কমেডিয়ান থেকে যেভাবে প্রেসিডেন্ট হলেন জেলেনস্কি
ODD বাংলা ডেস্ক: ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। জেলেনস্কিকে অবশ্য জন্মের পরপরই মঙ্গোলিয়া শহর আরডেনেটে চলে যেতে হয়। যেখানে সবাই রাশিয়ান ভাষায় কথা বলে। ফলে জেলেনস্কি ছোটবেলায় বেড়ে ওঠেন রুশ ভাষাতেই। তবে তিনি ইউক্রেনীয় এবং ইংরেজিতেও সমান পটু। মঙ্গোলিয়া যাওয়ার চার বছর পরেই আবার নিজের শহর ক্রিভয় রগে ফিরে আসেন। ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলের শহর ক্রিভয় রগ।
ছোটবেলা থেকেই অভিনয়ের নেশা ছিল জেলেনস্কির। তাই ১৭ বছরের জেলেনস্কি নাম লেখান স্থানীয় কমেডি প্রতিযোগিতায়। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। এই সাফল্য তাকে সিনেমায় অভিনয়ের সুযোগ করে দেয়। ২০১৯ সালে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেয়ার আগ পর্যন্ত সিনেমায় অভিনয় করে গেছেন সমান তালে। লক্ষ্য করার বিষয় হলো তার বেশিরভাগ সিনেমা রুশ ভাষার। তবে ইউক্রেনীয় ভাষায়ও সিনেমা করেছেন জেলেনস্কি।
‘কোয়ার্টার ৯৫’ নামে একটি কমেডি টিম গঠন করেন তিনি যা ‘কেভিএন’ নামে একটি কমেডি প্রতিযোগিতায় ১৯৯৮ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত সর্বোচ্চবার জয়ী হয়। কোয়ার্টার ৯৫ এর জন্য চিত্রনাট্য লিখতে গিয়ে জেলেনস্কির স্ত্রীর আর ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করা হয়নি। তবে ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ না হলেও ওলেনা জেলেনস্কি কোয়ার্টার ৯৫ এর বসের সঙ্গে প্রেমের ইতি টানতে পেরেছেন জেলেনস্কিকে বিয়ের মাধ্যমে। জেলেনস্কি পরবর্তীতে কোয়ার্টার ৯৫ নামে একটি স্টুডিও গঠন করেন।
রাজনীতিতে জেলেনস্কি একেবারেই শিক্ষানবিশ ছিলেন কিন্তু দুর্নীতির বিরুদ্ধে তার অবস্থান তার রাজনৈতিক অবস্থানকে শক্ত ভীত এনে দেয়। এছাড়া সোশ্যাল মিডিয়ায় তার যথেষ্ট অনুসারী ছিল, যা পরবর্তীতে ভোটারে পরিণত হয় এবং একজন শিক্ষানবিশ রাজনৈতিক নেতাকে ভূমিধ্বস বিজয় এনে দেয়। ৭৩ শতাংশ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন জেলেনস্কি। বিজয়ের পরপর অনেক রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয় জেলেনস্কিকে। যার প্রথমটাই ছিল রাশিয়ার কাছ থেকে। ক্ষমতা গঠনের পরপরই রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউক্রেনের কিছু অংশের মুক্তিকামীদের রাশিয়ার পাসপোর্ট দেয়ার ঘোষণা দেয়। এটা জেলেনস্কির জন্য ছিল বিশাল এক চাপ।
একজন কমেডিয়ান থেকে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদে আসীন হওয়া চাট্টিখানি কথা নয়। কিন্তু জেলেনস্কি তার মেধা এবং জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে ঠিকই বাজিমাত করেছেন ভোটযুদ্ধে জিতে। তাছাড়া আইনের ছাত্র হওয়ায় দুর্নীতির বিরুদ্ধে তার অবস্থানকে আরো গতিশীল ভেবেছিল ইউক্রেনের জনগণ। কেননা জেলেনস্কি যাকে হারিয়েছিলেন সেই পেট্রো পোরোশেংকো ছিলেন বিলিয়নিয়ার। সেই তুলনায় একজন কৌতুক অভিনেতাকে ইউক্রেনের জনগণ বেশি কাছের মানুষ ভেবেছে, যার ফলশ্রুতিতে ৭৩ শতাংশ ভোটের মাধ্যমে পেয়েছিলেন বিজয়।
জেলেনস্কি অবশ্য তার এই গণরায়ের মান রেখেছেন। রাশিয়ার ইউক্রেন হামলার পর যুক্তরাষ্ট্র জেলেনস্কিকে নিরাপদে সরিয়ে নেয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু জেলেনস্কি সেটা বিনয়ের সাথে প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, ‘আমাকে নিরাপদে সরানোর দরকার নেই, আমার দরকার গোলা!’ জেলেনস্কির এই মন্তব্য সাধারণ মানুষ দারুণভাবে গ্রহণ করেছে। কৌতুক অভিনেতা হিসেবে যেভাবে মানুষের মন জয় করেছিলেন, প্রেসিডেন্ট হিসেবেও তার ভূমিকা সেদেশের মানুষের মন জয় করে চলেছে।
Post a Comment