জাপানে ‘অশুভ আত্মা’ নিয়ে আতঙ্ক
ODD বাংলা ডেস্ক: পাথর ভেঙে কি বেরিয়ে পড়েছে প্রায় হাজার বছরের বন্দি অশুভ আত্মা? রবিবার জাপানের নাসু শহরে ওই পাথরটিকে দু’টুকরো হয়ে পড়ে থাকতে দেখেন স্থানীয়েরা। এর পরই আতঙ্ক শুরু হয়েছে তাঁদের।
স্থানীয়দের আশঙ্কা, পাথরবন্দি অশুভ আত্মা মুক্তি পেয়ে গিয়েছে! যদিও যুক্তিবাদীদের দাবি, আবহাওয়াজনিত কারণেই সেটি ভেঙে গিয়েছে।
নাসু শহরের আগ্নেয়গিরির কাছে ওই পাথরটিকে ‘সেশো-সেকি’ নামে চেনেন স্থানীয়েরা। ইংরেজিতে অনেকে আবার সেটিকে ‘কিলিং স্টোন’-ও বলেন।
‘কিলিং স্টোন’-এর সংস্পর্শে এলেই নাকি মৃত্যু নিশ্চিত! তার ভিতরে নাকি প্রায় হাজার বছর ধরে বন্দি করে রাখা হয়েছে এক অশুভ আত্মাকে। নাসু শহরের ওই আগ্নেয়শিলাকে ঘিরে এমনই বিশ্বাস রয়েছে অনেকের। জাপানের লোককাহিনিতেও পাথরটিকে ঘিরে এমন বহু গল্প ছড়িয়ে রয়েছে। রবিবার সেটিই আড়াআড়ি ভাবে ভেঙে দু’টুকরো হয়ে পড়েছিল।
ভাঙা পাথরটিকে ঘিরে নেটমাধ্যমেও তুমুল আলোচনা, তর্কবিতর্ক শুরু হয়েছে। তবে যুক্তিবাদীদের মতে, পাথর ঘিরে এই আতঙ্ক অমূলক। তা কুসংস্কার ছাড়া আর কিছু নয়।
‘কিলিং স্টোন’ ঘিরে কী গল্প শোনা যায় জাপানে? নাসু শহরের বহু স্থানীয়দের দাবি, ন’টি লেজযুক্ত ধুরন্ধর এক শেয়ালের আত্মাকে প্রায় হাজার বছর আগে পাথরটিতে বন্দি করে রাখা হয়েছিল।
জাপানের লোকবিশ্বাস আরও বলে, ওই শেয়ালটি এক সময় সুন্দরীর রূপধারণ করেছিল। জাপানের তৎকালীন সম্রাট তোবাকে হত্যার ষড়যন্ত্রে তামামো-নো-মায়ে নামে ওই সুন্দরীকে কাজে লাগাতে চেয়েছিলেন এক সামন্তপ্রভু। তবে সে ছক ভেস্তে গিয়েছিল।
ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায় যে, জাপানের ৭৪তম সম্রাট তোবার রাজত্ব ছিল ১১০৭ থেকে ১১২৩ সাল পর্যন্ত। লোকমুখে প্রচলিত, ওই সম্রাটকে খতম করার ছক ভেস্তে যাওয়ার পর সেই সুন্দরীকে একদলা জ্বলন্ত লাভার মধ্যে বন্দি করে ফেলেন বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরা। তার পর লাভা জমে পাথরে পরিণত হলে গোটা জাপান জুড়ে সেই পাথরের টুকরোগুলি ছড়িয়ে দেওয়া হয়।
অনেকের বিশ্বাস, ওই পাথরগুলির মধ্যে মূল খণ্ডটি মাউন্ট নাসুর আগ্নেয়গিরির কাছাকাছি এলাকায় পড়েছিল। ১৯৫৭ সালে ওই পাথরটিকে ঐতিহ্যবাহী স্থল বলে ঘোষণা করা হয়।
টোকিয়োর অদূরে প়ড়েছিল মাউন্ট নাসুর ওই ‘কিলিং স্টোন’। যাকে ঘিরে পর্যটকদের কৌতূহলও দিনকে দিন বেড়েছে। এত দিন পাথরটির চারপাশ দড়ি দিয়ে ঘিরে দেওয়া ছিল। তবে রবিবার সেটিও খুলে গিয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়েরা।
‘কিলিং স্টোন’-এর দু’টুকরো হওয়া ছবিতে ছেয়ে গিয়েছে নেটমাধ্যম। ভাঙা পাথরের ছবি পোস্ট করে টুইটারে এক জন লিখেছেন, ‘মনে হল যেন এমন কিছু দেখেছি, যা দেখার কথা ছিল না।’ সে পোস্টটি এখনও পর্যন্ত প্রায় দু’লক্ষ নেটব্যবহারকারীর মনে ধরেছে।
এত হইচইয়ের মাঝে নানা মুনি নানা তত্ত্ব খাড়া করার চেষ্টা করছেন। কারও দাবি, ষড়যন্ত্র করে ‘কিলিং স্টোন’ ভাঙা হয়েছে। অনেকে আবার বলেছেন, অতিরিক্ত ঠান্ডায় পাথরে ফাটল ধরেছে।
আসরে নেমে পড়েছে তথ্যসন্ধানী বিভিন্ন ওয়েবসাইটও। একটির দাবি, চলতি বছরের মার্চেই পাথরটি ভেঙেছে। নাসু শহরের টুরিস্ট ইনফরমেশন সেন্টারের দাবি, বৃষ্টি এবং হাড়কাঁপানো ঠান্ডার ফলেই হয়তো ফেটে গিয়েছে ‘কিলিং স্টোন’!
‘কিলিং স্টোন’ ভেঙে দু’টুকরো হওয়ার পিছনে কারণ যা-ই হোক না কেন, স্থানীয়েরা এতে ব্যথিত। এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘প্রাকৃতিক কারণে হলে এ নিয়ে কিছু করার নেই। তবে এলাকার অভিজ্ঞানচিহ্নটি ভেঙে যাওয়া লজ্জার বিষয়।’’
Post a Comment