মেসি পেনাল্টিতে কতটা খারাপ? রোনালদোর রেকর্ডই-বা কেমন?

 


ODD বাংলা ডেস্ক: বন্ধুত্বের টান বুঝি একেই বলে! রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে পেনাল্টিতে ব্যর্থ হয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন লিওনেল মেসি কিন্তু নেইমারের যেন প্রিয় বন্ধুর এত সমালোচনা সহ্য হলো না। বার্সেলোনার সময় থেকে শুরু বন্ধুত্বটা এখন পিএসজিতেও রং ছড়ায়। সেই ‘বন্ধুত্বের’ টানেই কিনা গত শনিবার লিগে নঁতের বিপক্ষে পেনাল্টি মিস করলেন নেইমারও।


কিন্তু কোথায় নঁতে আর কোথায় রিয়াল মাদ্রিদ! চ্যাম্পিয়নস লিগের সামনেও ফরাসি লিগ নিশ্চয়ই গুরুত্বের বিচারে পাত্তা পাবে না। মেসির পেনাল্টি মিস তাই এখনো আলোচনায়। এমনিতেই ক্যারিয়ারজুড়ে পেনাল্টিতে মেসির দুর্বলতা নিয়ে সমালোচনা হয়েছে অনেক, এই মৌসুমে তাঁর পারফরম্যান্সও নেতিবাচক শিরোনামে আসছে বারবার। রিয়াল ম্যাচের পর সমালোচনা দুদিক থেকেই বেড়েছে।


তা পরিসংখ্যান কী বলে? মেসির পেনাল্টি রেকর্ড আসলে কেমন?


২০১২ চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালে বার্সার বিদায়ের পথে চেলসির বিপক্ষে দ্বিতীয় লেগে পেনাল্টি মিস, ২০১৬ কোপা আমেরিকার ফাইনালে টাইব্রেকারে শট বার উঁচিয়ে মারা…চাপের মুহূর্তে পেনাল্টিতে মেসির সাফল্য নিয়ে বিতর্ক পুরোনো। এবার রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে মাত্র প্রথম লেগেই খেলেছে পিএসজি, তাতে শেষ মুহূর্তে কিলিয়ান এমবাপ্পের গোলে জিতেছে কিন্তু শেষ পর্যন্ত দুই লেগ মিলিয়ে পিএসজি শেষ ষোলোতে বাদ পড়ে গেলে মেসির পেনাল্টি নিয়ে আলোচনায় আবার পারদ চড়বে নিশ্চিত।


রিয়ালের বিপক্ষে ম্যাচের পেনাল্টি দিয়ে ক্যারিয়ারে ৩০তম পেনাল্টিতে গোল করতে ব্যর্থ হলেন মেসি। আর শুধু চ্যাম্পিয়নস লিগে হিসাব করলে টাইব্রেকারের বাইরে এ নিয়ে পঞ্চমবার পেনাল্টিতে ব্যর্থ মেসি রেকর্ডই ছুঁয়েছেন, এর আগে চ্যাম্পিয়নস লিগে পাঁচটি পেনাল্টিতে ব্যর্থতার রেকর্ড ছিল শুধু থিয়েরি অঁরির।


তবে ফুটবলবিষয়ক ওয়েবসাইট ইএসপিএন জানাচ্ছে, পূর্বাপর বিবেচনায় না নিলে মেসির ৩০টি পেনাল্টিতে ব্যর্থতার পরিসংখ্যান অনেক চমকজাগানিয়া মনে হতে পারে। পূর্বাপর বিবেচনায় নিলেও অবশ্য মেসির জন্য হতাশাজনক তথ্য এটি যে পেনাল্টিতে তাঁর রেকর্ড একেবারে খারাপ না হলেও তাঁর অবিশ্বাস্য মানের তুলনায় একেবারেই গড়পড়তা। টাইব্রেকার বাদ দিয়ে হিসাব করলে, এ পর্যন্ত ক্লাব ক্যারিয়ারে ১১০টি পেনাল্টি নিয়েছেন, তার ৮৪টিতে গোল পেয়েছেন। আর্জেন্টিনার জার্সিতে ২২ পেনাল্টিতে গোল ১৮টি। সব মিলিয়ে তাই রেকর্ডটা হলো—১৩২ পেনাল্টিতে ১০২ গোল, ৩০ মিস।


অর্থাৎ ক্যারিয়ারে ৭৭.৩ শতাংশ পেনাল্টিতে গোল করতে পেরেছেন মেসি। যেটি হতশ্রী নয় মোটেও, তবে গড়পড়তা ঠিকই। ইএসপিএন জানাচ্ছে, ২০০৬-০৭ মৌসুম থেকে এ পর্যন্ত হিসাব করলে ইউরোপের সেরা পাঁচ লিগে পেনাল্টিতে সাফল্যের গড় হারই ৭৭.১ শতাংশ!


