্যামিলি স্টার’ সোফিয়া ভার্গারাকে চিনে থাকবেন। জনপ্রিয় এই ব্যক্তির ভাই হচ্ছেন রাফেল জোস ভার্গারা। তিনি তার ভাইকে হারান আজ থেকে প্রায় ২৩ বছর আগে ১৯৯৬ সালের ১২ আগস্ট। জো কোলের মত রাফেলও আততায়ীর হাতে খুন হন। পুলিশ যখন হন্যে হয়ে হত্যাকারীদের খুঁজছে তখন সে তদন্তে জল ঢেলে দিলেন স্বয়ং সোফিয়াই। 


তিনি বলেন, কয়েকজন লোক ভুলে করে তার ভাইকে অপহরণ করেছিলো। পরবর্তীতে মুক্তিপণ না পেয়ে হত্যা করেছে। অ্যাডিশনাল ইনফরমেশন হিসেবে তিনি বলেন, দুই বছর আগেও রাফেলের সঙ্গে এমন অপহরণের ঘটনা ঘটেছিলো। তখন তিনি ভালো পরিমাণ মুক্তিপন দিয়েছিলেন এবং এটা হয়ত সেই ঘটনার সঙ্গেই যুক্ত। কিন্তু সোফিয়া কিভাবে এতটা নিশ্চিত হলেন? পুলিশের এমন প্রশ্নের জবাবে কোন সদুত্তর না পেলেও এই মামলাটি এখন বন্ধ করে রাখা হয়। ঘটনাতে নতুন মোড় আসে ১৭ বছর পর ২০১৩ সালে।


একজন ব্যক্তিগত গোয়েন্দা দাবি করেন, এই হত্যাকান্ডের সঙ্গে নিবিড় যোগসূত্র রয়েছে কলম্বিয়ান নেতা নরতে ডেন ভ্যালের ড্রাগ ডিলার ডিয়েগো মনটয়া সানচেজের সঙ্গে। কিন্তু এই খবর মিডিয়াতে আসার কিছুদিন পরেই সোফিয়া একটি টুইট দিয়ে এমন খবর অস্বীকার করেন! ভাই হত্যায় সোফিয়ার এমন সব কাণ্ডে রহস্যের গন্ধকে আরো তীব্র করে দিয়েছে।  

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.