ঘড়ির বিজ্ঞাপনে কেন ১০টা ১০ মিনিট দেখা যায়?
ODD বাংলা ডেস্ক: ঘড়ির বিজ্ঞাপনে লক্ষ করে দেখেছেন অথবা গুগলে সার্চ দিয়ে? লক্ষ করলে দেখবেন- সবকটি ঘড়িতেই বেজে থাকে ১০ টা ১০ মিনিট। যদি কখনো ব্যাপারটা না দেখে থাকেন তাহলে কোন ঘড়ি বিক্রির দোকানে গিয়ে দেখে নেবেন। আর যদি দেখে থাকেন, কখনো কি মনে প্রশ্ন জেগেছে- কেন? তাহলে জেনে নিন কী সেই রহস্য!
কথিত আছে যে, একটি বিশেষ ঘটনা এই সময়টাকে স্মরণীয় করে রেখেছে। শুক্রবার, ১৪ এপ্রিল, ১৯৬৫। ক্রুশবিদ্ধ যিশু খ্রিস্টের পুনরুথ্থানের দিন। ক্যালেন্ডারের ভাষায় 'গুড ফ্রাইডে'! ঘড়িতে তখন রাত দশটা বেজে দশ মিনিট। ওয়াশিংটন ডিসি'র ফোর্ড থিয়েটার বক্সে বসে নাটক দেখছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ষোড়শ প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংঙ্কন! তিনি ও তার স্ত্রী দু'জনেই সেদিন নাটক দেখতে এসেছিলেন। নাটকের নাম 'আওয়ার আমেরিকান কাজিনস'!
অভিনয় চলার সময়েই আচমকা বক্সে ঢুকে পড়লেন এক অভিনেতা। তার নাম জন উইলকিস বুথ। বুথের হাতে একটা পিস্তল, সেই পিস্তলের নলটা প্রেসিডেন্টের ঘাড়ে ঠেকিয়ে তিনি ট্রিগারে চাপ দিলেন। রক্তে ভেসে যাচ্ছে মার্কিন প্রেসিডেন্টের গোটা দেহ, আর্তনাদ করে চেঁচিয়ে উঠছেন আমেরিকার ফার্স্ট লেডি মেরি টোড লিংঙ্কন। মেজর হেনরি রথবোন তাড়াতাড়ি ছুটে এসে আততায়ীকে জাপটে ধরলেন, বুথ এক ঝাপটায় তাকে ছুরি মেরে লাফিয়ে মঞ্চে উঠে গেলেন। তাড়াহুড়া করতে গিয়ে গোড়ালির ওপরে 'টিবিয়া'র হাড় ভেঙে গেল তার, সেই ভাঙা পায়েই মঞ্চের পেছনের ভাঙাচোরা একটা দরজা দিয়ে পালিয়ে গেলেন বুথ।
কিন্তু নিহত মার্কিন প্রেসিডেন্টের স্মৃতির উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধা জানাতে পৃথিবীর সব বিজ্ঞাপনের ঘড়ির কাঁটা এখন ১০টা বেজে ১০ মিনিটে থেমে থাকে বলে মনে করা হয়। কারণ, এই সময়েই নিহত হয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন।
তার স্মৃতির উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধা জানানোর জন্যেই এই ব্যবস্থা। বাংলাদেশের ঘড়ির বিজ্ঞাপনগুলোও এই নিয়মের ব্যতিক্রম নয়।
তবে এই কারণ নিয়ে মতভেদ রয়েছে। ঘড়ি সংস্থার কর্ণধারদের মতে, ঘড়ির কাঁটা দুটি এই পজিশনে থাকলে এতে কোম্পানির লোগো দেখতে সমস্যা হয় না। এছাড়া সিমেট্রি থাকে কাঁটা দুটোর মাঝে। তবে ৩টা ১৫ বা ৪টা ২০ থাকলেও একই সুবিধা পাওয়া যায়। কিন্তু ১০টা ১০-এ ঘড়ির কাঁটা দুটো দেখতে অনেকটা উপরে উঠানো হাতের মত লাগে, যা অনেক বেশি সুন্দর দেখতে লাগে।
এছাড়াও আরও কিছু বৈজ্ঞানিক বিষয় আছে। যেমন-
ঘড়ির কাঁটা ১০টা দশে থাকলে ঘড়িটা দেখতে বেশ সুন্দর লাগে। দুটো কাঁটা দুদিকে সমানভাবে হাত মেলে আছে। মনে হবে আপনাকে স্বাগত জানাচ্ছে। একটা প্রতিসাম্য অবস্থা, পরিপাটি ছিমছাম লাগে দেখতে, দৃষ্টিনন্দন। প্রতিটি মানুষ প্রতিসাম্য আর পরিপাট্য পছন্দ করে। তাই ঘড়ির সব বিজ্ঞাপনদাতা এই কায়দাটা অনুসরণ করে আসছে।
১০টা ১০-এর মধ্যে অনেকে একটা হাসির ছবি খুঁজে পান। মনে হয় ঘড়িটা হাসছে। বেশ একটা খুশী খুশী ভাব দেখা যায়, যাতে ক্রেতা আকর্ষিত হন।
বেশীরভাগ ঘড়িতেই কোম্পানির লোগো মাঝ বরাবর রাখে, অর্থাৎ হয় ১২টার ঠিক নীচে বা ঘড়ির ঠিক মধ্যেখানে বা নীচের ছ’টার ঠিক ওপরে। তাই কাঁটা দুটো ১০টা ১০-এ থাকলে স্পষ্টভাবে কোম্পানির লোগোটা দেখা যায়।
অনেক কোম্পানি ঘড়ির কাঁটা অন্যভাবে রেখে পরীক্ষা করেছিল। কিন্তু দেখা গেল, বেশীরভাগ ক্রেতাই ১০টা ১০-এ থাকা ঘড়ির দিকেই হাত বাড়ায়। তারপর আর কেউ কাঁটা বদলানোর রিস্ক নেয়নি।
Post a Comment