জাদুকরী মসলা হলুদ

 


ODD বাংলা ডেস্ক: হলুদ বা হলদি গুল্মজাতীয় এক প্রকার উদ্ভিদ। এর বৈজ্ঞানিক নাম [Curcuma longa]। হলুদগাছ সাধারণত ৬০ থেকে ৯০ সেন্টিমিটার উঁচু হয়। এর পাতা বড় এবং আয়তাকার হয়ে থাকে।


গাছের শিকড় থেকে প্রাপ্ত অংশই মসলা বা ঔষধি উপাদান হিসেবে হাজার বছর ধরে বাংলাদেশ, ভারতসহ পৃথিবীর নানা দেশে ব্যবহার করা হয়। হলুদের আদি নিবাস দক্ষিণ এশিয়া। হলুদ চাষের জন্য প্রচুর বৃষ্টিপাতের প্রয়োজন হয়। পাহাড়ি ও উঁচু জমিতে হলুদ চাষ ভালো হয়। বছরে একবার হলুদগাছের শিকড় তোলা হয়। পরের বছর পুরনো শিকড় থেকে জন্ম নেয় নতুন গাছ।  

মসলাজাতীয় ফসলের তালিকায় বেশি ব্যবহারযোগ্য ফসলের মধ্যে হলুদ অন্যতম। কাঁচা হলুদ থেকে শুরু করে গুঁড়া হলুদের ব্যবহার ব্যাপক।


 অসুখবিসুখে


বায়োকেয়ারের সিইও এবং আয়ুর্বেদিক চিকিত্সক শরিফুল ইসলাম জানান, হলুদের তিনটি উল্লেখযোগ্য উপাদান কার্কিউমিন, ডেমথক্সাইকুরকুমিন ও বিসডেমেথক্সাইকুরকুমিন। কার্কিউমিন আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী এক উপাদান। কার্কিউমিন প্রদাহবিরোধী। তাছাড়া এটা অ্যান্টি-টিউমার ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট প্রভাবগুলোর জন্যও সমাদৃত। নিয়মিত হলুদের গুঁড়া খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। শরীরে ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি এবং ছড়িয়ে পড়া রোধে হলুদ সাহায্য করে। বিশেষ করে মুখগহ্বরের ক্যান্সার প্রতিরোধে হলুদ খুবই কার্যকর।


অ্যাজমা ও শ্বাসতন্ত্রের বিভিন্ন সমস্যা থাকলে হলুদে উপশম মিলবে। প্রতিদিন হলুদের গুঁড়া গরম জলের সঙ্গে মিশিয়ে রাতে শোয়ার আগে খেলে শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।


লিভারের ইনফেকশনেও হলুদ উপকারী। প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে এক কাপ গরম জলের সঙ্গে এক চা চামচ হলুদ গুঁড়া মিশিয়ে খেলে উপশম পাওয়া যায়।


নিয়মিত হলুদ সেবন মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়াতে কাজ করে। স্মৃতিশক্তি এবং বুদ্ধি বাড়াতে সাহায্য করে। মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। প্রতিদিন সকালে কাঁচা হলুদের রস ও এক চা চামচ কুসুম গরম জল মিশিয়ে খেলে এই উপকার পাওয়া যাবে। রাতে হলুদের গুঁড়া গরম জলের সঙ্গে মিশিয়ে খেলেও উপকৃত হওয়া যাবে। হলুদ ঔষধিগুণ সমৃদ্ধ একটি প্রাকৃতিক উপাদান। এটির ব্যবহারের নির্দিষ্ট মাত্রা আছে। অতিরিক্ত খেলে পেটের সমস্যা তৈরি হতে পারে। তাই দ্রুত উপকৃত হতে চেয়ে অতিরিক্ত খাওয়া থেকে বিরত থাকাই শ্রেয়।



ত্বকের নিরাময়ে


রেড বিউটি পার্লারের রূপ বিশেষজ্ঞ আফরোজা পারভীন জানান কাঁচা হলুদ ও হলুদ গুঁড়া দিয়ে রূপচর্চার কলাকৌশল। হলুদ সেবনের পাশাপাশি এর প্যাক তৈরি করেও রূপচর্চায় উপকার পাওয়া যায়।


মুখের ত্বকের লাবণ্য বজায় রাখতে মসুর ডাল ও কাঁচা হলুদ বেটে দুধের সর মিশিয়ে মুখে ও হাতে মাখতে হবে। দুই ঘণ্টা পর ধুয়ে ফেলতে হবে। এভাবে এক মাস ব্যবহার করলে পার্থক্যটা আপনাআপনি বোঝা যাবে। যাঁদের মুখে ব্রণ ওঠে তাঁরাও হলুদ ব্যবহার করলে উপকার পাবেন। সকালে খালি পেটে দুই টুকরা কাঁচা হলুদ ও দুটি নিমপাতা একসঙ্গে মিশিয়ে খেলে ব্রণ সেরে যায়। ত্বকের রং উজ্জ্বল হয়।


গায়ের রং উজ্জ্বল করতে চাইলে কাঁচা হলুদ, কমলালেবুর খোসা ও নিমপাতা একসঙ্গে জল দিয়ে বেটে গায়ে মেখে এক ঘণ্টা পর ধুয়ে ফেলতে হবে। ত্বক  উজ্জ্বল হওয়ার পাশাপাশি চর্মরোগ দূর হবে। সপ্তাহে তিন-চার দিন লাগালে ভালো উপকার পাওয়া যাবে। ত্বকের দাগ ওঠাতে কাঁচা হলুদ ও নিমপাতা একত্রে বেটে কয়েক দিন লাগালে দাগ উঠে যাবে।


ভালো ও দ্রুত ফল লাভের আশায় বেশি বেশি হলুদ ব্যবহার করা যাবে না। একাধারে দীর্ঘদিন কাঁচা হলুদ খাওয়া যাবে না। মাঝেমধ্যে বিরতি দিতে হবে। পরিমাণমতো হলুদ খেতে হবে। হলুদের প্যাক বানিয়ে ফ্রিজে রেখে বা সংরক্ষণ করে ব্যবহার না করাই ভালো। দিনের প্যাক দিন ব্যবহার করতে হবে।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.