নিলামে উঠছে ৩.৫ মিলিয়ন ডলারের রত্নখচিত চশমা!
ODD বাংলা ডেস্ক: আগামী মাসে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এক নিলামে ১৭শ শতকের দুটি চশমা কয়েক মিলিয়ন ডলার বাগিয়ে নিতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। রত্ন-আচ্ছাদিত এ চশমাগুলোর একটির লেন্স সবুজ রঙা, এবং অন্যটির সাদা।
লেন্সগুলোতে কাচের পরিবর্তে হীরা এবং পান্না ব্যবহার করা হয়েছে। একসময় ভারতীয় উপমহাদেশ শাসন করা মোগল রাজবংশীয়রা এ চশমা ব্যবহার করতেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আগামী মাসে নিলামে বিক্রির আগে চশমা দুটি প্রথমবারের মত নিউইয়র্ক, হংকং এবং লন্ডন সফর করার সময় জনসম্মুখে প্রদর্শিত হবে। নিলাম প্রতিষ্ঠান সোথবি'স-এর নিউইয়র্কের শোরুমে ১৭ থেকে ১৯ সেপ্টেম্বর এ চশমা দুটি প্রদর্শিত হবে।
সোথবি'স এর মধ্যপ্রাচ্য ও ভারত বিভাগের চেয়ারম্যান এডওয়ার্ড গিবসের মতে, চশমাগুলো মোগলদের ব্যবহৃত কারুকাজখচিত গয়নার মধ্যে একটি অসাধারণ বিরল উদাহরণ। "আমরা যতদূর জানি, এ চশমাগুলোর মতো অন্য কিছুই নেই," বলেন গিবস।
চশমাগুলো বিরল হওয়ার পাশাপাশি তাদের রত্ন পাথরের-তৈরি লেন্সের নিখুঁত আকারও অতুলনীয়। "হালো অব লাইট" নামে পরিচিত সাদা চশমাটির একজোড়া লেন্স ২০০ ক্যারেটের একটি হীরা থেকে নেওয়া করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বর্তমান ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশ এবং তেলেঙ্গানার একটি অঞ্চল গোলকন্ডায় পাওয়া যায় ঐ হীরা। সোথবি'স এর অনুমান, আসল হীরাটি "সম্ভবত এ পর্যন্ত পাওয়া সবচেয়ে বড়" হীরা ছিল।
অন্যদিকে "গেট অব প্যারাডাইস" নামক দ্বিতীয় জোড়াটির সবুজ লেন্স দুটি ৩০০ ক্যারেটের কলম্বিয়ান পান্না থেকে কাটা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
যেসকল রত্ন পাথর থেকে চশমাগুলো তৈরি, তা থেকে সেগুলোর আসল মালিকের পরিচয় সম্বন্ধে কিছুটা ধারণা পাওয়া যায়। গিবস অনুমান করেছিলেন, চশমাগুলো কেবল একজন সম্রাট, তার অভ্যন্তরীণ দল, কিংবা উচ্চপদস্থ দরবারের কারো হতে পারে। তিনি বলেন, "এই আকার, মাত্রা বা মূল্যের যে কোন রত্নপাথর সরাসরি মোগল দরবারে আনা হত।"
তাছাড়া, রত্ন পাথরগুলো ইসলামী এবং ভারতীয় ঐতিহ্যে অত্যন্ত মূল্যবান ছিল। একইসাথে আধ্যাত্মিকতার সাথে শক্তিশালী সম্পর্ক ছিল পাথরগুলোর। গিবসের মতে, ভারতীয় সমাজে "স্বর্গীয় আলো" এবং "জ্ঞানার্জন" এর সাথে যুক্ত ছিল হীরা। উজ্জ্বল এ পাথরগুলোকে "মহাজাগতিক শক্তির বাহন" হিসেবে বিশ্বাস করা হতো। ধারণা করা হতো, এদের মাধ্যমে মহাজগত এবং পৃথিবীর মধ্যে সংযোগ সম্ভব।
অন্যদিকে, এই পান্না-রঞ্জিত চশমাগুলোর মাধ্যমে বিশ্ব দেখার ব্যাপারটি মোগল শাসকদের কাছে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে বলে গিবসের ধারণা।
