লেড বা সীসা যদি বিষাক্ত হয়, তবে লেড পেন্সিল থেকে কেন বিষক্রিয়া হয় না?



 ODD বাংলা ডেস্ক: লেড বা সীসা একটি বিষাক্ত পদার্থ। তারমানে কি লেড পেন্সিল ভুলক্রমে মুখে দিয়ে দিলে বা শরীরের সংস্পর্শে আসলে লেড পয়জনিং বা বিষক্রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে?


পাঠকদের এমন প্রশ্নের সাপেক্ষেই ১৮৬৮ সালে মার্কিন পত্রিকা ফিলাডেলফিয়া প্রেস তাদের এক প্রবন্ধে খোলাসা করে বিষয়টি।


প্রবন্ধে লেখক লিখেন, "সবাই জানে লেড পেন্সিল কী। কিন্তু তারা সাধারণত এই ব্যাপারটা জানে না যে এসব পেন্সিলে লেডের একটি কণাও থাকে না।"


ওয়াশিংটন পোস্টের একটি নিবন্ধে বলা হয়েছে, লেড পেন্সিলে যেটা থাকে সেটি হলো- গ্রাফাইট (কার্বনের একটি রূপভেদ)।  প্রকৃতপক্ষে লেড পেন্সিল কখনোই লেড বা সীসা দ্বারা তৈরি হয়নি।


তাহলে কেন এই নাম? ১৫০০ শতকে ইংল্যান্ডে যখন প্রথমবারের মতো গ্রাফাইটের খনি আবিষ্কৃত হয় তা দিয়েই প্রথম পেন্সিল বানানো হয়। রসায়ন বিদ্যা সেসময় ছিলো বিজ্ঞানের নবীন একটি শাখা। ফলে তখনকার বিজ্ঞানীরা ধারণা করেছিলেন, গ্রাফাইট সীসার একটি রূপভেদ; যদিও পরে তা ভুল প্রমাণিত হয়। তবে ততোদিনে গ্রাফাইটের পেন্সিল লেড পেন্সিল নামেই জনপ্রিয়তা পেয়ে যায়।


'সায়েন্টিফিক আমেরিকান' ম্যাগাজিনে পুনর্মুদ্রিত এই প্রবন্ধে পেন্সিলের ইতিহাস অনুসন্ধান করতে গিয়ে, ১৫৬৪ সালে ইংল্যান্ডের কম্বারল্যান্ডে গ্রাফাইট আবিষ্কারের সঙ্গে পেন্সিলের যোগসূত্রের কথা তুলে ধরা হয়।


প্রবন্ধে লেখা হয়েছে, "গ্রাফাইট যতদিন টিকে ছিল, ততদিন বিশ্বের সবচেয়ে সেরা পেন্সিলগুলো সরবরাহের ক্ষেত্রে একচেটিয়া আধিপত্য ছিল ইংল্যান্ডের।"


প্রথমে, খনি থেকে কাটা গ্রাফাইটের পুরো কাঠি ব্যবহার করে পেন্সিলের ভিতরের অংশ ভরাট করতো নির্মাতারা। কিন্তু ধীরে ধীরে খননের কারণে গ্রাফাইটের অস্তিত্ব হ্রাস পেতে শুরু করে। খনিগুলোয় বাকি থাকে কেবল গ্রাফাইট পাউডার। তবে সৌভাগ্যবশত, তখন পাউডারের সঙ্গে মাটি মিশিয়ে পেন্সিলের জন্য নতুন ফর্মুলা আবিষ্কার করেন ফরাসি নির্মাতারা।


এই প্রবন্ধ অনুসারে, ১৮৪০'র দশকে সাইবেরিয়ায় বসবাসকারী এক ফরাসি নাগরিক, পিটার আলিবার্ট এক সাইবেরিয়ান পর্বতে গ্রাফাইট খুঁজে পান। এরপর এর উৎস খুঁজতে খুঁজতে মাউন্ট বাটুগল নামের এক পর্বতে গ্রাফাইটের সমৃদ্ধ খনি সন্ধান পান। রাশিয়ান সরকার এই আবিষ্কারে এতটাই খুশি হয়েছিল যে তারা পরবর্তীতে পর্বতটির নামই পরিবর্তন করে রেখেছিল মাউন্ট আলিবার্ট।


আলিবার্ট বাভারিয়ান ফেবার পরিবারকে গ্রাফাইট সরবরাহ শুরু করেন, যা প্রবন্ধ অনুসারে বাভারিয়ার স্টেইন শহরকে 'আক্ষরিক অর্থে পেন্সিল কারখানার শহরে পরিণত করেছিল। আর তখন ব্যারন ফেবার শাসক হিসেবে শহরে বসবাসবাসকারীদের স্বাস্থ্য, সরকার, শিক্ষা, শিল্প এবং বিনোদনের দিকে খেয়াল রাখতেন।'


পনেরো বছর পর সাইন্টিফিক আমেরিকান আবারও পেন্সিলের প্রসঙ্গে ফিরে আসে। তারা এবার ব্যাখ্যা করে কীভাবে প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন পেন্সিলকে উন্নত করেছে। খাঁটি গ্রাফাইটের কাঠি থেকে তৈরি পেন্সিলগুলো দিয়ে লেখার আগে পেন্সিলকে ভেজাতে হতো, গ্রাফাইট-মাটির মিশ্রণে তৈরি পেন্সিলে যে ঝামেলা ছিল না। এই মিশ্রণে অনুপাত পরিবর্তন করে সামঞ্জস্যতা আনার ব্যবস্থাও ছিল। 


পেন্সিলের মাথা ছোট-বড় করার ব্যবস্থাও তখনই করা হয় প্রথমবারের মতো। 


আরও এক দশক পর, সাইন্টিফিক আমেরিকানের ১৯০৩ সালের সংস্করণে নিউইয়র্ক শহরের একটি পেন্সিল কারখানার ছবি ছাপানো হয়েছিল। ছবির সহনিবন্ধে বলা হয়, ফেবার পরিবারের একজন সদস্য আমেরিকান বাজারে পেন্সিল সরবরাহের জন্য স্থাপন করেছে কারখানাটি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শ্রমিকদের মজুরি জার্মানির চেয়ে বেশি থাকায় নতুন শ্রম-সংরক্ষণকারী যন্ত্রপাতি আবিষ্কার করে তারা। 

 

সাইবেরিয়া, মেক্সিকো এবং সিলন থেকে গ্রাফাইট উত্তোলন এবং পরিশোধন থেকে শুরু করে পেন্সিলের নিচে পিতলের ক্যাপে রাবার ইরেজারের আঠা লাগানো পর্যন্ত পুরো প্রক্রিয়াটিই বর্ণনা করা হয় এই প্রবন্ধে। 


তারপর পেন্সিল তৈরির প্রক্রিয়া প্রযুক্তিগতভাবে আরও অত্যাধুনিক হয়েছে, সন্দেহ নেই। কিন্তু পেন্সিলের মূল কাঠামো একই রকম রয়ে গেছে।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.