বিষে বিষে ক্ষয়! বিষ থেকে কি কি ওষুধ হয় জানেন?

 


ODD বাংলা ডেস্ক: 'কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলা' কিংবা 'বিষ দিয়ে বিষকে ঘায়েল করা' প্রচলিত এই কথাগুলো আমরা প্রায়ই শুনে থাকি। বিষকে যখন বিষ দিয়ে ঘায়েল করা হয় তখন সেই বিষ মূলত ঔষধের কাজ করে। বহুকাল আগ থেকেই মানবজাতি তাদের চিকিৎসাকাজে বিভিন্ন উৎস থেকে প্রাপ্ত বিষ ও বিষাক্ত পদার্থ ব্যবহার করে আসছে।


গাছপালা ও পশুপাখি থেকে আমরা উচ্চমাত্রায় রাসায়নিক পদার্থ পেয়ে থাকি। এগুলো একদিকে আমাদের জন্য যেমন মরনঘাতি হয়ে দাঁড়াতে পারে, তেমনি আমাদের প্রাণ বাঁচাতে পারে।


গাছপালাদের দীর্ঘদিন একজায়গায় দাঁড়িয়ে স্থির হয়ে বসবাস করতে হয় বিধায় নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে অন্য জীব ও আগাছার বিরুদ্ধে রাসায়নিক বিষক্রিয়ার মাধ্যমে প্রতিরোধ গড়ে তোলে তারা।


কিছু কিছু প্রাণীদের মধ্যেও এইরকম প্রতিরোধ প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়। উদাহরণস্বরুপ বলা যায়, দক্ষিণ আমেরিকার একজাতের ব্যাঙের কথা, যারা নিজেদেরকে সাপের পেটে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে শরীরের ওপরে বিষাক্ত পদার্থ তৈরি করে থাকে। জীবজন্তু ও গাছপালা বিষ উৎপাদন করলেও বিজ্ঞানীরা সে বিষকে নানারকম প্রক্রিয়ায় ঔষধে রূপান্তরিত করে ব্যবহার করছেন মানবজাতির কল্যাণে।


বোটক্স


চিকিৎসাবিদ্যায় বোটক্সের নানাবিদ ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। বোটক্স হলো একটি প্রোটিন যা বোটুলিনাম টক্সিন থেকে তৈরি। এটি ক্লোস্ট্রিডিয়াম বোটুলিনাম নামক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা উৎপাদিত হয়।


যদিও বোটক্স একটি বিষ, কিন্তু ডাক্তাররা যখন এটিকে অল্প মাত্রায়  সঠিক পদ্ধতিতে ব্যবহার করেন তখন এটি ঔষধের কাজ করে। মাইগ্রেনের ব্যথা, অত্যাধিক ঘাম, মূত্রাশয়ের ব্যাধি ইত্যাদি উপশম ও চিকিৎসায় বোটক্স ব্যবহার করা হয়।


এছাড়াও মুখের ত্বককে আরও টান-টান করতে এবং বার্ধক্যের লক্ষণ কমাতে বোটক্স ব্যবহার করা হয়ে থাকে। বোটক্স ব্যবহারে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে যেমন- ইনজেকশন দেওয়ার স্থানে তীব্র ব্যথা অনুভব করা, ফুলে যাওয়া এবং সর্দি-জ্বরের মতো অসুস্থতার লক্ষণ দেখা দেওয়া ইত্যাদি।


শেয়াল মোজা ফুল (ফক্সগ্লোভ ফ্লাওয়ার)


শেয়াল মোজা ফুলের শুকনো পাতা থেকে হৃদরোগের ঔষধ ডিগক্সিন তৈরি করা হয়। ব্রিটিশ চিকিৎসক উইলিয়াম উইথ্যারিন প্রথম ব্যক্তি যিনি ১৭৮৫ সালে শেয়ালমোজা ফুলের ব্যবহার ও এর চিকিৎসা গুণাগুণ নিয়ে লেখেন।


ডিগক্সিন হৃদপিন্ডের ক্যালসিয়াম কার্যক্রমকে প্রভাবিত করার মাধ্যমে গ্লাইকোসাইড হিসেবে কাজ করে। এটি হৃদপিন্ডের স্বাভাবিক ক্রিয়া বজায় রেখে হৃদস্পন্দনে সাহায্য করে।


