দিনের বেলায় ঘুম স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো না খারাপ, জেনে নিন বিস্তারিত
ODD বাংলা ডেস্ক: এমন অনেক মানুষ আছে যারা বিকেল বেলায় ঘুমানো ছাড়া থাকতেই পারেন না। এভাবে একটা সময় দিনের বেলায় ঘুম একটি অভ্যাস হয়ে ওঠে। কিন্তু আপনি কি কখনও ভেবেছেন যে কেন আপনার প্রতিদিন বিকেল বেলায় ঘুম পায়?
এটা আপনার রাতে কম ঘুমানোর জন্য হতে পারে। কারণ রাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম না হলে বা বারবার ঘুম ভেঙে গেলে দিনের বেলা ঘুম ঘুম অনুভূত হয় এবং কোন কাজেই ঠিকমত মন বসে না। যাই হোক, এই দিনের বেলায় ঘুম কি স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো না খারাপ? কিছু মানুষ মনে করে যে, দিনের বেলা ঘুমানো দেহের জন্য ভালো, এতে দেহের অনেক উপকার হয়। আবার কিছু মানুষ আছেন যারা তাদের জীবনে কখনোই দিনের বেলা ঘুমাতে পছন্দ করেন না, তাদের মতে এটি দেহের জন্য খুব খারাপ, এতে স্বাস্থ্যহানি ঘটে।
আয়ুর্বেদে এই সকল প্রশ্নের উত্তর রয়েছে। দিনের বেলা ঘুমানোর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া এবং উপকারিতা সম্পর্কেও আয়ুর্বেদে অনেক তথ্য পাওয়া যায়। তাহলে চলুন দেখে নেয়া যাক দিনের বেলায় ঘুমের অপকারিতা বা উপকারিতা সম্পর্কে আয়ুর্বেদ কী বলে।
দিনের বেলায় ঘুম ও তার চক্র: আয়ুর্বেদ অনুযায়ী, আমাদের দেহচক্র প্রতিদিন ৪ ঘণ্টা অন্তর অন্তর ৩টি চক্রের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়। এই ৩টি চক্র হলো- ভাতা, পিটা এবং কাপা।এই প্রতিটি চক্র নিজ নিজ দশা দ্বারা প্রভাবিত হয় এবং প্রাকৃতিকভাবেই আমাদের শরীর একটি ছন্দের মধ্য দিয়ে চলে। এই প্রাকৃতিক ছন্দের মাধ্যমে আমরা কাজের গতি এবং আনন্দ খুঁজে পাই।
১. কাপা (Kapha) দশা: আয়ুর্বেদ অনুযায়ী, সকাল ৬টা থেকে সকাল ১০টার মধ্যবর্তী সময়কে বলা হয়ে থাকে কাপা দশা। এই সময়টাকে দেহের সক্রিয় সময় বলে মনে করা হয়ে থাকে। এই সময়টাতে যদি শারীরিক ব্যায়াম করা হয় তবে দেহে কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। যদি আপনি এই সময়টা ঘুমিয়ে কাটান তাহলে আপনি সারাদিন খুব আলসেমি অনুভব করবেন এবং আপনার দেহের অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলো ঠিকঠাক ভাবে কাজ করবে না। আয়ুর্বেদ অনুযায়ী, দুপুরের লাঞ্চ হলো দিনের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ মিল বা খাবার। তাই আপনি যদি সকাল বেলায় হালকা নাস্তা করেন তাহলে আপনি দিনে নিদ্রাহীন বোধ করবেন না।
২. পিটা (Pitta) দশা: সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত সময়কে আয়ুর্বেদে বলা হয় পিটা দশা। এই সময়টিতে খাবার হজম হওয়ার প্রক্রিয়াটি প্রাধান্য পায়। আয়ুর্বেদে এটা বলা হয়ে থাকে যে, দুপুরের খাবারে আপনার দিনের যে কোন সময়ের চাইতে সবচেয়ে ভারী খাবার বেছে নেয়া উচিত। কারণ এই সময় শরীর বেশি সক্রিয় থাকে তাই খাবার হজম করতে পারে খুব সহজে এবং আপনার শরীরে এই সময় দ্রুত শক্তি জমা হয়ে থাকে। কারণ এই সময়, যে খাদ্য গ্রহণ করা হয় তা থেকে খুব দ্রুত এনার্জি ট্রান্সফার করতে শরীরে সক্ষম থাকে। এই সময় শরীর যতটা দ্রুত এনার্জি জমা করতে পারে, ততটা ব্যায়াম করার কত শক্তি শরীরে থাকে না, তাই এই সময়ে প্রচুর পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করা উচিত।
