দাঁত ক্ষয় হলে যা করবেন



 ODD বাংলা ডেস্ক: দাঁত শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। সুন্দর হাসির জন্যও দরকার সুস্থ ও সুন্দর দাঁত। তবে নিয়মিত দাঁতের যত্ন না নিলে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। সে জন্য দাঁতের যত্নে সচেতন হোন। জেনে নিন দাঁতের ক্ষয় রোধে যা যা করণীয়-


ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার খাওয়া- যেসব উপাদান দাঁত ভালো রাখতে সহায়তা করে তার মধ্যে অন্যতম ক্যালসিয়াম। নিয়মিত ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খান। এতে দাঁত থাকবে শক্ত ও মজবুত।


ভেষজ পেস্ট- অনেকেই দাঁত ব্রাশ করার জন্য পেস্টকে এতোটা গুরুত্ব দেয় না। যেকোনো ধরনের পেস্ট পেলেই ব্যবহার করে থাকেন। কিন্তু দাঁতের ক্ষয় রোধের জন্য সচেতন থাকতে হবে পেস্টের ব্যাপারেও। সে ক্ষেত্রে ভেষজ পেস্ট উত্তম।


লবণ জলের ব্যবহার- নিয়মিত লবণ মিশ্রিত জলে গার্গল করলে দাঁতের ক্ষয় রোধ করা অনেকটাই সম্ভব। এছাড়াও এতে আছে নানা উপকারিতা।


দিনে অন্তত দুইবার দাঁত ব্রাশ করুন- অনেকেই শুধু সকালে দাঁত ব্রাশ করেন। শুধু সকালে নয়, রাতেও ঘুমাতে যাওয়ার আগে দাঁত ব্রাশ করা দরকার। অন্তত প্রতিদিন সকাল ও রাতে দাঁত ব্রাশ করার অভ্যাস গড়ে তুলেন এতে দাঁতের গুনগত মান ভালো থাকবে।


ক্ষতিকর খাবারকে না বলুন- অতিরিক্ত মিষ্টি খাবার, ঠাণ্ডা পানীয়, চকোলেট, ফাস্টফুড যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলুন। এতে দাঁত ক্ষয়ের সমস্যা অনেকটাই কমে যাবে। পরিবর্তে এমন খাবার খান যেটা দাঁতের জন্য দরকারি।


মাউথ ফ্রেশনারের ব্যবহার- অনেকের মুখেই দুর্গন্ধের সমস্যা আছে। এই সমস্যা নিয়ে বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন অনেকেই। এটি থেকে বাঁচতে নিয়মিত দাঁত ব্রাশ করার পাশাপাশি মাউথ ফ্রেশনার ব্যবহার করতে পারেন। এতে মুখের দুর্গন্ধ দূর হবে।


দাঁতের মধ্যে নানা কারণে গর্ত হতে পারে। যেমন দন্তক্ষয় বা ডেন্টাল ক্যারিজ, দাঁত ভেঙে গিয়ে গর্ত হওয়া বা রুট ক্যানেল চিকিৎসার জন্য গর্ত হওয়া। দাঁতের মধ্যে গর্ত বা ক্যাভিটি হলে তাতে ময়লা, খাদ্যকণা ইত্যাদি জমে, সংক্রমণ হয়। দাঁতে ব্যথা করে ও শিরশির অনুভূতি শুরু হয়। শিশুদের এই গর্ত বা ক্যাভিটি হলে তারা ব্যথায় কষ্ট পায় ও কিছু খেতে গেলেই দাঁত শিরশির করে ওঠে।