রাজকীয় নজির
মুঘল সাম্রাজ্য দক্ষিণ এশিয়া জুড়ে গহনার কারুকাজকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য বিখ্যাত ছিল। এই চশমাগুলো তাদের আলঙ্করিক প্রতিভার একটি উদাহরণ মাত্র। গিবসের মতে, ১৭শ শতকে ভারতীয় উপমহাদেশ ছিল "পৃথিবীতে হীরার একমাত্র উৎস"।
বাস্তবিকভাবেই এ অঞ্চলটি ছিল সে যুগের সর্বাধিক উন্নত কলা-কৌশলের আবাসস্থল। গিবস বলেন, এই লেন্সগুলো তৈরির জন্য "অসাধারণ প্রযুক্তিগত এবং বৈজ্ঞানিক দক্ষতার প্রয়োজন।" মোগল কারুকার্যকারীরা নিজ হাতে এ সকল রত্ন পাথর খোদাই করতেন বলে সেখানে ভুলের কোন সুযোগ ছিল না।
তিনি আরও বলেন, "পাথর কাটা এবং সঠিক আকৃতি বজায় রাখা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ কাজ। এতে ভুল হলে আপনি পাথরটি ব্যবহার করতে পারবেন না।"
এছাড়া, গিবসের মতে, ইউরোপ থেকে মোগল দরবার পরিদর্শনকারী রত্নবিজ্ঞানীরা সম্ভবত চশমার নকশাকে প্রভাবিত করেছিলেন। তিনি চশমাগুলোকে "ইউরোপীয় এবং ভারতীয় প্রযুক্তি ও ধারণার মিলন" হিসাবে বর্ণনা করেন।
জেসুইট মিশনারিদের পরিহিত 'পিন্স-নেজ' চশমা মোগলদের এ চশমার আসল ফ্রেমগুলোকে প্রভাবিত করতে পারে বলে তার ধারণা। প্রসঙ্গত, পিন্স-নেজ চশমাগুলো নাকের ডগায় পরা হতো, এবং সেগুলোর দু পাশে কোনো হাতল ছিল না। মোগলদের এ চশমা দুটির ফ্রেম ১৯ শতকের শেষের দিকে পরিবর্তন করে গোলাপ-কাট হীরার তৈরি রিম এবং ফ্রেম বসানো হয়।
গিবস জানান, রোমান সম্রাট নিরো রঙিন লেন্সের চশমা পছন্দ করতেন। রোমান গ্ল্যাডিয়েটর গেমসে "রক্ত থেকে তার চোখকে শান্ত" করার জন্য সবুজ রত্ন চশমা পরতেন তিনি।
এদিকে ফ্রান্সের রাজা পঞ্চম চার্লস ১৪শ শতকে পান্নার তৈরি চশমা পরতেন বলে মনে করা হয়। সোথবি'স- এর মতে, একই ধরনের গল্প মোগল সম্রাট শাহজাহানকে ঘিরেও প্রচলিত। তার স্ত্রী মমতাজের মৃত্যুর পর নিজের কান্নারত চোখকে বিশ্রাম দেওয়ার জন্য এ সম্রাট পান্না ব্যবহার করেছিলেন বলে জানা যায়।
সোথবি'স- এর অনুমান, এ দুই জোড়া চশমার প্রত্যেকটি ১.৫ মিলিয়ন পাউন্ড থেকে ২.৫ মিলিয়ন পাউন্ডে (২.১ মিলিয়ন ডলার থেকে ৩.৫ মিলিয়ন ডলার) বিক্রি হবে।
শতাব্দী পুরনো হলেও চশমাগুলোর ঝলমলে ফ্রেম এবং লেন্সের সরু আকার লক্ষণীয়ভাবে 'ট্রেন্ডে' রয়েছে। হিপ-হপ গ্রুপ মিগোস-এর সদস্যরা তাদের হীরা-খচিত কারটিয়ার চশমাগুলোর জন্য পরিচিত। অন্যদিকে কাইলি জেনারকে মেট গালা এবং সামাজিক মাধ্যমে অস্বচ্ছ রত্নখচিত চশমা পরতে দেখা গেছে।
গিবস বলেন, "উজ্জ্বল পাথর এবং চকচকে জিনিসের তৈরি গয়নার আকর্ষণ সব যুগেই রয়েছে। বর্তমান পপ তারকা এবং সেলিব্রিটিদের ব্যবহৃত গয়না, ভারতীয় গয়নাগুলোর স্থায়ী শৈলী এবং পরিশীলনের প্রমাণ।"
Post a Comment