বিপন্ন মসৃণ উদ

 



ODD বাংলা ডেস্ক:
নৌকায় নদীপথে যাতায়াতকালে একটি প্রানী প্রায়সই দেখা মিলত। নৌকা ওদের কাছাকাছি যেতেই জলের নিচে ডুব দেয়। বার কয়েক এ রকম লুকোচুরি খেলার পর ওরা চুপি চুপি চরে উঠে ঘুম দেয়। নৌকা চরের পাশ ঘেঁষে যাওয়ার সময় ওরা রীতিমতো ঘুম ভেঙে অনিচ্ছা সত্ত্বেও ধীরে ধীরে জলে নেমে আসে। চলে যায় মানুষের দৃষ্টির বাইরে।

এতক্ষণ যে প্রাণী প্রানীটির কথা বললাম ওরা এ দেশের এক দুর্লভ ও বিপন্ন স্তন্যপায়ী প্রাণী মসৃণ উদ। উদবিড়াল, ভোঁদড়, মাছ নেউল বা ধেড়ে নামেও পরিচিত। Mustelidae পরিবারভুক্ত এই প্রাণীটির বৈজ্ঞানিক নাম lutrogale perspicillata।


এটি এশিয়ার মধ্যে বৃহত্তম উদ। দেহের দৈর্ঘ্য ৫৯-৭৯ সেন্টিমিটার ও লেজ ৩৭-৫০ সেন্টিমিটার, ওজন ৭-১১ কেজি। দেহ বলিষ্ঠ ও লম্বা। দেহ ও মাথার মতোই চওড়া ঘাড়। পা খাটো, নখ ধারালো এবং পায়ের আঙুলের পুরোটাই পাতাযুক্ত। সামনের পা পেছনের পায়ের চেয়ে খাটো। অন্যান্য উদের তুলনায় লোম খাটো, মসৃণ ও উজ্জ্বল। দেহের ওপরটা হালকা থেকে গাঢ় বাদামি ও নিচটা হালকা বাদামি থেকে প্রায় ধূসর। অপেক্ষাকৃত গোলগাল মাথা, সুস্পষ্ট উন্মুক্ত নাক ও চ্যাপ্টা লেজের কারণে সহজেই বাকি দুটি প্রজাতির উদ থেকে পৃথক করা যায়।


এরা পুরো দেশেই আছে, তবে দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলে বেশি দেখা যায়। নিচু ভূমি, উপকূলীয় লবণাম্বু বন, পচা উদ্ভিদসমৃদ্ধ জলাবন, স্বাদুজলের জলাভূমি, হ্রদ, ধানখেত ইত্যাদিতে বাস করে। মূলত দিবাচর। সচরাচর জোড়ায় বা ছোট পারিবারিক দলে দেখা যায়। সাধারণত দলবেঁধে শিকার করে। কীটপতঙ্গ, কেঁচো, কাঁকড়াজাতীয় প্রাণী, ব্যাঙ, জল ইঁদুর, কচ্ছপ, বড় পাখি, মাছ ইত্যাদি খায়। ৭-১৪ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিচরণ করতে পারে। দিনে একেকটি উদ ১ কেজি খাবার খেতে পারে।


এরা সারা বছর প্রজনন করলেও আগস্ট-ডিসেম্বরের মধ্যে বেশি করে। এরা সারা জীবনের জন্য জোড় বাঁধে। পুরুষ আকারে স্ত্রীর তুলনায় বড় হলেও স্ত্রীই বেশি কর্তৃত্ব ফলায়। সচরাচর ৬০-৬৫ দিন গর্ভধারণের পর ১-৫টি বাচ্চা প্রসব করে। জন্মের ২৮ দিন পর বাচ্চারা চোখ খোলে, পাঁচ মাস পর দুধ ছাড়ে ও দুবছরে প্রজননক্ষম হয়। আয়ুষ্কাল বুনো পরিবেশে ৪-১০ ও আবদ্ধাবস্থায় প্রায় ২০ বছর।


মসৃণ উদবিড়াল বা ভোঁদর মহাবিপন্ন প্রাণী। জলাশয় ও বনজঙ্গল কমে যাওয়ায় ভোঁদর কমে যাচ্ছে। এদের টিকিয়ে রাখতে হলে জলাশয় ও পরিবেশ সংরক্ষণ করতে হবে।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.