দাঁতের গর্তের অন্যতম কারণ দন্তক্ষয় বা ডেন্টাল ক্যারিজ। ডেন্টাল ক্যারিজ প্রাথমিক অবস্থায় খুবই ছোট কালো গর্তের মতো দেখায়। এ অবস্থায় কোনো ব্যথা বা অসুবিধা না থাকায় রোগীরা, বিশেষ করে শিশুরা বুঝতে পারে না যে গর্ত তৈরি হচ্ছে। জটিলতা হওয়ার পরই কেবল ধরা পড়ে। তবে দাঁত ভেঙে গেলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে রোগী সেটা বুঝতে পারে। এ ছাড়া রুট ক্যানেল চিকিৎসার পর রোগী যদি পরসেলিন ক্রাউন বা মুকুট পরে না নেয়, তবে গর্ত বেড়ে যায়। পরে রুট ক্যানেল এবং ভেতরের জিনিসপত্র সব বেরিয়ে আসে।


চিকিৎসা কী

দাঁতের গর্তের লক্ষণ দেখা দেওয়া মাত্র দেরি না করে শূন্য জায়গাটা ভর্তি বা ফিলিং করে নেওয়া উচিত। কারণ, ডেন্টাল ক্যারিজ যদি ধীরে ধীরে ডেন্টিন থেকে আরও গভীরে অর্থাৎ পাল্প চেম্বার পর্যন্ত চলে যায়, তবে ব্যথার তীব্রতা বেড়ে যায়। চিকিৎসাব্যবস্থাও জটিল হয়ে পড়ে। ভাঙা দাঁতকে আজকাল ফিলিং ম্যাটেরিয়াল বা লাইট কিউর দিয়ে সুন্দরভাবে পূরণ করা যায়, যা দেখতে অবিকল স্বাভাবিক রঙের হয়। রুট ক্যানেল চিকিৎসা করা দাঁতের ক্রাউন বা মুকুট বসাতে দেরি করা উচিত নয়।


ক্যাভিটি প্রতিরোধের ৫ উপায়

* সঠিক নিয়মে প্রতিদিন দুই বেলা দাঁত ব্রাশ করা

* চিনিযুক্ত পানীয় বা আঠালো খাবার, অম্লযুক্ত খাবার, কফি ইত্যাদি এড়িয়ে চলা বা খাওয়ার পর কুলি করে মুখ ধুয়ে ফেলা

* শুধু ব্রাশ নয়, সুতা বা ফ্লস দিয়ে দাঁতের ফাঁক পরিষ্কার করা

* ধূমপান বর্জন

* নিয়মিত দাঁত পরীক্ষা করা


ত্বকের যত্ন আমরা কমবেশি সবাই নিয়ে থাকি কিন্তু মুখের ভিতরের যত্ন? কেবলমাত্র মাউথ ফ্রেশনার, টুথপেস্টই কি দাঁতের যত্নের জন্য যথেষ্ট? দাঁত থাকতেই দাঁতের মর্ম বুঝতে হবে। ব্যস্ততার কারণে আমরা নিজের যত্নের সময় খুবই কম পেয়ে থাকি। আর তার মধ্যে দাঁতের যত্ন যেন সব থেকে কম নেয়া হয়ে থাকে। ফলে ঠিক পরিচর্যার অভাবে কমবেশি দাঁতের সমস্যা সকলেরই হয়।


দাঁতে ব্যথা হওয়ার বিভিন্ন কারণের মধ্যে অন্যতম হলো দাঁত ক্ষয়। দাঁত না মাজলে বা ফ্রেশনার ব্যবহার না করলেই শুধু দাঁত ক্ষয় হয় না কিছু খাবার আছে যা দাঁতের ক্ষয়ের জন্য দায়ী। আর আমরা প্রায় প্রতিদিনই খাই এই সব খাবার। দাঁতকে সুস্থ রাখতে সে সব খাবার এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেন দাঁত বিশেষজ্ঞরা। জেনে নিন কোন কোন খাবার আপনার দাঁত ক্ষয়ের জন্য দায়ী।