৩. ভাতা বা ভাটা (Vata) দশা: আয়ুর্বেদে দুপুর ২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সময়কে বলা হয় ভাতা বা ভাটা দশা। এই সময়টা মানসিক প্রশান্তির জন্য খুবই ভালো এবং এই সময়টিতে মস্তিষ্ক সৃজনশীল কার্যক্রম খুব কার্যকরভাবে করতে সক্ষম থাকে। কিন্তু দিনের বেলার এই সময়টিতেই মানুষ বেশি ঘুম ঘুম ভাব অনুভব করে থাকে। দিনের এই সময়টিতে ঘুমভাব কাটানোর জন্য আপনি গরম এক কাপ চা বা কফি পান করতে পারেন, এতে মন চাঙা হয়ে উঠবে। এছাড়া ও এই সময়টিতে আপনি এমন কিছু করতে পারেন যা আপনার করতে ভালো লাগে। যেমন- বই পড়া, গান শোনা, বাগান করা ইত্যাদি।এভাবেই প্রতিটি দশা চক্র প্রতিদিন সংঘটিত হয়।
আয়ুর্বেদ অনুসারে, দিনের বেলায় ঘুমানো কাপা ও পিটা দশার মধ্যে ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি করতে পারে। এছাড়াও দিনের বেলা ঘুমানো শরীরের কার্যক্রমেও ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি করতে পারে। তবে, আয়ুর্বেদে যারা স্বাস্থ্যবান এবং শক্তিশালী নন তাদের গ্রীষ্মকালে দিনের বেলাতে অল্প ঘুমানো যেতে পারে বলে উল্লেখ আছে। কারণ গ্রীষ্মকালে রাতের চেয়ে দিন বড় হয় তাই দিনে গরমের কারণে শরীর দ্রুত ক্লান্ত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।আয়ুর্বেদ অনুসারে যাদের দিনের বেলা ঘুমানো উচিত
১. ছাত্রছাত্রী: স্কুল বা কলেজে অধ্যয়ণরত স্টুডেন্ট-রা দিনের বেলায় অল্প একটু ঘুমিয়ে নিতে পারে । এতে তাদের সারাদিনের ক্লান্তিভাব চলে যাবে এবং এর পাশাপাশি তাদের মস্তিষ্কের উন্নতি ঘটবে।
২. বৃদ্ধ মানুষ: বৃদ্ধ মানুষেরা বিকেল বেলায় ঘুমাতে পারেন কারণ তাদের দেহের এবং মনের বিশ্রাম অন্যদের চাইতে একটু বেশি প্রয়োজন হয়।
৩. শারীরিক ভারসাম্যহীন: যারা ‘ভাটা’ ভারসাম্যহীনতার কারণে ডাইজেশন প্রব্লেম ফেইস করছেন অর্থাৎ, দুপুর ২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সময়কে ঠিকমতো কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয়েছেন।
৪. গায়ক: গায়ক বা গায়িকারা বিকেলবেলা ছোট্ট একটি ন্যাপ নিতে পারেন। এতে তাদের ভাতা দশায় ব্যালেন্স ঠিক রাখতে সাহায্য করবে।
৫. অল্পতেই রেগে যান যারা: দিনে এরা ঘুমাতে পারেন, এতে তাদের মন শান্ত হবে।
৬. সার্জারি বা অস্ত্রোপচার হয়েছে যাদের: সার্জারির রোগীরা দিনে একটু ঘুমিয়ে নিতে পারেন, এতে তাদের দ্রুত সুস্থ হবার সম্ভাবনা থাকে।
৭. শ্রমিক: শ্রমিকেরা যারা অতিরিক্ত পরিশ্রম করে তারা দিনে ঘুমালে শরীরে কিছুটা শক্তি সঞ্চয় হবে এবং অধিক পরিশ্রম করার শক্তি পাবে।
৮. ওজন বৃদ্ধি করতে চান যারা: যারা দ্রুত ওজন বাড়াতে চান তাদের জন্য দিনের বেলা ঘুমানো খুব ভালো একটি উপায়।
৯. দুঃখী মানুষ: যারা খুব হতাশায় ভুগছেন এবং দুঃখ-কষ্টে আছেন তাদের জন্য দিনের বেলা ঘুমানো ভালো, এতে হতাশা কমে আসে।
আয়ুর্বেদ অনুসারে যাদের দিনের বেলা ঘুমানো উচিত নয়: –
১) যারা স্থুলতায় ভুগছেন তাদের দিনে ঘুমানো উচিত নয়। এতে ওজন আরো বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
২) ডায়াবেটিক রোগীদের দিনে ঘুমানো উচিত নয়।
৩) যারা ওজন কমানোর জন্য পরিশ্রম করছেন।
৪) যারা প্রচুর তৈলাক্ত খাবার খেয়ে থাকেন।
দিনের বেলায় ঘুম কী কী সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে?আয়ুর্বেদে দিনের বেলায় ঘুম অ্যাভয়েড করার জন্য বলা আছে কারণ এতে বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে। কিছুটা নিম্নরূপ-জ্বর.ঠাণ্ডার প্রকোপ বৃদ্ধি,স্থূলতা,গলার রোগ,বমি ভাব,বুদ্ধিমত্তা ও স্মৃতিশক্তি হ্রাস পাওয়া,চর্মরোগ,দুর্বল ইমিউনিটি সিস্টেম,দুর্বল ইন্দ্রিয় অঙ্গ
উপরিউক্ত লেখা অনুযায়ী আপনাদের নিজেদেরকেই বেছে নিতে হবে যে আপনাদের দিনের বেলায় ঘুম উচিত কি নয়! খাবার যতটা দেহের জন্য প্রয়োজনীয় ঠিক তেমনি ঘুমও দেহের কার্যক্রম ঠিকভাবে বজায় রাখার জন্য অতীব জরুরি।
Post a Comment