যেখানে ৬৫ বছরের নারীদের মনে হয় ৩০ বছরের যুবতী

ODD বাংলা ডেস্ক: আমাদের গড় আয়ু কত? ৬০ বা ৬৫ হবে। কিন্তু যদি বলি পৃথিবীতে এমন একটি স্থান আছে, যেখানকার মানুষের গড় আয়ু ১৫০ বছরের মত , শুনে অবাক হবেন নিশ্চয়! সেখানে আপনার সামনে দিয়ে কোনও সুন্দরী নারী হেঁটে চলে গেলে, ভুলেও তাঁকে নিয়ে আকাশ-কুসুম ভেবে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখবেন না। কারণ ওই নারীর বয়স হয়তো আপনার মায়ের থেকেও বেশি। রহস্যময় এই মানুষগুলো বাস করে পাকিস্তানের গিলগিট-বাল্টিস্তান প্রদেশের হুনজা উপত্যকায়। এতটুকুও বাড়িয়ে বলা হচ্ছে না। প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর এই এলাকার মহিলারা চিরযুবতী।

একজন ৮০ বছরের বৃদ্ধাকেও হাসতে হাসতে ৩০-৩৫ -এর যুবতী হিসেবে চালিয়ে দেওয়া যায়। আর যেটা সবচেয়ে আশ্চর্যের, ৬০ বছর বয়সে মা হওয়াটা এখানে খুবই স্বাভাবিক। হামেশাই হচ্ছে। ৯০-এর বৃদ্ধও হচ্ছেন ফুটফুটে সন্তানের গর্বিত বাবা। হানজা সম্প্রদায় খুবই সুসংগঠিত এবং ইতিহাস সমৃদ্ধ একটি জনগোষ্ঠি। হাজার হাজার বছর ধরে তারা এই অঞ্চলে বসবাস করছে। এদের রয়েছে অর্নারারী রাজ বংশ, রাজা, রানী এমনকি রাজ ভবনও।

বহু আগে কাজাখ সহ বিভিন্ন সম্প্রদায় এখানে হামলা চালাতে আসতো। যুদ্ধের জন্য তাদের ছিলো কামান সহ বিভিন্ন হাতিয়ার। শত্রু ঠেকাতে খাড়া পাহাড়ের উপর তারা ফোর্ট বা দুর্গ নির্মান করতো। এমন কয়েকটা দুর্গ এখনো রয়েছে, যা খুবই জনপ্রিয় পর্যটন স্পট। এই উপত্যকার জনসংখ্যা প্রায় ৮৭,০০০। গড় আয়ু ১৫০ বছর। সেঞ্চুরি পার করা বৃদ্ধও এখানে দিব্যি সুস্থ-সবল, তরতাজা। রোজ ভোর ৫ টায় ঘুম থেকে উঠে কাজে লেগে পড়েন এখানকার মানুষ।

খান সম্পূর্ণ রাসায়নিক বর্জিত একেবারে খাঁটি প্রাকৃতিক সম্পদে ঠাসা খাবার। তীব্র ঠাণ্ডায় চারপাশ জমে গেলেও কনকনে ঠাণ্ডা জলেই স্নান। এককথায় অতি সাদামাটা, কৃত্রিমতা বর্জিত জীবন যাপন। হতে পারে সেখানেই লুকিয়ে রয়েছে এঁদের চিরযৌবনের রহস্য। এমনকি হানজা সম্প্রদায়ের মানুষের সৌন্দর্য এবং আয়ু কেন এত বেশি তা জানার জন্য অনেক ধরনের গবেষণা পরিচালিত হয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, তাদের বিশুদ্ধ এবং পরিকল্পিত জীবন ব্যাবস্থা এর প্রধান কারন।

তারা দিনে দুই বেলা খায় এবং অনেক কায়িক পরিশ্রমের কাজ করে। এই সম্প্রদায়ের ৯৯ শতাংশ মানুষই ভেজিটেরিয়ান এবং তাদের খাদ্যদ্রব্যগুলোর বেশিরভাগই তৈরি পনির, দুধ, বাদাম এবং অন্যান্য দুগ্ধজাত পণ্য থেকে। শিশুকাল থেকেই এই সম্প্রদায়ের মেয়েদের সৌন্দর্য বিকশিত হতে শুরু করে। এসব নারীর সৌন্দর্যের একটি গোপন রহস্য হলো তারা পানির চেয়ে ফলের রসের তৈরি জুস/শরবত পান করে বেশি।

এছাড়া তারা তাদের অবিশ্বাস্য সৌন্দর্যের আরেকটি কারণ হলো যোগব্যায়াম। দিনের কাজ শুরু করার আগে সকালে তারা কমপক্ষে ৩ ঘণ্টা যোগব্যায়াম করে। উপত্যকায় বাস করা এই হানজা সম্প্রদায়ের মানুষ নিয়মিত শ্বাসক্রিয়ার ব্যায়াম করে, যা তাদের চর্ম ও শরীরকে নানাভাবে উপকৃত করে। একটা কথা প্রচলিত আছে যে, কাশ্মীরের নারীরা পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরী নারী। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো হানজা নারীদের দেখলে আপনি কনফিউশনে পরে যাবেন যে, কারা আসলে বেশি সুন্দরী ! এখানকার মেয়েরা খুবই লাজুক, সহজে অপরিচিত পুরুষ বা ক্যামেরার সামনে আসতে চায় না।