চকলেট


দাঁতের ক্ষয় বাড়িয়ে দেয়ার জন্য চকলেট একাই অনেক। চকলেটের কোকো ও ক্যাফিন দাঁতের এনামেল ক্ষয় করে। তাই চকলেট বেশি খেলে দাঁত ব্যথায় ভুগতে তো হবেই। বাড়িতে ছোট সদস্য থাকলে তার দাঁতের যত্নের ক্ষেত্রেও চকলেট খাওয়ায় প্রবণতা কমাতে হবে। ছোট হোক বা বড় যে কেউই চকলেট খেলে ভাল করে মুখ কুলকুচি করে ধুয়ে ব্রাশ করে নিন।


জাঙ্ক ফুড


এই ধরনের খাবার থেকে দাঁতে এসিড তৈরি হয়। এনামেল সেই অ্যাসিডের প্রভাবে ক্ষয়ে যায় ও দাঁতে ছিদ্র তৈরি হয়। তাই অতিরিক্ত জাঙ্ক ফুড দাঁতের স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকারক। তাই মাত্রাতিরিক্ত জাঙ্ক ফুড এড়িয়ে চলুন।


কফি


ক্যাফিন যেমন দাঁতে ছোপ তৈরি করে, তেমনই এনামেলের ক্ষয় করে। তাই ঘন ঘন কফি খেলে দাঁতের বিশেষ যত্ন নিতেই হবে। তাই প্রয়োজনে এড়িয়ে চলুন মাত্রাতিরিক্ত কফি।


বেশি গরম বা বেশি ঠাণ্ডা


দাঁতের জন্য গরম ও ঠাণ্ডা দুটেই খুব ক্ষতিকর। খুব গরম খাবার বা পানীয়তেও দাঁতে শিরশিরানির সমস্যা বাড়ে। তাই চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে দাঁতের যত্ন নিন। এড়িয়ে চলুন ঘন ঘন খুব গরম চা-কফি বা আইসক্রিম। বরফ দেয়া হয় এমন খাবারও দাঁতের শিরাগুলোকে দুর্বল করে দাঁতকে আলগা করে দেয়। তাই অনেক সময়ে দাঁত পড়েও যায় তাই এড়িয়ে চলুন সে সব।


প্রসেসড বা প্রক্রিয়াজাত খাবার


যে সব খাবারে অতিরিক্ত চিনি ও লবণ আছে, তা যেভাবেই হোক বাদ দিতে হবে। কোমল পানীয়, যেকোনো প্রসেসড ফুড, পিরেজারভেটিভস দেয়া খাবারদাবারে এই অতিরিক্ত চিনি ও লবণ থাকে বলে তারা দাঁতের খুব ক্ষয় করে। ক্যাভিটি তৈরি হওয়ার অন্যতম কারণ এরাই। তাই মাত্রাতিরিক্ত পরিমানে এ সব খাবার খেলে দাঁতের ক্ষয় হবেই।


আমরা যদি দাঁতের সঠিক পরিচর্যা করি তাহলে দাঁতে কোন ধরনের সমস্যা হওয়ার কথা নয়। কিন্ত আমরা অনেকেই সঠিক নিয়য়ে পরিচর্যা না করার কারণে আমাদের মূল্যবান দাঁতগুলো অকালে হারিয়ে ফেলছি। আমরা যদি দিনে দুই বার ব্রাশ করে তাহলে দাঁতে সমস্যা হওয়ার কথা না। কিন্ত বিভিন্ন ধরনের ক্ষয় রোগ দেখা দিতে পারে। বিভিন্ন কারণে দাঁত ক্ষয় হয়। তবে সঠিক সময়ে চিকিৎসা নিলে জটিলতা এড়িয়ে দাঁতকে ভালো রাখা যায়। 

 সাধারণত কী কী কারণে দাঁতের ক্ষয়রোগ হতে পারে ?