তবে, শেয়াল মোজা উদ্ভিদের ফুল, পাতা, কান্ড, বীজ খাওয়ার ফলে বা এর থেকে তৈরি ঔষধ অতিরিক্ত মাত্রায় গ্রহণের থেকে বিষক্রিয়া ঘটতে পারে। এই ফুল থেকে বিষক্রিয়ার লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে ধীর/অনিয়মিত হৃদস্পন্দন, নিম্ন রক্তচাপ, চোখে ঝাপসা দেখা, বিভ্রান্তি এবং ক্ষুধা হ্রাস পাওয়া।


হেনবেন


ফ্যাকাসে হলুদ বর্ণের এই ফুল দুর্গন্ধযুক্ত হয়। ঘন্টার মতো দেখতে  ফুলগুলো তিনফুট পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে, যার পাতাগুলো আঠালো ও চুলের মতো আঁশযুক্ত হয়। হেনবেন ফুলের মধ্যে ৩৪ প্রকারের অ্যালকালয়েড আবিষ্কৃত হয়েছে, যার মধ্যে স্কোপোলামাইন, হায়োসায়ামিন এবং অ্যাট্রোপিন রয়েছে। অ্যালকালয়েড ঔষধগুলোতে অ্যান্টিকোলিনার্জিক এবং অ্যান্টিস্পাসমোডিক বৈশিষ্ট্য থাকায় এটিকে বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়।


পেটের খিঁচুনি, মূত্রাশয়, অন্ত্র এবং ও ব্যাথা উপশম করতে। বমি বমি ভাব দূর করতে ও হৃদপিণ্ডের স্বাভাবিক হৃদস্পন্দন  বজায় রাখতে। অপারেশনের সময় লালা কম নিঃসরণ করতেও এটি কার্যকরী। এই ঔষধ ব্যবহারে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হিসেবে খিঁচুনি, হ্যালুসিনেশন, সিদ্ধান্তহীনতা, ঘাম কমে যাওয়া এবং দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ  হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যাগুলো দেখা দেয়।


আফিম পপি ফুল


পপি ফুল বছরে একবার ফোটে ও উচ্চতায় এটি ৩-১৬ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। এই ফুলের বীজে প্রাকৃতিকভাবে  অ্যালকালয়েড আছে যা ব্যাথা উপশমে সাহায্য করে।


এই ফুল থেকে উৎপাদিত ঔষধের নাম হচ্ছে মরফিন ও কোডেইন। এই ওষুধগুলোর অতিরিক্ত ব্যবহারে আসক্তি দেখা দেয়৷ এর অতিরিক্ত সেবন মানুষের মৃত্যুর কারণ হতে পারে।


ওয়ারফারিন ট্যাবলেট


ইঁদুর মারার জন্য রডেন্টাইসাইড বিষ ব্যবহার করা হয়, যা ওয়ারফারিন ট্যাবলেটে রয়েছে। ওয়ারফারিনে ব্যবহৃত রাসায়নিক পদার্থটি উৎপন্ন হয় 'সুইট ক্লোভার' নামক ফুল থেকে, যেগুলো ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা এবং এশিয়ায় জন্মায়। এটি  রক্ত জমাট বাঁধার ক্ষমতা নষ্ট করে দেয়; ফলে অভ্যন্তরীণ রক্তপাত ঘটিয়ে এগুলো ইঁদুরদের মৃত্যু ঘটায়।


১৯৪৮ সাল থেকে ওয়ারফারিন ইঁদুর মারতে ব্যবহার করা হলেও ১৯৫৪ সালে এটিকে মানুষের রক্ত পাতলাকরণে ব্যবহার করতে অনুমোদন দেওয়া হয়।


ওয়ারফারিন ঔষধের পরিমাণে সামান্য হেরফের হলে এর প্রতিক্রিয়া ভয়ানক হতে পারে। তাই যেসকল রোগীরা এই ঔষধ ব্যবহার করে তাদের নিয়মিত রক্ত পরীক্ষা করতে হয়, রক্তের অনুপাত স্বাভাবিক মাত্রায় আছে কিনা তা জানার জন্য । কেননা রক্ত জমাট বাঁধার এই পরিমাপ সঠিক মাত্রায় না থাকলে তা রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.