বিভিন্ন উৎসবে এরা তাদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পড়ে নাচ-গান করে। এখানকার প্রধান উৎসব হচ্ছে ঈদ উল ফিতর, ঈদ উল আজহা, ঈদ ই মিলাদুন্নবির মত বিভিন্ন ইসলামিক উৎসব।

তারা নিজেদের ভেতর বিবাহের মাধ্যমে বংশ ধারা অব্যহত রাখে। অবশ্য ভারত দখলকৃত কাশ্মীরে এতদিন আইন ছিলো কাশ্মীরের তরুনীদেরকে বাহিরের কেউ বিয়ে করতে পারবে না, তবে পাকিস্তানে এই আইন নেই, তাই পরিবার রাজি হলে যে কেউ তাদেরকে বিয়ে করতে পারে। ( পেইজে হানজা নারীদেরকে নিয়ে আরেকটা পোস্ট দিয়েছি, সেটা দেখুন)

তারা যেসব খাদ্য খায় তা সবই নিজেদের উৎপাদিত। বিভিন্ন ধরনের খাদ্যশস্য উৎপাদনের পর নিজ পরিবারের প্রয়োজন মেটাতে সারা বছরের জন্য মজুদ করে রাখা হয়। ফসল উৎপাদনে তারা ব্যাবহার করেনা কোনো রাসায়নিক সার বা কোনো কিটনাশক। আর খাদ্যে ভেজাল মেশানোর তো প্রশ্নই আসেনা।

তাছাড়া এই অঞ্চলের ৯৫% জনগনই মুসলিম। তারা সব ধরনের ইসলামী রীতিনীতি মেনে জীবন পরিচালনা করে, যা তাদের সুস্থ-সবল জীবন যাপনের অন্যতম রহস্য। এছাড়া আরেকটা আশ্চর্যজনক ব্যাপার হলো হানজায় শিক্ষার হার ৯০% !

যেখানে আমাদের শহরাঞ্চলের শিক্ষার হারও আরো অনেক কম ! তাই আপনি যদি এদেরকে ব্যাকডেটেড মনে করেন, তাহলে চরম ভুল করবেন। প্রকৃতপক্ষে এরাই পার্ফেক্ট লাইফ লিড করে, আর আমরা জাঙ্ক, ভেজাল আর ঝামেলায় ভরা লাইফে আটকে আছি। আমার মনেহয় তাদের এই দির্ঘায়ুর অন্যতম একটি রহস্য হলো প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। আহা, সেকি অপুর্ব ভুক্ষেত্র। মনে হয় যেন পৃথিবীর বুকে এক টুকরো স্বর্গ। বিশাল বিশাল আকাশ ছোয়া পর্বতের মাঝে চোঁখ জুড়ানো সুন্দর উপত্যকা, আর তার মাঝে ছোট ছোট গ্রাম। আর লেকের পানিগুলো দেখলে আপনি বিশ্বাসই করতে পারবেন না যে পানি এত রঙ্গিন হতে পারে!

এই অঞ্চলে ৬ হাজার এবং ৭ হাজার মিটার উচ্চতার বেশ কয়েকটি পর্বত আছে। তাই সারা বছরই এদিকে বিভিন্ন দেশের পর্বত আরোহীদের আনাগোনা দেখা যায়। সেই সাথে সহজে ভ্রমনযোগ্য বলে দেশি পর্যটকের পাশাপাশি অনক বিদেশি পর্যটকও প্রতিনিয়ত হানজা ভ্রমনে আসে। আমাদের বাংলাদেশিরাও এখানে ভ্রমনে আসে। আমাদের পাহাড়ী অঞ্চলগুলোতে ঘুরতে গেলে আগেই সতর্ক করে দেয়া হয় কতটুকু এরিয়ার বাহিরে আমরা যেতে পারবো না, সাজেকের মত বিভিন্ন জায়গায় সেনাবাহিনীও এসকর্ট করে, তবু ভয় থাকে কোন সময় ইউপিডিএফ সন্ত্রাসী, পাহাড়ী সন্ত্রাসীরা এসে ধরে, অপহরন করে নিয়ে যায়।

কিন্তু অদ্ভুদ ব্যাপার হলো এই হানজা উপত্যকা পাকিস্তানের বড় শহরগুলোর চেয়েও অনেক বেশি নিরাপদ। লাহোর বা করাচীতে হয়তো পকেটমার বা ছিন্তাইকারির কবলে পরতে হতে পারে, কিন্তু হানজাতে এই সুজোগ নেই। আর এর পুরো ক্রেডিট হানজা সম্প্রদায়ের।

এছাড়া কেবল হানজা সম্প্রদায়ই নয়, পাকিস্তানের উত্তরাঞ্চল জুড়ে গিলগিট বালটিস্তান, খাইবার পাখতুন এবং আজাদ কাশ্মীর প্রদেশ জুড়ে আরো অনেক সম্প্রদায় বাস করে যাদের গড় আয়ু শত বছরের উপরে। অর্থাৎ পাকিস্তানের পুরো উত্তরাঞ্চলটাই রহস্যময় এবং অসম্ভব সুন্দর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর একটি স্থান।

জীবনে অন্তত একবার হলেও ঘুরে আসুন পাকিস্তানের কারাকোরাম পর্বতমালার ঘেরা এই ভুস্বর্গ থেকে। আর হ্যা, হানজায় যেতে হলে রাজধানী ইসলামাবাদ থেকে ছাদ খোলা জীপ ভাড়া নিয়ে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর সড়ক “কারাকোরাম হাইওয়ে” তে ২৪ ঘন্টা ড্রাইভ করতে হবে! ভেবে দেখুন কেমন হবে সেই অনুভুতি !!

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.