সেনাং: এক ছাদের নিচে এশিয়ার মজাদার সব খাবার

 


ODD বাংলা ডেস্ক: এশিয়ার আট দেশের মজাদার সব খাবারের সম্মিলন ঘটিয়েছে সেনাং। চট্টগ্রামের এই রেস্টুরেন্টে থাইল্যান্ড, চীন, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, জাপান, কোরিয়া ও শ্রীলঙ্কার সুস্বাদু অন্তত ৭৮ ধরনের খাবার রয়েছে।


আট দেশের সেরা পদ্গুলো নিয়ে এই রেস্টুরেন্ট এনেছে এশিয়ান ফিউশন, যেখানে একই ছাদের নিচে পাওয়া যাবে এশিয়ার অনন্য স্বাদের সব খাবার। চট্টগ্রাম নগরীর পূর্ব নাসিরাবাদ এলাকার ইনোভেটিভ ভূঁইয়া অর্কিডের ৬ষ্ঠ তলায় অবস্থিত এই রেস্টুরেন্ট।


বিভিন্ন ধরনের বাতির আলোকছটায় রেস্টুরেন্টে প্রবেশ করতেই অন্যরকম মুগ্ধতা জাগবে। শৈল্পিক সজ্জা, নানা প্রজতির গাছ আর সবুজের ছোঁয়া প্রশান্তি এনে দেবে যে কোনো প্রকৃতি প্রেমীর মনে।


শুধু খাবারই নয়, খাবার পরিবেশনে ভিন্নতা, গুনগত মান, ওপেন কিচেন, রেস্টুরেন্টের ডিজাইন সবকিছুই আকৃষ্ট করছে ভোজনবিলাসীদের। সব শ্রেণির ক্রেতা কাছে টানতে খাবারের দামও রয়েছে হাতের নাগালে। এই রেস্টুরেন্টের পদগুলোর স্বাদ ২৯৯ টাকা থেকে ১,৭৯৯ টাকাতেই নেওয়া যাবে।


চট্টগ্রামের তরুণ উদ্যোক্তা চৌধুরী ইয়ামিন আনাম খানিকটা শখের বশেই গড়ে তুলেছেন এই রেস্টুরেন্ট। সেনাং-এর যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০১৯ সালের অক্টোবরে। তবে শুরুতে রেস্টুরেন্টের নাম ছিল সেনাং বোল। সেনাং ইন্দোনেশিয়ান শব্দ। এর অর্থ হ্যাপি বা সুখী। সেনাং বোল-এর পুরো অর্থ হ্যাপি বোল। শুরুতে রেস্টুরেন্টে কর্তৃপক্ষ ৮০ টাকায় খাবার পরিবেশন করত।


শুরুর দিকে রান্নার উপকরণ বিশেষ করে মসলাগুলো সংশ্লিষ্ট দেশ থেকে আমদানি করা হতো। কিন্তু ২০২০ সালে করোনা সংক্রমণের কারণে সাপ্লাই চেইন বিপর্যয়ের ফলে আমদানি বন্ধ হয়ে যায়। তখন রেস্টুরেন্ট কর্তৃপক্ষ দেশীয় বিভিন্ন মসলা দিয়ে পৃথক ফিউশন তৈরি করে। এর মাধ্যমে খাবারে একই ধরনের স্বাদ নিশ্চিত হয়। তাই এখন আর আমদানি নির্ভর নয়, বরং দেশীয় মসলার সংমিশ্রণেই তৈরি হচ্ছে খাবার। সেখান থেকেই এর নাম দেওয়া হয়েছে এশিয়ান ফিউশন। ২০২২ সালের শুরুতে সেনাং নামে পুনরায় যাত্রা শুরু হয় এই রেস্টুরেন্টের।


কেন এই ব্যবসায় বিনিয়োগ করছেন এমন প্রশ্নের জবাবে চৌধুরী ইয়ামিন আনাম বলেন, "আমি একজন ভোজনরসিক। খেতে অনেক ভালোবাসি। আমি মালয়েশিয়ায় পড়াশোনা করেছি। মালয়েশিয়া খাদ্য সংস্কৃতির জন্য খুব পরিচিত। পড়াশোনা শেষ করে বাংলাদেশে ফিরে এসে শখের বসে এই ব্যবসা শুরু করেছি। এশিয়ান খাবারের ওপর ফোকাস করেছি।"


এই রেস্টুরেন্টের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে ওপেন কিচেন কনসেপ্ট। রেস্টুরেন্টে প্রবেশ করলেই দেখা মিলবে সুপরিসর, পরিপাটি, গোছানো কিচেন রুম। সাদা কাঁচের পাশে দাড়িয়ে দেখা যাবে রান্নার পুরো প্রক্রিয়া।


চৌধুরী ইয়ামিন আনাম বলেন, "আমরা গর্ব করে বলছি যে সেনাং চট্টগ্রামের প্রথম রেস্তোরাঁ যেখানে ওপেন কিচেন রয়েছে। আমরা রান্নাঘরের ভিতরে স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখি। ক্রেতারা কিচেনের সামনে দাঁড়িয়ে কীভাবে স্বাস্থ্যসম্মতভাবে খাবার রান্না হচ্ছে তা উপভোগ করতে পারবেন।"


বাংলাদেশের কোনো রেস্টুরেন্টে নেই এমন খাবারের পদও রয়েছে এই রেস্টুরেন্টে। এর মধ্যে আছে- মালেশিয়ান চিকেন চাপ, মালেশিয়ান বাটার চকেন, ইন্দোনেশিয়ান বিফ রেনডাং, হানি নুডুলস উইত ভ্যানিলা আইসক্রিম, ম্যাগি গোরেঙ আয়াম, চাও কোয়ে টিয়াও ইত্যাদি।


রেস্টুরেন্টের ইন্টেরিয়র ডিজাইনেও রয়েছে বিচিত্রতা। কোনো স্থপতি নয়, রেস্টুরেন্টের উদ্যোক্তা চৌধুরী ইয়ামিন আনাম চৌধুরী নিজেই তৈরি করেছেন এর নকশা। পুরো রেস্টুরেন্ট জুড়েই রয়েছে শৈল্পিকতার ছোঁয়া।


ব্যাম্বো ফিউশন প্লেটে আছে ১৫টি আইটেম। এই ফিউশনের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে খাবার প্লেট হিসেবে ব্যবহার করা হয় বাঁশের তৈরি বিশেষ প্লেট। এতে কলা পাতার ওপর রাখা হয় খাবার। পার্সেল খাবারের ক্ষেত্রে প্লাস্টিকের ব্যবহার কমানো হয়েছে ৮০ শতাংশ। এটি পরিবেশবান্ধব বলে জানিয়েছে রেস্টুরেন্ট কর্তৃপক্ষ। কুষ্টিয়া থেকে সংগ্রহ করা হয় এই বিশেষ প্লেট। ক্রেতারা চাইলে এই বিশেষ প্লেট সঙ্গে করে নিয়েও যেতে পারেন।


সেনাং-এর সিইও চৌধুরী ইয়ামিন আনাম বলেন, "আমি নতুন খাবারের মেন্যু তৈরি করতে পছন্দ করি। আবেগের জায়গা থেকে এই রেস্তোরাঁর ব্যবসায় যুক্ত হয়েছি। আমাদের কাছে এমন কিছু খাবার রয়েছে যা অনেক রেস্তোরাঁয় পাওয়া যায় না। আমরা গ্রাহকদের থেকে খুবই ভালো সাড়া পাচ্ছি।"

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.