আর হিসাবটা যদি ২০১০ সাল থেকে করা হয়, সে ক্ষেত্রে লিগ ও চ্যাম্পিয়নস লিগ মিলিয়ে মেসি তাঁর নেওয়া পেনাল্টির ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রেই গোল পেয়েছেন (৮৬ পেনাল্টিতে ৬৯ গোল)। এ সময়ে ইউরোপের সেরা পাঁচ লিগ ও চ্যাম্পিয়নস লিগে পেনাল্টিতে সাফল্যের গড় হার ৭৭ শতাংশ। গত ১২ বছরের হিসাবে গড়ের চেয়ে খানিকটা ওপরে থাকছেন মেসি।


পেনাল্টিতে সাফল্যের বিচারে মেসির সবচেয়ে সেরা মৌসুম কেটেছে ২০১১-১২ মৌসুমে। সেবার ক্লাব বার্সেলোনা ও আর্জেন্টিনা জাতীয় দল মিলিয়ে ১৯টি পেনাল্টির ১৫টিতে গোল পেয়েছেন। আর এক মৌসুমে পেনাল্টিতে সবচেয়ে বেশি ব্যর্থতা দেখেছেন ২০১৫-১৬ মৌসুমে, সেবার আট পেনাল্টির চারটিতেই ব্যর্থ ছিলেন মেসি।


গোলের ডান দিকে মেরে পেনাল্টিতে তুলনামূলক বেশি সাফল্য পেয়েছেন মেসি। ২০১০ সাল থেকে লিগ ও চ্যাম্পিয়নস লিগের তথ্য নিয়ে ইএসপিএন দেখাচ্ছে, এ সময়ে যে ৬৯টি পেনাল্টি মেসি নিয়েছেন, এর ৩৩টি মেসি মেরেছেন ডান দিকে, ২০টি বাঁ দিকে আর ১৬টি মেরেছেন গোলপোস্টের ঠিক মাঝে।


ঠেকিয়েছেন কোর্তোয়া। একটি ঠেকিয়েছেন, আরেকটি মেসি বাইরে মেরেছেন—মেসির বিপক্ষে কোর্তোয়ার মতো এমন রেকর্ড আছে রায়ো ভায়েকানোর সাবেক গোলকিপার রুবেন মার্তিনেজেরও। শুধু এসপানিওলের গোলকিপার দিয়েগো লোপেসই দুবার মেসির শট ঠেকিয়েছেন।


১২ গজ দূরে বল বসিয়ে মারার ক্ষেত্রে রেকর্ডটা তেমন ভালো না হলেও মেসির অতৃপ্তি ঘুচতে পারে এটিতে যে ফ্রি-কিকে তাঁর রেকর্ড এর চেয়ে অনেক ভালো। ২০১০ সাল থেকে লিগ ও চ্যাম্পিয়নস লিগে ফ্রি-কিকে মেসির সাফল্যের হার ৯ শতাংশ—৫২৪টি ফ্রি-কিক নিয়ে গোল পেয়েছেন ৪৮টি। তবে হিসাবটা ২০১৮-১৯ থেকে করা হলে মেসির সাফল্যের হার অনেক বেড়ে যাবে। এ সময়ে ১১৭ ফ্রি-কিকে ১৯ গোল মেসির।


এই পরিসংখ্যানে মেসির চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে নিয়ে এলে পার্থক্যটা চোখে পড়ার মতোই হবে। ইএসপিএনের তথ্য, ২০১৮ সালের জুলাইয়ে জুভেন্টাসে যোগ দেওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত ৭০টির বেশি ফ্রি-কিক নিয়ে মাত্র ১টিতে গোল পেয়েছেন রোনালদো। তবে পেনাল্টিতে রোনালদোর রেকর্ড মেসির চেয়ে অনেক ভালো। ক্যারিয়ারে ১৭২টি পেনাল্টি নিয়ে ১৪৩টিতে বল জালে জড়িয়েছেন ৩৭ বছর বয়সী পর্তুগিজ ফরোয়ার্ড।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.