 সাধারণত দাঁত পরিচর্যা সঠিক ভাবে না করলে দাঁতে বিভিন্ন ক্ষয় রোগ দেখা দিতে পারে। মজার বিষয় হলো এসব দাঁতে ক্ষয় রোগীরা সঠিক সময়ে ডাক্তারের কাছে আসে ১০ মিনিটে চিকিৎসা দিলে আজীবন এ রোগ ভাল হয়ে যায়। তবে সঠিক সময়ে ডাক্তারের কাছে খুব কম রোগীরা আসে।


 দাঁত ক্ষয়ের কারণ, যেটাকে ‘ডেন্টাল ক্যারিজ বলছেন— এর প্রধান কারণগুলো কী?


 সঠিক ভাবে ব্রাশ না করলে এসমস্যা দেখা দিতে পারে। আরেকটি আমার যে সব খাবার গ্রহণ করি সেই সব খাবারে অনেক সময় দাঁতে লেগে থাকে। এতে কার্বোহাইড্রেট বা সুগার থাকে। যদি খাবার আটকে থাকে এবং একে বের না করা হয় এখানে ব্যাকটেরিয়া আক্রমণ করবে। এমন ভাবে অনেক দিন চলতে থাকলে ডেন্টাল ক্যারিজ দেখা দিতে পারে। সঠিক সময়ে চিকিৎসা না করলে  এখান থেকে নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। তবে সমস্যা দেখার শুরুর দিকে যদি ডাক্তারের কাছে  আসে তাহলে অবশ্যই তাড়াতাড়ি এসব রোগ থেকে মুক্তি মিলবে।


 শুরুতে কী দেখলে বোঝা যাবে দাঁতের ক্ষয় হয়েছে?


ডা: হুমায়ুন কবীর বুলবুল: দাঁত যদি ঠিক মতো পরিচর্যা না করেন। না ঠিক মতো ব্রাশ না করেন তাহলে অনেক সময় আমার দাঁতে খাবার আটকে থাকছে। দাঁত বিভিন্ন রোগ ধারণ করে। এরপর এখানে ব্যাথা শুরু করে। এক সময় দেখা একটা গর্ত রয়ে গেছে। অর্থাৎ ক্যারিজ বা ক্যাভিটি হয়ে গেছে। অনেক সময় দাঁতের মাড়িতে সমস্যা দেখা দেয়। এছাড়া বিভিন্ন রোগের কারণে দাঁতে সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমন ডায়াবেটিস। যার কারণে অল্প রয়সে দাঁত পড়ে যায়।


 শুরু বলতে আপনি কী বোঝাচ্ছেন ?


 প্রাথমিক ভাবে দাঁতে ব্যথা হচ্ছে না, কেবল খাবার আটকে থাকছে- এই সময়ে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত। সে ক্ষেত্রে আমরা একটি ফিলিং করে দেই। মুলত আমার দেশের মানুষ দাঁতে ব্যাথা না দেখা দিলে ডাক্তারের কাছে আসে না। দাঁতে ব্যাথা দেখা দেওয়া মানে দাঁত ইনফেকশন দেখা দেওয়া। ইনফেকশন দেখা দেওয়া মানে দাঁত ক্ষয় হয়ে যাওয়া।  এসব লক্ষণ দেখা দেওয়া মানে দীর্ঘ মেয়াদী চিকিৎসা ছাড়া মুক্তি পাওয়া সম্ভব নয়। আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে চায়। হাসপতালগুলো দাঁত ব্যাথা ছাড়া কোন রোগী আসছে বলে আমার মনে পড়ে না।


 দাঁতের ক্ষয় রোগ যেন না হয়, সে ক্ষেত্রে প্রতিরোধের জন্য কী করণীয়?


 প্রতিরোধের প্রথম কথা হলো সঠিক উপায়ে দাঁত ব্রাশ করতে হবে। নরম টুথব্রাশ নিয়ে, গুণতগত মানের পেস্ট নিয়ে দাঁত ব্রাশ করতে হবে। এক থেকে দুই মিনিট ব্রাশ করতে হবে। সঠিক উপায়ে ব্রাশ করার বিষয়টি জানতে হবে।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.